আন্তর্জাতিক

গাজার খাদ্য-ব্যবস্থাগুলো ধ্বংস করছে ইসরাইল : জাতিসংঘ

ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে বৃহত্তর ‘অনাহার অভিযানের’ অংশ হিসেবে ইসরাইল গাজার খাদ্য-ব্যবস্থা ধ্বংস করছে বলে অভিযোগ করেছেন জাতিসংঘের এক বিশেষজ্ঞ। এ নিয়ে তেমন কিছু না করার জন্য জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থাকে তীব্র ভর্ৎসনা করেন তিনি।

বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলে দেওয়া এক বক্তৃতায় বিশ্ব সংস্থাটির খাদ্য অধিকার বিষয়ক বিশেষ প্রতিবেদক, লেবাননি বংশোদ্ভূত কানাডীয় আইনের অধ্যাপক মাইকেল ফখরি বলেন, গাজায় অনাহারের চিত্রগুলো অসহনীয় অথচ আপনারা কিছুই করছেন না। চারদিক থেকে অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডটিতে পাঁচ মাস ধরে চলা ইসরাইলি হামলায় ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত ও প্রায় ৭০ হাজার ফিলিস্তিনি আহত হয়েছে।

অবিরাম বোমা ও গোলা হামলায় ফিলিস্তিনি ছিটমহলটি প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ত্রাণ কর্মকর্তারা সতর্ক করে বলেন, ইসরাইলের কঠোর অবরোধ ও হামলার কারণে গাজায় দুর্ভিক্ষ আসন্ন। গাজার বাকি অংশ থেকে গাজা সিটিসহ উত্তরাংশ বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে হানাদার ইসরাইলি বাহিনী। উত্তরাংশের হাসপাতালগুলো জানিয়েছে, শিশুরা অপুষ্টিতে ভুগে মারা যাচ্ছে। ফখরি কাউন্সিলকে বলেন, ইসরাইল গাজার খাদ্য-ব্যবস্থাকে ধ্বংস করছে।

গাজার ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ইসরাইল একটি অনাহার অভিযান চাপিয়ে দিয়েছে। গাজার ছোট জেলে সম্প্রদায়কেও লক্ষ্যস্থল করেছে তারা। বিশ্বের সুনির্দিষ্ট ইস্যু ও সংকটগুলো নিয়ে জাতিসংঘকে পরামর্শ ও প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য নিযুক্ত কয়েক ডজন মানবাধিকার বিশেষজ্ঞের একজন ফখরি তার বক্তৃতায় ৪৭ সদস্যের জেনেভা কাউন্সিলে অভিযোগ করে বলেন, ইসরাইল গাজার জেলেদের সাগরে নামতে তো দিচ্ছেই না তাদের নৌকা ও কুটিরগুলোও ধ্বংস করে দিচ্ছে।

তিনি জানান, ৭ অক্টোবর থেকে ইসরাইল হামলা শুরু করার পর থেকে গাজার মৎস্য খাতের প্রায় ৮০ শতাংশ ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরাইলি বাহিনী গাজা সিটির প্রধান বন্দরের প্রত্যেকটি নৌকা ধ্বংস করে দিয়েছে। ফখরি জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের সদস্য দেশগুলোর প্রতি ইসরাইলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা, কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন ও অস্ত্র রপ্তানি বন্ধের বিষয়গুলো বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়ে নিজের বক্তৃতা শেষ করেন। বলেন, ‘এগুলো দেখছেন আপনারা। অনুগ্রহ করে আপনাদের কথাকে পদক্ষেপে পরিণত করুন। গাজায় অনাহার বাড়তে থাকায় মিশর ও ইরাকসহ বেশ কিছু দেশ ইসরাইলের তীব্র সমালোচনা করেছে। অন্যদিকে জাতিসংঘের ইসরাইলি মিশনের আইন উপদেষ্টা ইয়েলা সেট্রিন ফখরির অভিযোগগুলোকে ‘নির্জলা মিথ্যা’ বলে অভিহিত করেছেন।

এদিকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষ্যে গাজায় নারীদের ওপর চলা ভয়াবহ নির্মমতার চিত্র স্মরণ করিয়ে দিয়েছে জাতিসংঘের ফিলিস্তিন বিষয়ক শরণার্থী সংস্থা। এটি সামাজিক যোগাযোগ-মাধ্যমে করা এক পোস্টে জানিয়েছে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর অবরুদ্ধ উপত্যকাটিতে প্রতিদিন ৬৩ জন নারী প্রাণ হারাচ্ছেন। সংস্থাটি জানায়, সেখানে থাকা নারীরা প্রতিদিন যুদ্ধের ভয়াবহ পরিণতি ভোগ করছেন। ইসরাইলের হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৯ হাজার নারী প্রাণ হারিয়েছেন। তাছাড়া ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়েছে আরো বহু। গত ৭ অক্টোবরের পর গাজায় ৩০ হাজার ৮৭৮ ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে ৭২ হাজার ৪০২ জন।

অন্যদিকে অধিকৃত পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপনে ৩ হাজার ৪০০টিরও বেশি নতুন বাড়ি স্থাপনের চূড়ান্ত অনুমতি দিয়েছে দখলদার ইসরাইল। প্রায় ৭০ শতাংশ বাড়ি তৈরি করা হবে জেরুজালেমের পূর্বে মা’লে আদুমিমে। বাকিগুলো বেথলেহেমের দক্ষিণে কাছাকাছি কেদার ও এফরাতে। নাম না প্রকাশের শর্তে ইসরাইলের এক মন্ত্রী এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ঐ মন্ত্রী বলেছেন, দুই সপ্তাহ আগে মালে আদুমিমের কাছে ফিলিস্তিনের হামলার জবাবে এ নির্মাণকাজ শুরু করা হবে। এদিকে, দলখদার রাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তের চরম নিন্দা জানিয়েছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বেশির ভাগ অংশই ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরাইলি বসতি স্থাপনের বিষয়টির বিরোধিতা করে আসছে। কিন্তু ইসরাইল কারো আপত্তি না মেনে বসতি স্থাপন করেই চলেছে।