রকমারী

সবর মুমিনের সফলতার মূলমন্ত্র

দুনিয়ার জীবনটা রেললাইনের মতো সমান্তরাল নয়, একদম নির্মল আর নির্ঝঞ্জাটও নয়। এতে দুঃখ দুর্দশা আসবেই, ঝড়-ঝাপটার সম্মুখীন হতে হবেই। কারণ দুনিয়া পরিক্ষার হল। তাই আমাদের পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে জীবনের নানা ক্ষেত্রে, নানাভাবে। সেই পরীক্ষায় সফল হওয়ার মূলমন্ত্রও ঘোষিত হয়েছে পাক কুরআনে। এরশাদ হয়েছে, ‘ আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব (কখনও) ভয়-ভীতি, (কখনও) ক্ষুধা দ্বারা এবং (কখনও) জানমাল ও ফলফসলের ক্ষয়-ক্ষতি দ্বারা, আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও। (সূরা বাকারা : ১৫৫)। অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে, হে মুমিনগণ! তোমরা সবর ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য চাও, নিশ্চয় আল্লাহ সবরকারীদের সঙ্গে রয়েছেন। (সূরা বাকারা : ১৫৩)।

দুনিয়ার জীবনটা রেললাইনের মতো সমান্তরাল নয়, একদম নির্মল আর নির্ঝঞ্জাটও নয়। এতে দুঃখ দুর্দশা আসবেই, ঝড়-ঝাপটার সম্মুখীন হতে হবেই। কারণ দুনিয়া পরিক্ষার হল। তাই আমাদের পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে জীবনের নানা ক্ষেত্রে, নানাভাবে। সেই পরীক্ষায় সফল হওয়ার মূলমন্ত্রও ঘোষিত হয়েছে পাক কুরআনে। এরশাদ হয়েছে, ‘ আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব (কখনও) ভয়-ভীতি, (কখনও) ক্ষুধা দ্বারা এবং (কখনও) জানমাল ও ফলফসলের ক্ষয়-ক্ষতি দ্বারা, আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও। (সূরা বাকারা : ১৫৫)। অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে, হে মুমিনগণ! তোমরা সবর ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য চাও, নিশ্চয় আল্লাহ সবরকারীদের সঙ্গে রয়েছেন। (সূরা বাকারা : ১৫৩)।

ইসলামের শিক্ষা : ইসলামের শিক্ষা হলো, দুঃখের পরই সুখপাখি ধরা দেবে, দুর্দিন পেরিয়ে সুদিনের হাতছানি আসবে, এ বিষয়ে কোরআন মাজীদে মানুষকে প্রচুর দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে । বারবার সবরের কথা, ভেঙে না পড়ার কথা বলা হয়েছে। আশার বাণী শোনানো হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, অবশ্যই কষ্টের সাথেই রয়েছে স্বস্তি। (সুরা ইনশিরাহ : ৬)। অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহর রহমত থেকে কাফের সম্প্রদায় ব্যতীত অন্য কেউ নিরাশ হয় না।’ (সুরা ইউসুফ : ৮৭)। আসমান-জমিনের চাবিকাঠি যার হাতে, সেই সত্তার পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতি হচ্ছে, প্রত্যেক কষ্টের পরই স্বস্তি ও উত্তরণ রয়েছে এবং যেকোনো বিপদ বাদেই স্বাচ্ছন্দ্য ও সুখ রয়েছে। তাহলে একজন মুমিন যে রবে বিশ্বাস করে, জান্নাত, জাহান্নাম আছে বলে স্বীকার করে, সে কী সামান্য বিপদে কিংবা দুর্ভোগ- দুর্যোগের সম্মুখীন হলে ভেঙে পড়তে পারে! আদৌ না। সে তো বিপদাপদে ধৈর্যের পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে রবের সুসংবাদ প্রাপ্ত হবে এবং চিরস্থায়ী জান্নাতের অধিবাসী হওয়ার স্বপ্নে দেখবে। ভুলে গেলে চলবে না, আমাদের প্রিয় নবীজিও বিপদের সম্মুখীন হয়েছেন, কাফেরদের কটু কথা আর কটুবাক্যে তার মনেও কষ্টের মেঘ জমেছে। তার হৃদয়ও ভারী হয়ে ওঠেছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আমি তো জানি, তারা যা বলে, তাতে আপনার মন ক্ষতবিক্ষত হয়…। (সূরা হিজর : ৯৭)। কিন্তু তিনি তাদের কটুকথায় দমে যাননি। মানবতার মুক্তির মিশন থেকে পিছিয়ে পড়েননি। বরং ধৈর্য ধারণ করেছেন, তাদের শত নির্যাতন আর নিপীড়ন উপেক্ষা করে স্বীয় মিশনে অকুতোভয়ে এগিয়ে গেছেন এবং শেষ পর্যন্ত সফলও হয়েছেন।

বস্তুত: একজন আল্লাহভীরু মানুষ যখন বিপদের সম্মুখীন হন তখন তিনি তিনি ধৈর্য ধারণ করেন এবং আল্লাহর তায়ালার দরবারে সাহায্যপ্রার্থীর হাত তুলে ধরেন ও অনুতপ্ত হন। অনুশোচনা ও অন্তরশুদ্ধির চেষ্টায় নিয়োজিত হন । আর যারা তাকওয়াহীন জীবন ও মন লালন করেন, জীবনের শেষ গন্তব্য ও পরিণতি সম্পর্কে বেখবর থাকেন তারা ধৈর্য হারিয়ে ফেলেন। অভিযোগ-অনুযোগের তুফান ছুটিয়ে দেন। অন্য কাউকে না ধরে বিপদ ও সংকট ‘তার মতো নিদোর্ষ’ মানুষকে কেন ধরল এনিয়ে অন্তহীন জিজ্ঞাসা ও আফসোস করতে থাকেন। ফলে অস্থিরতা বাড়তে থাকে আর অভিযোগ অনুযোগ করতে করতে অনেক সময় আত্মহত্যার সিদ্ধান্তও নিয়ে ফেলে।

অতএব দুনিয়ার জীবনে কোনো পরিক্ষার সম্মুখীন হলে-সেটা যেমনই হোক, আল্লাহ পাকের ফয়সালা মনে করে তা মেনে নেয়া, মনে কোনোরূপ মন্দ ধারণা পোষণ না করা আর সবরের সঙ্গে বিপদমুক্তির জন্যে আল্লাহ পাকের শরণাপন্ন হওয়া- এটাই একজন মুমিনের ঈমানী দায়িত্ব। আর সেটাকে উপদেশদাতা ও সতর্ককারীরূপে গ্রহণ করে অনুতাপ ও প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হওয়ার মধ্যেই মুমিনের কামিয়াবী নিহিত। রাসূল সা. বলেন, সত্যি, বড় পুরস্কার তো বড় বিপদের সঙ্গেই রয়েছে। আর আল্লাহ যখন কোনো সম্প্রদায়কে ভালোবাসেন তখন অবশ্যই তাদের পরীক্ষায় ফেলেন। তখন যে সন্তুষ্ট থাকে তার জন্যেই তাঁর সন্তুষ্টি, আর যে অসন্তুষ্ট হয়ে পড়ে তার প্রতি তাঁরও অসন্তুষ্টি। (জামে তিরমিযী : ২৩৯৬)।