জাতীয়

বিশ্বের জন্য আদর্শ উদাহরণ জাপান আমাদের পরীক্ষিত বন্ধু- অর্থমন্ত্রী

জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) বাংলাদেশের সাথে নিজেদের অংশীদারিত্বের ৫০ বছর পূর্তির মাইলফলককে স্মরণীয় করে রাখতে গত সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও ঢাকায় এক উদযাপনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। জাইকার এ অংশীদারিত্বের যাত্রায় শক্তিশালী দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক, গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প ও বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখার ক্ষেত্রে অব্যাহত প্রতিশ্রুতির বিষয়গুলো উঠে আসে।

বাংলাদেশের বৃহত্তম দ্বিপক্ষীয় উন্নয়ন অংশীদার জাপান। জাইকার মাধ্যমে গত পাঁচ দশকে এই অংশীদারিত্ব আরও বিকশিত ও শক্তিশালী হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশের উন্নয়নের চিত্রকে বাস্তবে রূপদান করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

এ উপলক্ষে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি। এছাড়া, আয়োজনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাইকা সদরদপ্তরের সাউথ এশিয়া ডিপার্টমেন্টের ডিরেক্টর জেনারেল ইতো তেরুয়ুকি ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সিনিয়র সচিব শরিফা খান। এসময় জাইকা’র অন্যান্য অতিথিদের পাশাপাশি, উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির চিফ রিপ্রেজেন্টেটিভ ইচিগুচি তোমোহিদে। এছাড়া, অনুষ্ঠানে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, বিভিন্ন সংস্থার প্রধান ও উন্নয়ন সহযোগীরা উপস্থিত ছিলেন।

এখন পর্যন্ত অফিসিয়াল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসিসটেন্স (ওডিএ) লোন হিসেবে ৩ হাজার ২৮৫ বিলিয়ন জাপানি ইয়েন (প্রায় ২২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার), ২০২২ সাল পর্যন্ত অনুদান সহায়তা (গ্র্যান্ট এইড) হিসেবে ১৪৪ বিলিয়ন জাপানি ইয়েন (প্রায় ৯৬৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার), ২০২২ সাল পর্যন্ত টেকনিক্যাল কোঅপারেশনের জন্য ১০৪ বিলিয়ন জাপানি ইয়েন (প্রায় ৬৯৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) এবং লোন ও ইক্যুইটি হিসেবে এখন পর্যন্ত প্রাইভেট সেক্টর ইনভেস্টমেন্ট ফাইন্যান্সের জন্য ২৫ বিলিয়ন জাপানি ইয়েন (প্রায় ১৬৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) প্রদান করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি ১৪ হাজারেরও বেশি সরকারি কর্মীর প্রশিক্ষণ ও শিক্ষার ব্যবস্থা করেছে এবং ১ হাজার ২৮৬ জন জাপানিজ ওভারসিজ কোঅপারেশন ভলান্টিয়ার্সকে দেশে নিযুক্ত করেছে।

এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, আমাদের দেশ সহ সারা বিশ্বের জন্য আদর্শ উদাহরণ জাপান। জাইকা ও জাপানের সহযোগিতায় আমাদের কমিউনিটির বিকাশ ও উন্নয়ন সাধিত হবে। জাপান আমাদের পরীক্ষিত বন্ধু; এই অংশীদারিত্ব আমাদের দেশের লক্ষ্যপূরণে সহায়তা করবে বলে আশাবাদী আমরা।

বাংলাদেশ ও জাপানের অসামান্য বন্ধুত্বের ওপর গুরুত্বারোপ করে জাইকা’র চিফ রিপ্রেজেন্টেটিভ ইচিগুচি তোমোহিদে বলেন, ৫০ বছরের এই যাত্রার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধু হিসেবে টেকনিক্যাল কোঅপারেশন, রেয়াতি ঋণ (কনসেশনাল লোন), অনুদান সহায়তা (গ্র্যান্ট এইড), স্বেচ্ছাসেবী ও বিভিন্ন পদ্ধতিতে বহু খাতে সহযোগিতা করেছে জাইকা। সবসময় সরকারি কর্মকর্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন, জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন, বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো এবং বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যকার শক্তিশালী বন্ধুত্ব গড়ে তোলাই ছিল জাইকার লক্ষ্য।

দেশে জাইকা’র সহযোগিতায় সম্পন্ন হওয়া গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলোর ওপর আলোকপাত করে জাইকা সদরদফতরের সাউথ এশিয়া ডিভিশনের ডিরেক্টর জেনারেল ইতো তেরুয়ুকি বলেন, জাইকা সর্বমোট ৩ ট্রিলিয়ন জাপানি ইয়েনেরও বেশি সহযোগিতা প্রদান করেছে, যার অর্থমূল্য প্রায় ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি। বাংলাদেশ এখন সারা বিশ্বে আমাদের শীর্ষ তিন ঋণগ্রহীতা দেশের একটি।

এ বিষয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সিনিয়র সচিব শরিফা খান বলেন, গত ৫০ বছরের মধ্যে জাপানের সহযোগিতা বাংলাদেশের সর্বত্র পৌঁছে গেছে। দেশের ১৫টি খাতের সবগুলোতে জাপানের অংশগ্রহণ রয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের বৃহত্তম দ্বিপক্ষীয় উন্নয়ন সহযোগী জাপান। দেশের উন্নয়নে নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করার ক্ষেত্রে জাইকা অত্যন্ত ইতিবাচক ও সহযোগিতা-পরায়ণ। তাই, গত ৫০ বছরে সব ধরনের সহযোগিতার জন্য জাপান সরকারের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।

বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদী ইতিবাচক প্রভাব তৈরি করেছে এমন উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে- মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর সহ মহেশখালী-মাতারবাড়ি ইন্টেগ্রেটেড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ, তিনটি ঢাকা মেট্রো লাইনের জন্য ঢাকা মাস র‍্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্প, ২য় কাঁচপুর, মেঘনা ও গোমতী সেতু নির্মাণ প্রকল্প, আড়াইহাজারে বাংলাদেশ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য প্রকল্প এবং ব্রিজেস রিহ্যাবিলিটেশন অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন প্রজেক্টস। জাইকা’র ৫০ বছরের এই সহযোগিতার মধ্যে আরও রয়েছে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও গ্রামীণ উন্নয়ন, সুশাসনের বিকাশ, বেসরকারি খাতের উন্নয়ন, দুর্যোগ ঝুঁকি প্রশমন, পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশন, কঠিন (সলিড) বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি।

বাংলাদেশে জাইকা’র ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন কেবলমাত্র অতীতের স্মৃতিচারণ নয়; বরং, বাংলাদেশের মানুষের সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ নিশ্চিতে প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করার অংশ। এটি দীর্ঘ প্রতিকূলতার মধ্যেও টিকে থাকা অংশীদারিত্বের শক্তি এবং আগামীর দিনগুলোতে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার প্রতিশ্রুতিকে তুলে ধরে।