বড়বাড়ী হাটে সুপারি বেচা কেনায় ব্যবসায়ীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন
লালমনিরহিট জেলা প্রতিনিধি : জেলার বড়বাড়ী হাটজুড়ে সুপারির হলুদ ঝলক ।এখানে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সুপারি ব্যবসায়ীরা বেচাকেনায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। এ জেলায় সুপারি একটি লাভজনক অর্থকরী ফসল হিসেবে পরিচিত। প্রতি বছর মৌসুম এলেই লাখ লাখ টাকার সুপারি উৎপাদিত হয় । তবে এবার ফলন কিছুটা কম হলেও বাজারে রয়েছে দামের ঊর্ধ্বগতি। ফলে খুশি বিক্রেতা ও ব্যবসায়ীরা।
জেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন পর্যায়ে গড়ে উঠেছে সুপারির হাট। এসব হাট থেকে সুপারি সরবরাহ করা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পাইকারি বাজারে।
বুধবার সকালে সরেজমিনে বড়বাড়ী হাট ঘুরে দেখা যায়, হাটজুড়ে সুপারির হলুদ ঝলক। সকাল থেকেই ভ্যান, পিকআপ ও বস্তাভর্তি সুপারি নিয়ে হাজির হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। চলছে দামাদামি, জমজমাট কেনাবেচা। স্থানীয় শ্রমিকরা সুপারি বাছাই, গণনা এবং পুনরায় বস্তাবন্দির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
সুপারি বিক্রি করতে আসা স্থানীয় কৃষক মাইদুল ও নাজমুল জানান, “এবার ফলন তুলনামূলক কম হলেও বাজারে দাম ভালো পাচ্ছি। এখন প্রতিপোন (৮০টি) সুপারি ২৫০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। গত বছরের তুলনায় দাম এবার বেশ ভালো।”
স্থানীয় ব্যবসায়ী হায়দার আলী ও মোস্তফা মিয়া বলেন, “বড়বাড়ীর হাট সুপারির জন্য অঞ্চলজুড়ে বিখ্যাত। শুধু লালমনিরহাট নয়, পাশের কুড়িগ্রাম জেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকেও সুপারি আসে এখানে। প্রতি হাটে লক্ষ লক্ষ টাকার বেশি লেনদেন হয়।”
তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, এবার বড় আকারের সুপারির প্রতিপোন বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা দামে। আবার কাউন প্রতি বিক্রি হচ্ছে (১৬ পোন) ৪,৫০০ থেকে ৮,০০০ টাকারও বেশি।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এসব সুপারি সরবরাহ করা হচ্ছে রংপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া, খুলনা ও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়। চাহিদা ভালো থাকায় সন্তোষজনক দাম পাচ্ছেন বিক্রেতারাও।
ব্যবসায়ী আব্দুল হাকিম বলেন, “গত বছর ফলন বেশি থাকায় দাম কম ছিল, এবার ফলন কম হলেও দাম বেশি। গত বছর এক কাউন সুপারি বিক্রি হয়েছে ২,০০০ থেকে ৪,৫০০ টাকায়। এবার একই সুপারি বিক্রি করছি ৩,৫০০ থেকে ৮,০০০ হাজার টাকার বেশি। ফলে এবার লাভের সম্ভাবনাও বেশি।”
বড়বাড়ী হাটের ইজারাদার জামাল হোসেন জানান, “এ হাটে খাজনা তুলনামূলকভাবে কম, ফলে আমদানি বেশি। এছাড়া চলতি মৌসুমে সুপারির দামও ভালো, যার কারনে বিক্রেতারাও খুশি।”
জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে জেলায় প্রায় ৫০০ হেক্টরের বেশি জমিতে সুপারির চাষ হচ্ছে। এখানকার মাটি ও জলবায়ু সুপারি চাষের জন্য অনুকূল। প্রায় প্রতিটি বাড়ির আঙিনা, রাস্তার পাশে, পুকুরপাড়, খালপাড় বা ঝোপঝাড়ে সুপারি গাছ চোখে পড়ে। অনেকেই আবার বাড়ির আশপাশে লাগানো সুপারির গাছ থেকে সুপারি সংগ্রহ করে বিক্রি করে থাকেন।
সব স্থানের সুপারির গাছ গুলোকে একত্রে করলে আরো অনেক বেশি সুপারির চাষ হচ্ছে এ জেলায়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মো. সাইখুল আরিফিন বলেন, “এ বছর ফলন কিছুটা কম হলেও দাম ভালো থাকায় কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। সুপারির উৎপাদন বাড়াতে আমরা ভালো মানের চারা রোপণ, দূরত্ব বজায় রেখে গাছ লাগানো এবং নিয়মিত পরিচর্যার পরামর্শ দিচ্ছি।”