আগামী ঈদ রোহিঙ্গারা নিজ দেশে করবে, প্রত্যাশা প্রধান উপদেষ্টার
ডেস্ক রিপোর্ট : দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া আবার শুরু হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করার পর প্রধান উপদেষ্টা রোহিঙ্গা নাগরিকদের বলেছেন, এই ঈদে না হোক, তবে আগামী রোজার ঈদ যেন আপনারা নিজ মাতৃভূমিতে স্বজনদের সঙ্গে উদযাপন করতে পারেন, সে লক্ষ্যে আমরা সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
শুক্রবার (১৪ মার্চ) সন্ধ্যায় কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আয়োজিত বিশেষ ইফতার মাহফিলে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধান উপদেষ্টা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে সহজে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় বক্তব্য দেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, জাতিসংঘের মহাসচিব তার শত ব্যস্ততার মাঝেও আপনাদের সঙ্গে ইফতার করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন, যা আমাদের জন্য সত্যিই সৌভাগ্যের বিষয়। আজ তিনি আপনাদের সঙ্গে ইফতার করছেন, এটি তার আপনাদের প্রতি আন্তরিকতা ও সহমর্মিতার প্রতীক। রোহিঙ্গাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে জাতিসংঘের মহাসচিবকে যে অনুরোধ জানিয়েছেন, আমরা তা গুরুত্বের সঙ্গে তার কাছে উপস্থাপন করছি। আপনাদের যত দ্রুত সম্ভব নিজ দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করা যায়, আমরা নিরলসভাবে সেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আপনাদের সমস্যাকে গুরুত্ব দিয়ে এত দুনিয়ায় ঝামেলা, কোথাও কোথাও যুদ্ধ চলছে, এত কিছুর পরও জাতিসংঘ মহাসচিব এখানে এসেছেন আপনাদের কথা শুনতে। শুধু আপনাদের সঙ্গে ইফতার করবে বলে এত দূর থেকে এসেছেন তিনি, যেন এটার সমাধান হতে পারে। এজন্য আমরা সবাই তাকে ধন্যবাদ জানাই।
রোহিঙ্গাদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরাতে সারা দুনিয়ার সঙ্গে প্রয়োজনে লড়াই করতে হবে। ঈদে মানুষ আত্মীয়-স্বজনের কবর জিয়ারত করে। রোহিঙ্গাদের সেই সুযোগও নেই।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ইফতারের আগে রোহিঙ্গাদের উদ্দেশে বলেন, এবারের সফরে আমি দুটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা পেয়েছি। প্রথমত, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যেতে চায়। তাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে, যাতে মিয়ানমারে শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয় এবং তাদের অধিকার সুরক্ষিত থাকে। অতীতে যে নির্যাতন ও বৈষম্যের শিকার তারা হয়েছে, তা দূর করে তাদের মর্যাদা নিশ্চিত করা জরুরি। জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, দ্বিতীয়ত, রোহিঙ্গারা ক্যাম্পে আরও ভালো জীবনযাত্রার সুযোগ চায়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশ রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা তাদের খাদ্য নিরাপত্তাকে চরম ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, এই সংকট মোকাবিলায় আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।
এর আগে বিকেলে উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পৌঁছান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। সেখানে তারা এক লাখ রোহিঙ্গা নাগরিকের সঙ্গে ইফতারে অংশ নেন।