রংপুরে আমের মুকুলে কৃষকের সোনালি স্বপ্ন
নগর প্রতিবেদক : আমের চলতি বছর দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো রংপুরের গাছে গাছে ফুটেছে আমের মুকুল। ঋতুরাজ বসন্ত বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে সেই মুকুলের মিষ্টি ঘ্রাণ। সেই ঘ্রাণে আম চাষিদের মনও চাঙা হয়ে উঠছে। একদিনের বৃষ্টি সেই মুকুলকে আরো বেশি পোক্ত করেছে। তাই গাছের ডালে ডালে ভরা আমের মুকুলে স্বপ্ন বুনছেন রংপুরের আম চাষিরা। কেননা গত কয়েক বছরে আম চাষে বদলে গেছে রংপুরের চাষিদের জীবনমান। সবমিলিয়ে আমের মুকুলে যেন কৃষকের সোনালি স্বপ্ন নাড়া দিচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, রংপুর সূত্রে জানা যায়, রংপুর অঞ্চলে সবধরনের আম চাষ হলেও গত কয়েক বছরে হাড়িভাঙ্গা আম এই অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে সুনাম অর্জন করেছে। বদলে দিয়েছে মানুষের অর্থনৈতিক জীবনমান। ইতোমধ্যেই এই হাঁড়িভাঙ্গা আম জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। এজন্য দেশে-বিদেশে এই আমের চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে কয়েক বছর থেকে। এবারে রংপুর অঞ্চলের ৫ জেলায় প্রায় ৬ হাজার ৩শ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯২ হাজার ৮৩৫ মেট্রিক টন। শুধু রংপুর জেলায় এবারে ৩ হাজার ৩৪৫ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। এর মধ্যে হাড়িভাঙ্গা আম ১ হাজার ৯শ ১০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। সবমিলিয়ে এবারে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৫ হাজার ৮শ ৬৫ মেট্রিক টন আম।
সরেজমিনে দেখা যায়, রংপুর সদরের পালিচড়া, শ্যামপুর, লাহেড়ীরহাট, মিঠাপুকুরের গোপালপুর, পদাগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় গাছে গাছে ফুটেছে মুকুল, যা ছড়াচ্ছে মুগ্ধতা। মৌসুমের শুরুতেই কুয়াশা থাকলেও এখন প্রকৃতিও বেশ অনুকূল। মাঝে একদিনের বৃষ্টি আমের মুকুলকে আরো বেশি পোক্ত করেছে। যার কারণে ডালে ডালে ভরা আমের মুকুলে ভালো ফলনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। আমের বাগানখ্যাত এলাকায় চাষিরা স্প্রে, গাছের গোড়ায় পানি দেওয়া, পানি ছিটানোসহ মুকুল আটকাতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের যত্ন নিতে শুরু করেছেন। ব্যবসায়ীদের আনাগোনাও বেড়ে গেছে। আম চাষিরা তাদের সোনালি স্বপ্নের কথা ভেবে আম বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।
বদরগঞ্জ উপজেলার লোহানীপাড়ার আম চাষি মনিরুল ইসলাম জানান, এবারে বাগানে পর্যাপ্ত মুকুল এসেছে। যদি কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হয়, তাহলে ভালো আম পাওয়া যাবে। পদাগঞ্জ এলাকার চাষি নুর হোসেন বলেন, গাছে আমের মুকুল এবার ভালোই আছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বাম্পার ফলন পাওয়া যাবে।
রাণীপুকুর এলাকার রবিউল ইসলাম বলেন, এবার আমের ভালো মুকুল এসেছে। গত বছরের তুলনায় বেশি। প্রকৃতি সমস্যা না থাকলে এবং সঠিক পরিচর্যা করলে ভালো ফলন হবে। আশা করছি আবহাওয়া পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে লাভ হবে।
আম চাষিরা বলছেন, হাড়িভাঙ্গা আমের একটি রীতি বা নিয়ম আছে। যে বছর বেশি ফলন হয়, পরের বছর কম হয়, এটাই স্বাভাবিক। দাম কম পাওয়ায় প্রতি বছরই ব্যবসায়ীদের কাছে আমের বাগান আগাম বিক্রি করতে হয় বলে জানান তারা। তবে সরকারি সুযোগ সুবিধা ও হিমাগারের ব্যবস্থা হলে তারা আম বিক্রি করে লাভবান হবেন।
এদিকে মিঠাপুকুরের খোড়াগাছ, পদাগঞ্জ, রানীপুকুরসহ কয়েকটি এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন চাষি অভিযোগ করে বলেন, আমচাষিদের সঠিক পরামর্শ দেওয়ার মতো মনোভাব কৃষি বিভাগের নেই এবং সব ধরনের প্রণোদনা থেকে বঞ্চিত তারা। সরকারি প্রণোদনা গুলোর সঠিক বন্টন হলে আমচাষিরা আরও উপকৃত হতো এবং নতুন নতুন চাষি বাড়তো।
রংপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. রিয়াজ উদ্দিন ঢাকামেইলকে বলেন, হাঁড়িভাঙ্গা আম জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। এজন্য দেশে-বিদেশে এই আমের ব্যাপক চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে। রংপুর জেলার ৮ উপজেলায় এবারে আম আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ৩ হাজার ৩৪৫ হেক্টর জমি, এর মধ্যে হাড়িভাঙ্গা আম ১ হাজার ৯১০ হেক্টর জমিতে চাষ হচ্ছে। এ বছর আবহাওয়া পরিষ্কার, বৃষ্টি-কুয়াশা নেই, ঝড়-বাতাস নেই। সেই হিসেবে কৃষি বিভাগ আশা রাখছে, চাষিরা যদি ভালো করে পরিচর্যা করেন, তাহলে মুকুল পরবর্তী ফলন আশানুরুপ হবে। আমের এলাকা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে চাষিদের নানা পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।