ঘাঘট নদীর ৮ স্থানে নৌকা ও সাঁকো, লাখো মানুষের দুর্ভোগ
জেলা প্রতিনিধি, গাইবান্ধা : গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলা দিয়ে বয়ে গেছে ঘাঘট নদী। এই নদীর ২০ কিলোমিটারের মধ্যে আট স্থানে রয়েছে ডিঙি নৌকা ও বাঁশ-কাঠের সাঁকো। এসব স্থানগুলো দিয়ে প্রতিদিন লক্ষাধিক মানুষের পারাপার। নদীর বুকে দাঁড়িয়ে থাকা নড়বড়ে সাঁকোতে চলাচলে জীবনের ঝুঁকিসহ নানা দুর্ভোগে পড়ছেন পথচারীরা।
সম্প্রতি সাদুল্লাপুর উপজেলার ঘাঘট নদীর বেশ কিছু জায়াগায় দেখা গেছে ভোগান্তির দৃশ্য। বিশেষ করে নলডাঙ্গার শ্রীরামপুরের কাটানদীর মুখঘাট, রসুলপুরের মহিশবান্দী দ্বীপচর, বনগ্রামের টুনিচর ঘাট, চৌকিদারের খেয়াঘাট, দামোদরপুরে সিটজামুডাঙ্গার কর্নের খেয়াঘাট, চকশালাইপুর-ভাঙ্গামোড়ের মাঠেরঘাট ও চান্দের বাজার এলাকার ইব্রা মন্ডলের ঘাট দিয়ে চলতে গিয়ে লাখো মানুষ দুর্ভোগে পড়ছে।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, যখন সংসদ নির্বাচন কিংবা স্থানীয় সরকার নির্বাচন শুরু হয়, তখন নদীপারে বৃদ্ধি পায় নেতা-কর্মীদের আনাগোনা। নির্বাচনী প্রার্থীরা অবিরাম ছুটে চলেন ঘাঘট তীরের মানুষের দুয়ারে দুয়ারে। এসময় সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন তারা। তবে কথা রাখেনি কেউ। ফলে জীবনের ঝুঁকিতে নৌকা ও সাঁকো দিয়েই চলাচল করছে শতাধিক গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ। শুধু সাধারণ মানুষই নয়, স্কুলকলেজ শিক্ষার্থীদেরও একমাত্র ভরসা নৌকা ও সাঁকো। বর্তমানে ভাঙাচুরা এসব নৌকা-সাঁকো দিয়ে চলতে গিয়ে হরহামেশা ঘটছে দুর্ঘটনা। এতে করে প্রাণহানির আশঙ্কা করছে ভুক্তভোগীরা। এসব স্থানে সেতু নির্মাণের দাবি জানান স্থানীয়রা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চলাচলের জনগুরুত্বপূর্ণ ঘাঘট নদীর আট স্থানে বর্ষা মৌসুমে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে ডিঙি নৌকায় এপার-ওপার যেতে হয়। এসময় নৌকাডুবির ঘটনাসহ মানুষ নানা দুর্ভোগের শিকার হয়। এরপর শুকনো মৌসুমে স্থানীয়দের আর্থিক ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় কাঠ বাঁশের সাঁকো। এটিও প্রত্যেক বছরে পুনঃসংস্কার করতে হয়। সেখানে মেলে না সরকারি বরাদ্দ। মাঝে মধ্যে কোন জনপ্রতিনিধিরা কিছু টাকা দিয়ে সহযোগিতা করেন। সেটি চাহিদার চেয়ে অপ্রতুল। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে নড়বড়ে ওইসব কাঠের সাঁকো দিয়ে প্রতিদিন স্কুল- কলেজ শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পেশা-শ্রেণির লাখ-লাখ মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হয়ে থাকেন। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় তাদের। ওইসব ঘাট দিয়ে ভালো প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা লাভের আশায় আলোকিত হওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রী থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা পথচারীরা নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হয়ে থাকেন। আর পরিবার পরিজনেরা থাকেন উদ্বিগ্ন ও উৎকণ্ঠার মধ্যে। বর্ষা মৌসুম এলেই নদীর কানায় কানায় পানি ভরে গেলে বেড়ে যায় আরও দুর্গতি। এছাড়াও হঠাৎ কোনো রোগী অসুস্থ হয়ে পড়লে তার জীবন নির্ভর করে সময়ের উপর। একটু দেরি হলেই রোগীর জীবন অসহ্য যন্ত্রণাসহ ওখানেই মৃত্যুর প্রহর গুনতে হয় ঘাঘট নদীর ঘাটে।
ঘাঘট তীরের বাসিন্দা নবির উদ্দিন ব্যাপারী বলেন, বর্তমান সময়ে দেশে ব্যাপক উন্নয়ন ঘটলেও আজও উন্নয়নে পরিবর্তন হয়নি ঘাঘটের ওইসব ঘাটে। স্বাধীনের ৫৪ বছর পেরিয়ে গেলেও কোনো সরকারের আমলেই নজরে আসেনি ব্রিজ নির্মাণে।
নুরুল আসলাম নামের এক শিক্ষক বলেন, ঘাঘটের বেশ কয়েকস্থানে সেতু নির্মাণ সময়ের দাবি। এটি বাস্তবায়ন হলে লেখাপড়া, ব্যবসা বাণিজ্যসহ কৃষি ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রসার ঘটবে। সেইসঙ্গে এলাকার মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন হবে।
এ বিষয়ে সাদুল্লাপুর উপজেলা প্রকৌশলী মো. মেনাজ বলেন, ঘাঘটের ওপর একাধিক স্থানে ব্রিজ নির্মাণের প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। এরমধ্যে চান্দের বাজার ইব্রা মণ্ডলের ঘাটে ব্রিজ নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।