জীবন ও জীবিকাদেশের-খবররংপুর বিভাগ

রংপুরের নলেয়া খাল পুনঃখননে ৬৮০০ হেক্টর জমি জলাবদ্ধতা মুক্ত

ডেস্ক রিপোর্ট :
বিলুপ্ত নলেয়া খাল পুনঃখননের ফলে রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার ৬ হাজার ৮০০ হেক্টর জমি জলাবদ্ধতা মুক্ত হয়েছে। ফলে চার দশক পরে ৩ হাজার ৭০০ কৃষক প্রতিবছর ১০৯ কোটি টাকা মূল্যের অতিরিক্ত ৫৪ হাজার টন আমন ধান উৎপাদন করতে সক্ষম হচ্ছেন।

খালের পুনঃখননকৃত ১৯ দশমিক ২৬ কি.মি. অংশটি বৃষ্টি ও বন্যার পানি দ্রুত নিষ্কাশনের সুবিধা সৃষ্টি করে বিস্তীর্ণ ভূমি এলাকাকে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্ত করেছে। ফলে জলাবদ্ধতা মুক্ত জমিতে আমন ধানসহ তিনটি ফসল চাষের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এতে করে হাজার-হাজার মানুষ উপকৃত হচ্ছে।

এর আগে পীরগঞ্জ উপজেলার শানেরহাট, পাঁচগাছী ও মিঠিপুর ইউনিয়নের অন্তত ৩০টি গ্রামের কৃষকরা ছয়টি বিলের বৃষ্টির পানি ও বন্যার পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় সারাবছর তাদের জলাবদ্ধ জমিতে কোনো ধান চাষ করতে পারেননি।

বাসসের সঙ্গে আলাপকালে স্থানীয় কৃষক এবং সাধারণ লোকেরা জানান, খালটি পুনঃখননের ফলে তাদের জলাবদ্ধ জমি চার দশক পর জলাবদ্ধতা মুক্ত হয়ে আমন ধান ও অন্যান্য ফসল চাষের উপযোগী হয়ে তাদের ভাগ্য পরিবর্তনে আশীর্বাদ বয়ে এনেছে।

বৃহত্তর রংপুর জেলার ৩৫টি উপজেলায় কৃষির উন্নয়ন ও আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি ত্বরান্বিত করতে ভূ-পৃষ্ঠস্থ পানির সর্বোত্তম ব্যবহার সংরক্ষণ ও নিশ্চিত করার জন্য একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে এসবই সম্ভব হয়েছে।

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) ২৮৮ দশমিক ১১ কোটি টাকায় পাঁচবছর (২০১৯-২০২৫) মেয়াদি ‘ভূ-উপরিস্থ পানির সর্বোত্তম ব্যবহার ও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে মাধ্যমে বৃহত্তর রংপুর জেলায় সেচ সম্প্রসারণ (ইআইআর)’ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।

পীরগঞ্জ উপজেলার শানেরহাট ইউনিয়নের পাহাড়পুর গ্রামের কৃষক রেজাউল ইসলাম জানান, নলেয়া খাল পুনঃখননের ফলে বানাকুড়া, মালিবাড়ি ও ভেকি বিলের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নতি হয়েছে এবং শুধু তার ওই এলাকার ৪ হাজার একরের বেশি কৃষিজমি জলাবদ্ধতা থেকে মুক্ত হয়েছে।

তিনি বলেন, চারদশক পর গতবছর থেকে আমার এক একর জমিতে আমি আমন ধান চাষ করছি। আমি শিগগিরই আমন ধান কাটার পর আলু ও তারপর ওই জমিতে বোরো ধান চাষ করব।

পার্শ্ববর্তী দামোদরপুর গ্রামের কৃষক মাহাবুল ইসলাম ও তার স্ত্রী রুম্পা বেগম বাসস’কে জানান, প্রতিবছর ছয় থেকে নয় মাস পর্যন্ত সময় পুরো এলাকার কৃষিজমি জলাবদ্ধ থাকত এবং কৃষকরা গত ৪০ বছরে সেখানে কোনো ধান চাষ করতে পারেননি।

আগে অনেক সময় কৃষকরা বোরো ধান চাষ করতেন। কিন্তু বর্ষার বৃষ্টি ও ফলিয়ার বিল, শিমুলিয়ার বিল এবং ঘুর্ঘুরির বিলের পানির কারণে ফসল কাটার জন্য প্রস্তুত হওয়ার আগেই বন্যার ফলে বোরো ধানের ক্ষেত তলিয়ে গিয়ে ফসলের ক্ষতি হত।

রুম্পা বলেন, বিলুপ্ত নলেয়া খাল পুনঃখননের ফলে খালে পানির প্রবাহ পুনরুজ্জীবিত হয়েছে। খালটি এখন জলাবদ্ধতা থেকে জমি মুক্ত করে দ্রুত বৃষ্টির পানি ঘাঘট নদীতে নিয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, অনেক কৃষক সম্পূরক সেচের জন্য লো-লিফট পাম্প ব্যবহার করে পুনঃখনন করা খাল থেকে সংরক্ষিত ভূ-পৃষ্ঠের পানি তুলছেন এবং সাম্প্রতিক খরার মতো পরিস্থিতিতে আমন ধানের চারাও রোপণ করেছেন।

মাহাবুল বলেন, “নলেয়া খাল পুনঃখননের পর এ বছর দ্বিতীয়বারের মতো আমি আমার ১৬ শতাংশ জমিতে আমন ধান চাষ করেছি।”

পার্শ্ববর্তী পাঁচগাছী ইউনিয়নের শাহাপুর গ্রামের কৃষক মেহেদুল ইসলাম জানান, তিনি এ বছর দ্বিতীয়বারের মতো বানাকুড়া বিল এলাকায় তার এক একর জমিতে আমন ধান চাষ করেছেন।

মেহেদুল বলেন, এর আগে আমার বাবা-মা এবং পুরো এলাকার অন্যান্য কৃষকদের মতো আমি গত চার দশকে আমার জমিতে আমন ধান বা বোরো ধান চাষ করতে পারিনি।

শানেরহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মেসবাহুর রহমান জানান, বিলুপ্ত নলেয়া খাল পুনঃখননের ফলে পীরগঞ্জ উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের প্রায় ৬ হাজার ৮০০ হেক্টর জমি জলাবদ্ধতা থেকে মুক্ত হয়েছে এবং ৩০টি গ্রামের ৩ হাজার ৭৫০ জন কৃষকসহ ১৫ হাজার মানুষ উপকৃত হয়েছেন।

তিনি বলেন, স্থানীয় মানুষ পুনঃখনন করা খালের সংরক্ষিত পানি কৃষিকাজের জন্য সেচ এবং সম্পূরক সেচের জন্য ও হাঁস পালন, মাছ চাষ ও গৃহস্থালি কাজে ব্যবহার করছেন।

ইআইআর প্রকল্প পরিচালক এবং বিএমডিএ-এর রংপুর সার্কেলের সুপারিনটেন্ডিং ইঞ্জিনিয়ার মো. হাবিবুর রহমান খান বাসস’কে জানান, ২৮৮ দশমিক ১১ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পটি থেকে প্রকল্প এলাকার হাজার-হাজার মানুষ বহুমাত্রিক সুবিধা পেতে শুরু করেছেন।

তিনি বলেন, বিলুপ্ত নলেয়া খাল পুনঃখননের পর শুধুমাত্র পীরগঞ্জ উপজেলার তিনটি ইউনিয়নেরই প্রায় ৩ হাজার ৭৫০ জন কৃষক চলতি মৌসুমে ১৯০ কোটি টাকা মূল্যের ৫৪ হাজার ৪০০ টন অতিরিক্ত আমন ধান উৎপাদন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।