মা জানে না ছেলের মৃত্যুর খবর, বাবা গেছেন লাশ নিতে
নগর প্রতিবেদক :
মাহিনের বাড়ির ভেতরে স্বাভাবিক অবস্থা থাকলেও বাড়ির আশপাশের পরিবেশ সুনশান নিরব। আত্মীয় স্বজন ও পাড়াপ্রতিবেশীদের মাঝে চাপা কষ্ট বিরাজ করছে। কেননা মাহিন পিকনিকের বাস বিদ্যুতায়িত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। সাংবাদিকরা এই খবর পাওয়ার পর ছুটে যান নিহত মাহিনের বাড়ি নগরীর জুম্মাড়ায়। বাড়িতে প্রবেশের আগেই প্রতিবেশীরা সাংবাদিকদের বুঝিয়ে পাঠিয়ে দিলেন। কেননা ছেলের মৃত্যুর খবর জানানো হয়নি মাকে। পরিবারের আশঙ্কা, ছেলের মৃত্যুর খবর সহ্য করতে পারবে না মা। এদিকে খবর পাওয়ার পরপরই বাবা ইমতিয়াজুর রহমান ইমন রওয়ানা হয়েছেন ছেলের লাশ নিতে গাজিপুরের উদ্দেশে।
নিহত মুবতাসিম রহমান মাহিন গাজিপুরের ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যারিয়ার ইন্ড বিজনেস সোসাইটি বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী। বাড়ি রংপুর নগরীর জুম্মাপাড়ায়। বাবা ইমতিয়াজুর রহমান ইমন এবি ব্যাংকের সৈয়দপুর শাখার ব্যবস্থাপক। দুই ভাইয়ের মধ্যে মাহিন বড়। বাবা-মা ও পরিবারের খুব আদরের ছিল মাহিন। ছোটবেলা থেকেই সে শান্ত স্বভাবের ছিল। বাইরে তেমন আড্ডা দিত না। শুধু কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিল তার।
মাহিনের বন্ধু তাসিম বলেন, মাহিন খুবই ভালো বন্ধু ছিল। সে খুব মেধাবী ছিল। ও তেমন বাইরে আড্ডা দিতো না। দেশের গন্ডগোলের সময় রংপুরে প্রায় তিন মাসের মতো ছিল। কয়েকদিন আগে দুই তিনদিনের জন্য রংপুরে এসেছিল। তখন দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে। আমরা তিনবন্ধু খুবই ঘনিষ্ট। এরমধ্যে ও আমাদের ছেড়ে চলে গেল।
মাহিনের চাচা হাসান রহমান বলেন, সে আমার ভাতিজা হলেও আমি তাকে বাবা বলে ডাকি। সে আমারও সন্তান। তাকে হারিয়ে আমরা নিঃস্ব হয়ে গেলাম। আমার বাবা খুব মেধাবী ছিল। তার ইচ্ছে ছিল দেশকে কিছু দিবে। কিন্তু দেশকে কিছু দেয়ার আগেই চলে গেল। আমরা অনেক আশা নিয়ে তাকে ওখানে পড়তে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের সব আশা শেষ। এসময় তিনি ঘটনা সঠিকভাবে তদন্তের আহবান জানান প্রশাসনের কাছে। তদন্তে কারও গাফিলতি থাকলে তার বিচার চান তিনি।
উল্লেখ্য আজ শনিবার (২৩ নভেম্বর) সকালে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৬০ জন শিক্ষার্থী বিআরটিসির ডাবল ডেকার বাসে করে উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের উত্তর পেলাইদ গ্রামের ‘মাটির মায়া’ ইকো রিসোর্টে যাচ্ছিলেন। উদয়খালী বাজারে পৌঁছালে বিআরটিসির একটি ডাবল ডেকার বাস পল্লী বিদ্যুতের তারের স্পর্শ আসে। বাসে বিদ্যুতায়িত হলে প্রাণ হারান তিন শিক্ষার্থী। এরমধ্যে রংপুর নগরীর জুম্মাপাড়ার মুবতাসিম রহমান মাহিন (২২)। অন্য দুজন হলেন মোজাম্মেল হোসেন নাঈম (২৪) ও জোবায়ের আলম সাকিব (২২)।