বেরোবিতে শেষ হলো ছয় দিনব্যাপী ‘সেইলর গুনগুন-রণন’ বইমেলা
বইপ্রেমীরা বছর জুড়ে অপেক্ষায় থাকে অমর একুশে গ্রন্থমেলার। নতুন-পুরাতন লেখকদের বই এবং লেখকদের হাত থেকে সরাসরি বই সংগ্রহের সুযোগ পায় বইপ্রেমীরা।
ঢাকার বাইরে এ সুযোগ অনেকটাই কম। তবে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) সপ্তমবারের মতো ছয় দিনব্যাপী ‘সেইলর গুনগুন-রণন’ বইমেলায় বইপ্রেমীদের সাধ কিছুটা হলেও মিটেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা স্মারক চত্বরে এ মেলার আয়োজন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠন গুনগুন এবং রণন। প্রতিদিন দুপুর ২ টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলে বইমেলা। প্রতিদিন নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচনসহ বিকেলে মেলায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
ছয় দিনব্যাপী বইমেলা আয়োজনের ফ্যাশন ব্র্যান্ড সেইলর এর সহযোগীতায় গত ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া মেলার তৃতীয় দিন ফাল্গুন এবং বিশ্ব ভালোবাসা দিবস হওয়ায় যেন প্রাণের মেলায় পরিণত হয়।
এতে অংশ নেয় ৪২টি স্টল। প্রতিটিতেই দেশবরেণ্য লেখকদের বইয়ের পাশাপাশি স্থানীয় কবি-সাহিত্যিকদের বইও ছিল উল্লেখযোগ্য। বিভিন্ন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের বাইরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সংগঠন মেলায় অংশ নেয়।
শেষ দিন শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা স্মারক প্রাঙ্গণের আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজক সংগঠন গুনগুনের সভাপতি উমর ফারুকের সঞ্চালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন রণনের সভাপতি ড. তুহিন ওয়াদুদ সভাপতিত্ব করেন।
এ সময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাসিবুর রশীদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও সহযোগী অধ্যাপক আসাদুজ্জামান মন্ডল আসাদ, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. নিতাই কুমার ঘোষ, ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরে পরিচালক ও সহযোগী অধ্যাপক আনোয়ারুল আজিম, শহিদ মুখতার ইলাহী হলের প্রভোস্ট ও সহযোগী অধ্যাপক শাহীনুর রহমান।
মেলায় গুনগুন এর স্টলে কথা হয় তরুণ কবি আল আমিনের সাথে। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের বইমেলায় স্থানীয় লেখকদের
পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা যারা শিক্ষার্থী লিখি তাদেরও পরিচিতি বাড়ছে। একইসাথে লেখক এবং পাঠকদের এক মধুর মিলনকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। পুরো মেলায় তরুণের সমারোহ চোখে পড়ার মতো।
বন্ধুদের সাথে ঘুরতে আসা রংপুর মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী নয়ন তারা বলেন, বইমেলার খবর পেয়ে বন্ধুদের সাথে মেলায় আসা। ব্যস্ততার কারণে ঢাকার অমর একুশে গ্রন্থমেলায় যেতে না পেরে এখান থেকেই বই কিনলাম।
কথা হয় কারমাইকেল কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থী জান্নাত নিশার সাথে। তিনি বলেন, মেলায় পাঠ্যতালিকার কিছু বই পেয়ে সুযোগ হাত ছাড়া করেননি।
মেলায় আসা আরেক বইপ্রেমী খন্দকার নাজিম উদ্দিন জানান, সামনের বছর থেকে যেন মাসব্যাপী এ মেলার আয়োজন করেন কতৃপক্ষ এটা আমাদের প্রাণের দাবি।
আয়োজক সংগঠন গুনগুনের সভাপতি উমর ফারুক বলেন, শুরুর দিকে ছোটো পরিসরে মেলার আয়োজন করা হলেও সপ্তম বছরে মেলার ব্যাপ্তি অনেকটা বেড়েছে। এ বছর মেলায় ৪২টি স্টল অংশ নিয়েছে। এবারের মেলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের পাশাপাশি ঢাকা ও রংপুরের বিভিন্ন নামকরা প্রকাশনী এবং শিল্প-সাহিত্য বিষয়ক সংগঠনগুলো নেয়। মেলায় প্রতিদিনই বইপ্রেমীদের ব্যাপক সমাগম ছিল। বইয়ের সঙ্গে শিক্ষার্থীসহ সকলের নিবিড় সম্পর্ক তৈরি করতেই এ বইমেলার আয়োজন। আমরা চাই, প্রান্তিক পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়ুক বই পড়ার অভ্যাস। বই হোক সবার নিকট বন্ধু, আগামী প্রজন্ম বইমুখী হোক এটাই প্রত্যাশা।’