অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি কাজ করেও মজুরি না পেয়ে ভোগান্তিতে কয়েক হাজার শ্রমিক
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:
কুড়িগ্রামে ইজিপিপি প্রকল্পের আওতায় অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি কাজ করেও মজুরি না পেয়ে প্রায় ত্রিশ হাজার শ্রমিক ভোগান্তিতে। তবে অর্থ বরাদ্দে বিলম্বিত হবার নির্দিষ্ট কারণ জানা নেই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের।
কুড়িগ্রাম জেলায় অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি(ইজিপিপি)র কার্যক্রম শুরু হয় ২০১০সাল থেকে। সেই থেকে শ্রমিকরা কাজ করে নিয়মিত মজুরি পেয়ে আসলেও এবার সময় মতো মজুরি না পাওয়ায় হাজার হাজার শ্রমিক পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। কর্মসূচির প্রথম দফা ৪০দিনের কাজের মেয়াদ শেষ হলেও প্রায় দেড় মাস ধরে টাকা না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।
সরেজমিনে দেখা যায়,নাগেশ্বরী উপজেলার ভিতরবন্দ ইউপি পরিষদে প্রায় ২৫০ জন শ্রমিক ৪০ দিনের কর্মসূচি মাটি কাটার কাজ করেছেন। গত বছরের ১১নভেম্বর থেকে কাজ শুরু হয়ে ৮ জানুয়ারি ৪০দিনের কাজ শেষ হয়। এই কর্মসূচির আওয়তায় জনপ্রতি শ্রমিকরা দিনে ৪০০ টাকা এবং শ্রমিকদের দলনেতা ৪৫০টাকা করে মজুরি পায়। কিন্তু খেটে খাওয়া এসব শ্রমিকরা কাজের মেয়াদ পার হলেও এখন মজুরি না পেয়ে ভোগান্তিতে পড়েছে। দীর্ঘ সময়ে পারিশ্রমিক না পেয়ে ধার দেনা করে চলতে হচ্ছে তাদের জীবন। দিন এনে দিনে খাওয়া এসব শ্রমিকরা মজুরি না পেয়ে হতাশা ভুগছেন। কবে টাকা পাবেন নির্দিষ্ট কোন তারিখ জানা নেই তাদের। একদিকে কনকনে শীতে কাপড়ের অভাব অন্যদিকে দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতিতে সংসার চালানোয় হিমশীম খেতে হচ্ছে নিম্ন আয়ের এসব মানুষদের। দ্রুত পারিশ্রমিকের টাকা পেতে সরকাররের প্রতি জোর দাবি জানান তারা।
শ্রমিক আকলিমা বেগম বলেন,গত দুই বছর ধরে ৪০ দিনের মাটি কাটার কাজ করছি। কোন বছর এমন ভোগান্তির মুখে পড়ি নাই। অভাবের পড়ে মান সম্মানের ভয় না করে মাটি কাটার কাজ করতে এসেছি। টাকার অভাবে কনকনে ঠান্ডার মধ্যে বাচ্চাদের এবং নিজের কাপড় চোপড় কিনতে পারছি না। পুরাতন কাপড় দিয়ে শীত পার করতে হচ্ছে। আমরা গরিব মানুষ দিন এনে দিন খেতে হয়। কোন জমানো টাকা পয়সা নেই। ধার দেনা করে লবণ,
মরিচ, চালসব কিনতে হয়।ঋণ করে আর কত দিন চলবো? দোকানদারেরা বাকি দেওয়া বন্ধ করেছে। মান সম্মান সব ধুলোয় মিশে গেছে।
শ্রমিক আলম মিয়া বলেন, ৪০দিন মাটি কেটে একটি টাকাও পাই নাই। টাকা ছাড়া সংসার কিভাবে চলছে তা ভাষায় বুঝাতে পারবো না।খুবই সমস্যায় আছি।
ইতোমধ্যে প্রায় ১৬হাজার টাকা ঋণ হয়েছে। লবণ থেকে শুরু করে মাছ,গোসত সব কিছু কিনে খেতে হয়।যখন নিয়মিত মজুরি পেতাম তখন ভালো মন্দ খাওয়া যেতে। আর দু মাস থেকে টাকা দিতে না পারায় দোকানদারেরা বাকি দিতে চায় না। তাদেরও ব্যবসা করে চলতে হয়।
আরেক শ্রমিক সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমার মত ২৫০ জন শ্রমিকের অবস্থা খুবই খারাপ। বাজারে চাল,ডাল তেলসহ অনান্য খরচে ৮ হাজার টাকা বাকি পড়েছে। দোকানদার প্রতিদিনই টাকার জন্যএ চাপ দেয়। বাকি দেয়া বন্দ করেছে। দেড় মাসে একটি টাকাও পাই নাই। টাকা কবে পাবো তাও সঠিক জানি না। স্ত্রী,সন্তান,মা,বাবা নিয়ে খুবই বিপদে আছি।সরকার যদি দ্রুত শ্রমিকের টাকা পরিশোধ করার ব্যবস্থা করতো তাহলে আমাদের খুবই উপকার হতো।
ইজিপিপি প্রকল্পের কর্মসূচির ২০২৩-২৪অর্থ বছরের ২০দিনের কাজের বিল পরিশোধের জন্য ডিসেম্বর মাসেই কাগজপত্র জমা দিলেও এখনো শ্রমিকরা কোন টাকা পাননি নিশ্চিত করে ভিতরবন্দ ইউপি
চেয়ারম্যান শফিউল আলম শফি বলেন,শ্রমিকরা প্রতিদিন ফোন হোক বা সামনাসামনি বলে কবে টাকা পাবো? তাদের শান্তনা দেই এই ভোটের পর পাবেন। কয়েকজন শ্রমিকের বাকির দোকান থেকে বাকি বন্ধ করে দিয়েছে। সেখানে আমি দায়িত্ব নিয়ে খরচ দিতে বলেছি।শ্রমিকরা সবাই মানবেতর জীবনযাপন করছে। কেননা তাদের আয়ের উৎস একমাত্র এই প্রকল্প। সরকার দ্রুত যদি মজুরি পরিশোধের ব্যবস্থা নিবে এমনটাই আশা করি।
কুড়িগ্রাম জেলা দুর্যোগ ও ত্রাণ পূনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল হাই সরকার বলেন,ইজিপিপি প্রকল্পে আওতায় জেলার ৯টি উপজেলায় ২৭হাজার ৯২৮জন শ্রমিক কাজ করছে। তাদের কেউ এখনো টাকা পায়নি জানিয়ে তিনি বলেন,সময় মতো আমরা ২০দিনের বিলের জন্য শ্রমিকদের কাজের বিলের বিবরনী মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেই টাকা না পেতে বাকি ২০দিনের কাজও শেষ হয়েছে। এই বিলের বিবরণী দ্রুতই আমরা পাঠিয়ে দিবো। কিন্তু শ্রমিকরা কবে নাগাদ বিল পাবে এই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট ভাবে কোন কিছু বলতে পারেনি এই কর্মকর্তা।