নিউজিল্যান্ডকে গুড়িয়ে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক জয়
ঘরের মাঠে টানা ১৮তম জয়ের অস্ট্রেলিয়ার রেকর্ড ছোঁয়ার লক্ষ্য নিয়ে নেমেছিল নিউজিল্যান্ড। কিন্তু দিনটা ছিল বাংলাদেশের। কিউইদের একশ’র আগে গুটিয়ে জয়ের মঞ্চ তৈরি করে দিয়েছিলেন পেসাররা। টপ অর্ডারদের ব্যাটিং ঝড়ে সহজেই সেই লক্ষ্য পেরিয়ে ঐতিহাসিক জয় পেল টাইগাররা, এড়ালো হোয়াইটওয়াশ।
নেপিয়ারের ম্যাকলিন পার্কে বাংলাদেশ সময় শুক্রবার দিবাগত রাত ৪টায় শুরু হওয়া ম্যাচে নাজমুল হোসেন শান্তর দল জিতেছে ৯ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে। ১৯তম ম্যাচে এসে নিউজিল্যান্ডকে তাদের মাটিতে প্রথমবারের মতো ওয়ানডেতে হারাল বাংলাদেশ।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয়ও এটি। এর আগে দুইবার মিরপুরে জিতেছিল ৭ উইকেটে।
তিন ম্যাচ সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে টস জিতে বল বেছে নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক শান্ত। তার সিদ্ধান্তকে যথার্থ প্রমাণ করেন পেসাররা। ৩১.৪ ওভারে স্রেফ ৯৮ রানেই গুটিয়ে দেয় নিউজিল্যান্ডকে। ৩৪.৫ ওভার হাতে রেখেই লক্ষ্য পূরণ করে সফরকারীরা। বলের ব্যবধানে এটি বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম জয়।
ম্যাচের আগে দলীয় পারফরম্যান্সের উপর জোর দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন শান্ত। ম্যাচে ছিল তারই প্রতিফলন। স্বাগতিকদের ১০ উইকেট ভাগ করে নিলেন বাংলাদেশের চার পেসার। অপরাজিত ঝড়ো ফিফটিতে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়েন দলপতি।
জয় সূচক রান এনে দেওয়ার পথে পঞ্চাশ স্পর্শ করেন অধিনায়ক শান্ত, ৫১ বলে। তার ৪২ বলের ইনিংস গড়া ৮ চারে। লিটন দাস অপরাজিত থাকেন ১ রানে।
দলীয় ১৫ রানে সৌম্য সরকার চোখের সমস্যা নিয়ে উঠে যাওয়ার পর এনামুল হক বিজয়কে নিয়ে লক্ষ্যের কাছে চলে যান শান্ত। এনামুল ৩৩ বলে ৭ চারে ৩৭ রান করে কটবিহাইন্ড হন।
তরুণ পেসার তানজিম হাসান সাকিব ৭ ওভারে দুই মেডেনসহ স্রেফ ১৪ রানের বিনিময়ে নেন ৩ উইকেট। প্রথমবার ম্যাচসেরাও হয়েছেন এই ডানহাতি পেসার।
তার মতই উপরের সারির ব্যাটারদের উপর তাণ্ডব চালিয়ে ৭ ওভারে শরিফুল ইসলামও ৩টি শিকার ধরেন ২২ রানের খরচায়। সৌম্য সরকারও ৩ উইকেট নেন কেবল ১৮ রানে। অন্যটি মুস্তাফিজুর রহমানের।
ওয়ানডেতে এই প্রথম একশ রানের নিচে নিউজিল্যান্ডকে থামাতে পারে বাংলাদেশ। তাদের বিপক্ষে কিউইদের আগের সর্বনিম্ন ছিল ২০১৩ সালে মিরপুরের ১৬২। সব মিলিয়ে দেশের মাটিতে এটি তাদের চতুর্থ সর্বনিম্ন স্কোর।
দেশের মাটিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে এর আগে একবারই অলআউট হয়েছে নিউজিল্যান্ড। ২০১৬ সালে নেলসনে ২৫১ রানে।
কিউইদের ইনিংসে সর্বোচ্চ ২৬ রান ওপনার উইল ইয়াংয়ের। এছাড়া বিশোর্ধো ইনিংস কেবল একটি। অধিনায়ক টম ল্যাথামের ২১। তাদের তৃতীয় উইকেট জুটি থেকে এসেছে সর্বোচ্চ ৩৬ রান। বিশোর্ধো জুটি নেই আর একটিও।
চতুর্থ ওভারে দলীয় ১৬ রানে রাচিন রবীন্দ্রকে কট বিহাইন্ড করে শুরুটা করেন তানজিম। অষ্টম ওভারে দলীয় ২২ রানে হেনরি নিকোলসকে শান্তর হাতে ক্যাচ বানান এই তরুণ ডানহাতি পেসার। টম ল্যাথামকে বোল্ড করে ইনিংসের সর্বোচ্চ জুটি ভাঙেন শরিফুল। এরপর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট শিকারের উল্লাস করতে থাকে টাইহাররা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউজিল্যান্ড: ৩১.৪ ওভারে ৯৮ (ইয়াং ২৬, রাচিন ৮, নিকোলস ১, ল্যাথাম ২১, ব্লান্ডেল ৪, চ্যাপম্যান ২, ক্লার্কসন ১৬ , মিল্ন ৪, অশোক ১০, ডাফি ১*, ও’রোক ১; শরিফুল ৭-০-২২-৩, তানজিম ৭-০-১৪-৩, মুস্তাফিজ ৭.৪-০-৩৬-১, সৌম্য ৬-১-১৮-৩, মিরাজ ১-০-৩-০, রিশাদ ৩-০-৪-০)।
বাংলাদেশ: ১৫.১ ওভারে ৯৯/১ (সৌম্য ৪ আহত অবসর, এনামুল ৩৭, শান্ত ৫১*, লিটন ১*; মিল্ন ৪-০-১৮-০, ডাফি ৫-০-২৭-০, ক্লার্কসন ২-০-১৯-০, ও’রোক ৪-০-৩৩-১, অশোক ০.১-০-২-০)।
ফল: বাংলাদেশ ৯ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচসেরা: তানজিম হাসান সাকিব।
সিরিজসেরা: উইল ইয়াং (২২০ রান)।