দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৮৩ রানে গুটিয়ে দিল ভারত

আগের ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে গুটিয়ে দিয়েছিল স্রেফ ৫৫ রানে। ভারতীয় বোলারদের সামনে এবার দাঁড়াতে পারল না দক্ষিণ আফ্রিকার শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপও। রবীন্দ্র জাদেজার দুর্দান্ত বোলিংয়ে একশর আগেই গুটিয়ে বিশাল ব্যবধানে হারল প্রটিয়ারা। আরও একটি বড় ব্যবধানের জয়ে চলমান আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপের পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষস্থান নিশ্চিত করল রোহিত শর্মার দল।

কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে আসরের ৩৭তম ম্যাচে ভারতের জয় ২৪৩ রানে। টসজয়ী ভারত নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৫ উইকেটে করে ৩২৬ রান। জবাবে ২৭.১ ওভারে স্রেফ ৮৩ রানে গুটিয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা।

ওয়ানডেতে দক্ষিণ আফ্রিকার যৌথভাবে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন স্কোর এটি। এর আগে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুবার ৮৩ রানে অল আউট হয়েছিল তারা ২০০৮ ও ২০২২ সালে। আর ১৯৯৩ সালে সিডনিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৬৯ রান প্রোটিয়াদের সর্বনিম্ন।

এই সংস্করণে প্রথমবার দুইশর বেশি রানে হারল দক্ষিণ আফ্রিকা। ২০০২ সালে পোর্ট এলিজাবেথে পাকিস্তানের বিপক্ষে হেরেছিল সর্বোচ্চ ১৮২ রানে।

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ভারতের সবচেয়ে বড় জয়ও এটি। ২০০৩ সালে ঢাকার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে টিভিএস কাপে ১৫৩ রানে জয় ছিল আগের রেকর্ড।

আসরে আট ম্যাচের সবকটিতেই জিতল ভারত। অন্যদিকে সমান সংখ্যক ম্যাচে দ্বিতীয় পরাজয়ের তিক্ত স্বাদ পেল দক্ষিণ আফ্রিকা।

৯ ওভারে ৩৩ রানে ৫ উইকেট নিয়ে ভারতের সেরা বোলার জাদেজা। দুটি করে নেন কুলদিপ যাদব ও মোহাম্মদ শামি। ১৪ ওভারের মধ্যে শীর্ষ পাঁচ ব্যাটারকে হারানোর পর আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা।

রেকর্ড ইনিংস খেলে ম্যাচের নায়ক বিরাট কোহলি। ‘সিটি অব জয়’ খ্যাত কলকাতায় কোহলি নিজের ৩৫তম জন্মদিনে রাঙিয়েছেন একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শচিন টেন্ডুলকারের সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির রেকর্ডে ভাগ বসিয়ে।

একদিনের ক্রিকেটে টেন্ডুলকারের ৪৯তম রেঞ্চুরির রেকর্ড স্পর্শ করার দিনে ১২১ বলে ১০ চারে অপরাজিত ১০১ রানের ইনিংস খেলেছেন কোহলি।

২৮৮ ম্যাচে ২৭৬ ইনিংসে এই কীর্তি গড়লেন কোহলি। সমান শতক করতে টেন্ডুলকারের লেগেছিল ৪৬৩ ম্যাচ আর ৪৫২ ইনিংস।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ইনিংস এসেছে শ্রেয়াসের ব্যাট থেকে। চারে নেমে তিনি করেছেন ৮৭ বলে ৭ চার ও ২ ছক্কায় ৭৭ রান।

এছাড়া রোহিত শর্মার ২৪ বলে ৪০, সূর্যকুমার যাদবের ১৪ বলে ২২ ও রবীন্দ্র জাদেজার ১৫ বলে অপরাজিত ২৯ রানের ইনিংস ভারতের বড় সংগ্রহে অবদান রাখে।

৩৫ বলে ৬২ রানের উড়ন্ত সূচনা এনে দেন রোহিত ও শুবমান গিল। এরপর পঞ্চাশোর্ধো জুটি একটি। তৃতীয় উইকেটে কোহলি-শ্রেয়াস জুটি থেকে আসে ১৫৮ বলে ১৩৪ রান। শ্রেয়াস লুঙ্গি এনগিদির শিকার হয়ে ফিরলেও শেষ পর্যন্ত খেলে মাঠ ছাড়েন কোহলি। কলকাতার কঠিন কন্ডিশনে দুইশ মিনিটের বেশি সময় ধরে ব্যাটিং করেন বার্থডে বয়।

১০ ওভারে স্রেফ ৩০ রানে ১ উইকেট নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার সেরা বোলার কেশব মহারাজ। মার্কো ইয়েনসেন ৯.৪ ওভারে দিয়েছেন ৯৪ রান। ওভারপ্রতি সাতের নিচে রান দিয়েছেন অআর কেবল কাগিসো রাবাদা, ১০ ওভারে ৪৮ রানে এই পেসার নেন রোহিতের উইকেট।

তবে প্রটিয়া দলে সবচেয়ে দুশ্চিন্তার বিষয় ইনিংসের শেষ ওভার অসমাপ্ত রেখেই এনগিদির খুড়িয়ে মাঠ ছাড়া।

রান তাড়ায় দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসে বিশোর্ধো জুটি নেই একটিও। সর্বোচ্চ ১৪ রান আসে মার্কো ইয়েনসেনের ব্যাট থেকে।

আট ম্যাচের সবকটিতে জিতে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে দশ দলের তালিকায় শীর্ষে ভারত। সমান সংখ্যক ম্যাচে ছয় জয়ে ১২ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার দুইয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। এখন পর্যন্ত এই দুই দলই সেমিফাইনাল নিশ্চিত করতে পেরেছে।

লিগ পর্বে ভারতের শেষ ম্যাচ আগামী ১২ নভেম্বর, প্রতিপক্ষ নেদারল্যান্ডস। একই পর্বে দক্ষিণ আফ্রিকা নিজেদের শেষ ম্যাচ খেলবে আগামী ১০ নভেম্বর আফগানিস্তানের বিপক্ষে। 

ভারত: ৫০ ওভারে ৩২৬/৫ (রোহিত ৪০, শুভমান ২৩, কোহলি ১০১*, শ্রেয়াস ৭৭, রাহুল ৮, সূর্যকুমার ২২, জাদেজা ২৯*; অতিরিক্ত ২৬; এনগিদি ৮.২-০-৬৩-১, ইয়ানসেন ৯.৪-০-৯৪-১, রাবাদা ১০-১-৪৮-১, মহারাজ ১০-০-৩০-১, শামসি ১০-০-৭২-১, মার্করাম ২-০-১৭-০)।

দক্ষিণ আফ্রিকা : ২৭.১ ওভারে ৮৩ (ডি কক ৫, বাভুমা ১১, ডুসেন ১৩, মার্করাম ৯, ক্লাসেন ১, মিলার ১১, ইয়ানসেন ১৪, মহারাজ ৭, রাবাদা ৬, এনগিদি ০, শামসি ৪*; অতিরিক্ত ২; বুমরাহ ৫-০-১৪-০, সিরাজ ৪-১-১১-১, জাদেজা ৯-১-৩৩-৫, শামি ৪-০-১৮-২, কুলদিপ ৫.১-১-৭-২)।

ফল: ভারত ২৪৩ রানে জয়ী।

ম্যান অব দা ম্যাচ: বিরাট কোহলি।

Related Articles

Stay Connected

0FansLike
3,912FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles