দ্রব্যমূল্যের প্রভাব ফুলের বাজারে

“জোটে যদি মোটে একটি পয়সা

       খাদ্য কিনিয়ো ক্ষুধার লাগি’

দুটি যদি জোটে অর্ধেকে তার

       ফুল কিনে নিয়ো, হে অনুরাগী!

বাজারে বিকায় ফল তণ্ডুল

       সে শুধু মিটায় দেহের ক্ষুধা,

হৃদয়-প্রাণের ক্ষুধা নাশে ফুল

        দুনিয়ার মাঝে সেই তো সুধা!”

        কবির ভাষায় ফুলের যত গুরুত্বপূর্ণ বিবরণ থাকুক না কেন, বর্তমান বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যর অতিরিক্ত দামে বাড়তি কিছু কেনার কথা চিন্তা করতে পারেছেনা কেউ। কাঁচা বাজার থেকে মুদি বাজার সবকিছু যেন ধীরে ধীরে হাতের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে।

যেখানে মৌলিক চাহিদার পুরোটাই পূর্ণ হয় না সেখানে বাড়তি চাহিদা হিসেবে ফুল কেনা এখন দুরূহ। ফুলের বাজারে নেই ক্রেতা। তাছাড়া অর্থ খরচ করে ফুল কেনার মতন মানুষ এখন খুব কম। বিয়ে, জন্মদিন, বিভিন্ন দিবস ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান ছাড়া আপাতত অন্য কোন কিছুতে ফুলের ব্যবহার নেই বললেই চলে। এছাড়াও প্রতিষ্ঠান গুলোর সবকিছুতেই ব্যয় সংকোচন করায় সেখান থেকে বাদ পড়েছে ফুল।

রংপুরে ফুলের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, অনেক দোকান সারাদিন কোন বেচা-বিক্রি নেই। প্রতিদিনের কর্মচারী বিল উঠাতে পারছে না অনেক দোকানদার। চিরিয়াখানা রোডের ফুলের দোকান গুলোতে নেই কোন ভিড়। সেখানে ফুল কর্নার এর দোকান মালিক হাফিজুল আলম বাবু জানালেন, “এখন দুপুর ২ টা বাজে এখন পর্যন্ত একটি টাকাও বিক্রি করতে পারিনি। প্রতিদিন ফুলের গাড়ী যশোর থেকে ভোরে রংপুর আসে, বেশ কয়েকদিন হল মহাজনকে কোন টাকা দিতে পারি না। তবে তারা ফুল দেওয়া বন্ধ করেনি। বর্তমানে ১ থেকে ২০০০ টাকা দিন ইনকাম করা খুব কঠিন, এছাড়াও যে ফুলগুলো আসে তার প্রসেসিং বাবদ কিছু খরচ থাকে। কিছু কিছু দিন ফুল প্রসেসিং বিল ও কর্মচারীর বেতন কোনটাই ওঠেনা। বর্তমানে মানুষ খরচ অনেক কমিয়ে দিয়েছে। বিয়ের বাড়িতেও আগে যা ফুল বিক্রি হত তার চাইতে অনেক পরিমান কম বিক্রি হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানগুলো বাড়তি খরচ কমিয়ে নিয়ে এসেছে যার কারনেও আমাদের ভুল বিক্রি অনেক কমে গেছে। এখন শুধুমাত্র বিভিন্ন দিবসে কিছু ফুল বিক্রি হয়।

ইঞ্জিনিয়ার পাড়া রোডের সুগন্ধা দোকান মালিক ফুল ব্যবসায়ী রঞ্জু জানায়, বর্তমানে মানুষ ফুল কিনতে তেমন আগ্রহী নয়। আমরা ঋণ করে বর্তমানে এ ব্যবসা ধরে রেখেছি। মানুষের অর্থনৈতিক বর্তমানে ভালো না, তাছাড়া দ্রব্যমূল্যের দাম অনেক বেশি হওয়ায় সেই প্রভাব এখন ফুলের বাজারে পড়েছে।বেচা-বিক্রি একদম খারাপ। এছাড়াও কৃত্রিম ফুলের বাজার প্রসারিত হয়েছে। এখন অনেকে টাটকা ফুলের চাইতে কৃত্রিম ফুল কিনছে। বর্তমানে মানুষ বিলাসিতা ভুলে গেছে।

অনেক ব্যবসায়ী আশা করছে সামনে পুজোয় ফুল বিক্রি বাড়বে। এছাড়াও শীতে বিয়ের প্রবণতা বাড়লে ফুলের ব্যবসা বাড়তে পারে।

এই ব্যবসাটি ধরে রাখার জন্য সরকারের কাছে সার্বিক সহযোগিতা চেয়েছে অনেক ব্যবসায়ী। করোনার সময় সিটি কর্পোরেশন ও রংপুর জেলা প্রশাসন নাম মাত্র সহযোগিতা করেছিল ফুল ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত কর্মচারীদের। বর্তমান ব্যবসা খারাপ যাওয়ায় পুনরায় সার্বিক সহযোগিতা চায় ফুল ব্যবসায়ীরা।

Related Articles

Stay Connected

0FansLike
3,912FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles