লালমনিরহাটে অটোরিকশা চালক হত্যা, ৪ হত্যাকারী গ্রেফতার

বাবু রায়, লালমনিরহাট প্রতিনিধি ।। লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার স্বর্ণামতি নদী থেকে আব্দুর রাশিদ(৪০) নামে এক অটোরিকশা চালকের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সোমবার (২১ আগস্ট) বেলা ১২টার দিকে উপজেলার স্বর্ণামতি নদীর কান্তেস্বর ব্রীজ এলাকা থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। তখন আব্দুর রাশিদ এর পরিবার দুর্বৃত্তরা তাকে হত্যা করে তার ব্যবহৃত অটোরিকশাটি ছিনিয়ে নিয়ে গেছে বলে অনুমান করে দাবী করে।

এ মামলার মাত্র ২ দিনে ২৩শে আগস্ট বুধবার গাজীপুর কোনাবাড়ী এলাকা হতে হত্যা মামলার ০৪ জন আসামী যথাক্রমে মোঃ সিরাজুল ইসলাম পিতা-মোঃ মমিনুল ইসলাম, মোঃ শামসুল হক উরফে বাবু (৩২), পিতা-মৃত মোন্তাজ আলী, মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান মুন্না (১৭),  পিতা- আব্দুল মতিন এবং  মোঃ মোমিনুল ইসলাম (৪৫), পিতা-মোঃ নাজিম উদ্দীনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় র‍্যাব ১৩। আসামীদের সবার ঠিকানা লালমনিরহাট জেলার আদিতমারি থানার খারুভাজ (বালাপাড়া) গ্রামে। গ্রেফতারকৃত আসামীরা আন্তঃ জেলা অটো মিশুক ছিনতাই চক্রের সাথে জড়িত যা সিরাজ গ্যাং নামে পরিচিত। তারা অত্র এলাকার বিভিন্ন অটো স্ট্যান্ডে অবস্থান করে যাত্রী বেশে অটোতে উঠে সুবিধাজনক স্থানে অটো চালককে জিম্মি করে অথবা মারধোর করে অটো মিশুক ছিনতাই করে সেটি বিক্রি করে বিক্রয়লব্ধ টাকা ভাগাভাগি করে নেয় বলে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায় র‍্যাব-১৩ ।

এর আগে মামলা সুত্রে জানা যায়, রোববার বিকেলে আব্দুর রাশিদ অটোরিকশা নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়। গভীর রাতেও সে বাড়ি না ফেরায় পরিবারের লোকজন বিভিন্ন জায়গায় খোঁজখবর করতে থাকেন। সোমবার সকালে বাড়ির অদূরে স্থানীয়রা স্বর্ণামতি নদীর কান্তেস্বর ব্রীজের নিচে একটি লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেয়। পরে পুলিশ এসে ব্রীজের নিচ থেকে মরদেহ উদ্ধার করে। পরে নিহতের পরিবারের লোকজন অটোরিকশা চালক আব্দুর রাশিদের মরদেহ সনাক্ত করে। তখন পুলিশেরও ধারণা হয় মূলত অটোরিকশাটি ছিনতাই এর উদ্দেশ্যেই আব্দুর রাশিদকে হত্যা করা হয়েছে। অটোরিকশাটি ছিনতাই ব্যাপারটি মাথায় রেখে পুলিশের সাথে ছায়া তদন্তে নামে র‍্যাব।

আসামীদের জবানবন্দিতে গা শিউরে ওঠার মত ঘটনা প্রকাশ পায়, এই ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী আসামী সিরাজুল ইসলাম (১৬) এর পূর্বপরিকল্পনা মোতাবেক সহযোগী আসামীদের সহযোগীতায় ঘটনার দিন গত ২০ আগস্ট ২০২৩ তারিখ রাতে আনুমানিক ৯টার আশেপাশে বুড়িরবাজার থেকে অটোমিশুক ভাড়া করে বাবুর বাজার যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা করে। পথিমধ্যে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ডাকাতপাড়া ব্রীজের উপর প্রসাব করার কথা বলে রাশিদকে অটো থামাতে বলে। অটোমিশুক থামালে ছিনতায় এর উদ্দেশ্যে আসামী শামসুল হক বাবু ও মোস্তাফিজুর রহমান মুন্না এর সাথে রাশিদ এর ধস্তাধস্তি হয় এবং আসামী সিরাজুল ইসলাম পিছন থেকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে রাশিদ এর মাথায় সজোরে আঘাত করলে রাশিদ রাস্তায় লুটিয়ে পড়ে এ অবস্থায় তার পকেট থেকে টাকা পয়সা এবং অটো রিক্সা নিয়ে অর্ধ-মৃত অবস্থায় ব্রীজের উপর থেকে পানিতে ফেলে দেয়।

পরবর্তীতে অটোমিশুক নিয়ে মোস্তাফি বাজারে ভাঙ্গাড়ী দোকানে বিক্রি করতে গেলে দোকানদার কর্তৃক বৈধ কাগজ চাওয়ায় তারা মোস্তাফি বাজারে অটোমিশুক ফেলে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে আসামীগন পালিয়ে গাজীপুর কোনাবাড়ী এলাকায় অবস্থানরত আসামী মোঃ সিরাজুল ইসলামের বাবা মোঃ মোমিনুল ইসলামের বাসায় আত্মগোপন করে এবং সেখান থেকেই তাদের গ্রেফতার করা হয়।

উল্লেখ্য যে, নিহত আব্দুর রাশিদ লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার স্বর্ণামতি নদীর কান্তেস্বর ব্রীজ এলাকার পার্শ্ববর্তী বালাপাড়া গ্রামের খোরশেদ আলম এর পুত্র।

Related Articles

Stay Connected

0FansLike
3,912FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles