আন্তর্জাতিক

৫০০ যাত্রীসহ পেশোয়ারগামী ট্রেনে তীব্র গুলিবর্ষণ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে পেশোয়ারগামী একটি ট্রেনে তীব্র গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এরপর স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে ‘জরুরি ব্যবস্থা’ গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে প্রাদেশিক সরকার। মঙ্গলবার (১১ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে পাকিস্তানি গণমাধ্যম ডন।
বেলুচিস্তান সরকারের মুখপাত্র শাহিদ রিন্দ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘কোয়েটা থেকে পেশোয়ারগামী জাফর এক্সপ্রেস ট্রেনে পেহরো কুনরি এবং গাদালার মধ্যবর্তী স্থানে তীব্র গুলিবর্ষণের খবর পাওয়া গেছে।’

এদিকে, কন্ট্রোলার রেলওয়ে মোহাম্মদ কাশিফ জানিয়েছেন, নয়টি বগির এই ট্রেনে প্রায় ৫০০ যাত্রী ছিলেন।

তিনি আরও জানান, ‘সশস্ত্র ব্যক্তিরা ট্রেনটিকে টানেল নম্বর ৮ এ থামিয়ে দেয়। যাত্রী ও স্টাফদের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা চলছে।’

সরকারি বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, পরিস্থিতি মোকাবিলায় সিবি হাসপাতালকে জরুরি অবস্থার আওতায় আনা হয়েছে, পাশাপাশি অ্যাম্বুলেন্স ও নিরাপত্তা বাহিনী ঘটনাস্থলের দিকে রওনা হয়েছে।
বেলুচিস্তান সরকারের মুখপাত্র বলেন, দুর্গম পাহাড়ি ভূখণ্ডের কারণে ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে কর্মকর্তাদের বেগ পেতে হচ্ছে।

বিবৃতিতে আরও জানানো হয়েছে, ‘উদ্ধারের জন্য রেলওয়ে বিভাগ থেকে আরও ট্রেন পাঠানো হয়েছে। ঘটনার মাত্রা এবং এতে সন্ত্রাসী উপাদান জড়িত কিনা তা নির্ধারণ করা হচ্ছে। বেলুচিস্তান সরকার জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে এবং সকল সংস্থাকে সক্রিয় থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

সরকারি কর্মকর্তা জনগণকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে গুজবে কান না দেওয়ার অনুরোধ করেছেন।

যদিও এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে হতাহতের সংখ্যা জানানো হয়নি কিন্তু সিন্ধুর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জিয়াউল হাসান লাঞ্জার এক বিবৃতিতে ঘটনাটির তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘গুলিতে যাত্রীরা আহত হয়েছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘দেশবিরোধী ও সমাজবিরোধী শক্তিদের নীলনকশা কখনো বাস্তবায়িত হতে দেওয়া হবে না। সিন্ধু সরকার বেলুচিস্তান সরকারের পাশে রয়েছে।’

উল্লেখ্য, গত বছরের অক্টোবর মাসে এক মাসেরও বেশি সময় বন্ধ থাকার পর পাকিস্তান রেলওয়ে কোয়েটা-পেশোয়ার ট্রেন চলাচল পুনরায় শুরু করেছিল।

বেলুচিস্তানে গত এক বছরে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে কোয়েটা রেলওয়ে স্টেশনে আত্মঘাতী বোমা হামলায় অন্তত ২৬ জন নিহত এবং ৬২ জন আহত হয়েছিলেন।

এ বছরের জানুয়ারিতে ইসলামাবাদভিত্তিক থিংক ট্যাঙ্ক পাক ইনস্টিটিউট ফর পিস স্টাডিজ (পিআইপিএস) প্রকাশিত একটি নিরাপত্তা প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালে পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলার সংখ্যা ২০১৪ সালের বা তার আগের নিরাপত্তা পরিস্থিতির সমতুল্য পর্যায়ে পৌঁছেছিল।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে সন্ত্রাসীরা নির্দিষ্ট কোনো ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ না করলেও, খাইবার পাখতুনখোয়া (কেপি) এবং বেলুচিস্তানের কিছু অঞ্চলে নিরাপত্তাহীনতার পরিস্থিতি ছিল “উদ্বেগজনক”।

২০২৪ সালে পাকিস্তানে রেকর্ড হওয়া ৯৫ শতাংশ সন্ত্রাসী হামলার ঘটনাই কেপি ও বেলুচিস্তানে কেন্দ্রীভূত ছিল।

বেলুচিস্তানে নিষিদ্ধ ঘোষিত বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠী, বিশেষ করে বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) এবং বেলুচিস্তান লিবারেশন ফ্রন্ট (বিএলএফ)-এর হামলার সংখ্যা ১১৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ১৭১টি হামলার জন্য দায়ী বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।