জাতীয়

সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য নিয়ে আলোচনায় যারা

সরকারের নতুন মন্ত্রীসভা শপথ নেয়ার পর থেকেই আলোচনা শুরু হয় এবার কে পাচ্ছেন সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনে মনোনয়ন। এবার সংরক্ষিত নারী আসনে প্রায় সবই পেতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। দলীয় সূত্র জানিয়েছে, এবার সংরক্ষিত নারী আসনে নতুনদের অগ্রাধিকার দেবে আওয়ামী লীগ। এমন সিদ্ধান্তই নিয়েছে দলটির হাইকমান্ড। যাদের সকলে হবে দলের ত্যাগী নেত্রী। জানা গেছে, ইতিমধ্যে জোটবদ্ধভাবে ৪৮ আসনে মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করেছে আওয়ামী লীগ। বাকি ২টি আসন পাবে জাতীয় পার্টি।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংরক্ষিত নারী আসনে সংসদ সদস্য হতে আগ্রহীরা ইতিমধ্যেই দলীয় নেতাদের সঙ্গে লবিং- তদবিরে ব্যস্ত সময় পার করছেন। অনেকেই নেতাদের বাসায়ও ভিড় করছেন। চেষ্টা করছেন দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও দেখা করতে।

জাতীয় সংসদে ৩০০ আসনের বাইরে ৫০টি সংরক্ষিত নারী আসন রয়েছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফলে আওয়ামী লীগ পেয়েছিল ২২৩টি আসন। ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের মধ্যে জাসদ ১টি ও ওয়ার্কার্স পার্টি ১টি এবং স্বতন্ত্র ৬২ আসন পায়। যার মধ্যে ৬০ টি আসন পেয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। কল্যাণ পার্টি আসন পেয়েছে ১টি। জাতীয় পার্টি ১১টি আসন পেয়েছে। সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নারী আসনের ৫০টির মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৮টি, জাতীয় পার্টি দুটি ও স্বতন্ত্ররা ১০টি আসন পায়। অপর দিকে গত রোববার স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকে স্বতন্ত্র কোটা থেকে সংরক্ষিত নারী আসন বন্টনের দায়িত্ব শেখ হাসিনাকেই অর্পণ করেছেন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা।

জানা গেছে, এরই মধ্যে নারী আসন বণ্টনের সুবিধার্থে সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দল ও স্বতন্ত্রদের কাছে ৩০ জানুয়ারি মধ্যে দলে যোগদান বা জোট করার বিষয়ে চিঠি দেয় নির্বাচন কমিশন। ৩১ জানুয়ারি জোটবদ্ধভাবে ৪৮ আসনে মনোনয়ন দেওয়ার কথা জানিয়ে সবার সই নিয়ে ইসিতে চিঠি জমা দেয় আওয়ামী লীগ। স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের ভাগে পাওয়া সংরক্ষিত আসনগুলোতেও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে প্রার্থী করার চেষ্টা চলছে এবং তা নিশ্চিত করা হবে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

আওয়ামী লীগ সূত্র জানিয়েছে, আওয়ামী লীগ, মহিলা আওয়ামী ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাদের পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন ধরে রাজপথের পরীক্ষিত নেত্রীদের মধ্যে থেকে নারী সংসদ সদস্য করার দাবি জানানো হয়েছে। অপর দিকে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা তাদের যে কোটা আওয়ামী লীগ সভাপতির হাতে অর্পণ করেছেন তা আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেত্রীদের সংসদ সদস্য করার সুপারিশ করেছেন বলে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা কয়েকজন জানিয়েছেন।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সূত্রও জানিয়েছে, এবার নতুন এবং ত্যাগী নেত্রীদেরই নারী সংসদ সদস্য হতে সুযোগ দিতে চায় আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। দলীয় ঘোরোয়া আলোচনাতেও এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। রাজনৈতিক কারণে মনোনয়নবঞ্চিতরা সব চেয়ে এগিয়ে থাকবেন বলে দলীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় কমিটি ও সহযোগী সংগঠনের কাউকে কাউকেও দেখা যাবে সংসদে। এ ছাড়া বিভিন্ন পেশায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন এমন নারী নেতৃত্বকে প্রতিনিধিত্ব করতে সংসদে সুযোগ করে দেবে আওয়ামী লীগ। বিভিন্ন বিভিন্ন ক্ষেত্রে এমন পেশাজীবিদের প্রধাণ্য দেওয়া হবে। আর মনোনয়ন প্রত্যাশীরাও বলছেন, তারা দীর্ঘদিন ধরে রাজপথের রাজনীতিতে আছেন। পরীক্ষিত নেত্রীদের বিষয়ে দল মূল্যায়ন করলে তারা মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী।

দলীয় সূত্র জানিয়েছে, দলীয় নেতাদের ঘরোয়া আলোচনায় নানা ইঙ্গিতে অনেকের নাম উঠে আসছে, যাদের অনেককেই দেখা যেতে পারে সংসদে। এর মধ্যে দলের কেন্দ্রীয় নেত্রী, সহযোগী সংগঠনের নেত্রী এবং বিভিন্ন জেলায় আওয়ামী লীগের নেত্রীদের বিবেচনায় রাখা হবে বলে শোনা যাচ্ছে। এর বাইরেও জোট শরিকদের দু-তিনটি আসন দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা চলছে। তবে পুরোনোদের সিংহভাগ এবার মনোনয়ন পাবেন না বলেই ইঙ্গিত দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

দলীয় সূত্র জানিয়েছে, যারা নারী সংসদ সদস্য হতে পারেন- এমন সম্ভব্যদের নাম খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহারার লাইলী। তিনি এবারের সংসদ সদস্য প্রার্থী হয়েছিলেন দলের। কিন্তু পরে জোটের আসন সমঝোতায় তাকে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করতে হয়। ইতিমধ্যে আলোচনায় রয়েছেন- আওয়ামী লীগের আন্তজার্তিক সম্পাদক ও বরিশাল থেকে দলের মনোনয়ন পাওয়ার পরও প্রার্থীতা বাতিল হওয়া শাম্মী আহমেদ। সাবেক শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ানও এবার নারী সংসদ সদস্য হতে পারেন বলে দলীয়ভাবে জোড় আলোচনা রয়েছে। আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক ওয়াসিকা আয়শা খান, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা, শিক্ষা সম্পাদক বেগম শামসুন নাহার (চাঁপা), কার্যনির্বাহী সদস্য পারভিন জামান কল্পনাও আলোচনায় রয়েছেন। এর বাইরে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে আখতার জাহান, মেরিনা জাহান, সফুরা বেগম, হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়াও আসতে পারেন। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেত্রী সানজিদা খানমের নামও আছে আলোচনায়।

এ ছাড়া আলোচনায় রয়েছে, মানিকগঞ্জ থেকে এবার সংসদ সদস্য নির্বাচনে পরাজিত শিল্পী মমতাজ, ঢাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করা ও সাবেক নারী সংসদ সদস্য সাবিনা আক্তার তুহিন, শিরীন আহমেদ,আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেত্রী তারানা হালিম, যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় সাবেক সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল, যুব মহিলা লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি নাজমা আক্তার, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি চৈতালী হালদার চৈতী, যুব মহিলা লীগের বর্তমান সভাপতি আলেয়া সারোয়ার ডেইজী, অভিনেত্রী শমী কায়সার, অভিনেত্রী অরুণা বিশ্বাস, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেত্রী মারুফা আক্তার পপি, মহিলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক দীপিকা রানী সমার্দ্দার, অ্যাডভোকেট তুরিন আফরোজ, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগ নেত্রী নাজনীন সরোয়ার কাবেরী, অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচীর নাম আলোচনা রয়েছে। ধানমন্ডি থানা মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী ও বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য শেখ মিলিও নারী সংসদ সদস্য হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নারী সংসদ সদস্য হতে আলোচনায় আছেন ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রেশমা আক্তার, ভালুকা থেকে বর্তমান নারী সংসদ সদস্য মনিরা সুলতানাও দীর্ঘদিন ধরে এ আলোচনায় রয়েছে।

পেশাগত অঙ্গনে সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ জাতীয় প্রেস ক্লাবের প্রথম নারী সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন থাকতে পারেন এবারের সংসদে। গত সংসদের সদস্য আরমা দত্ত ও খালেদ মোশাররফের কন্যা মাহজাবীন খালেদ এবারও থাকতে পারেন। জোট নেতাদের মধ্যে সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়ার স্ত্রী, জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনুর স্ত্রী আফরোজা হক আসতে পারেন এই সংসদে। এছাড়া জাতীয় পার্টি- জেপি সভাপতি আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর পরিবারের কাউকে আনা হতে পারে।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, সংরক্ষিত আসনে মনোনয়নে পরীক্ষিত ত্যাগীদের গুরুত্ব দেওয়া হবে। তিনি বলেন, সংরক্ষিত আসন পঞ্চাশের মধ্যে আমাদের সদস্য সংখ্যার সঙ্গে স্বতন্ত্রদের পক্ষ থেকেও দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এখানে মনোনয়ন চাওয়া ও ফরম নেওয়ার যে হিড়িক, সে তুলনায় দেওয়ার সংখ্যা তো খুবই কম। পরীক্ষিত ত্যাগীদের এ ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেওয়া হবে। যারা দুঃসময়ের পরীক্ষিত বন্ধু তাদের ব্যাপারে অগ্রাধিকার দেব।

উল্লেখ্য, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর। এর পর ২০১৯ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারী শপথ নেন নারী সংসদ সদস্যরা। গত সংসদে প্রথম ধাপে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৪৩ জন, ওয়ার্কার্স পার্টির একজন এবং স্বতন্ত্র একজনসহ ৪৫ জন সংসদ সদস্য শপথ নেন। দ্বিতীয় ধাপে জাতীয় পার্টির চার সংসদ সদস্যকে শপথ বাক্য পাঠ করানো হয়।