রংপুর বিভাগ

শিক্ষা বোর্ডের চিঠি জালিয়াতির অভিযোগে শোকজ খেলেন-ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক

হারুন-অর-রশিদ বাবু, বিশেষ প্রতিনিধি

রংপুর সদর উপজেলাধীন আফান উল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শাহীন বাদশাহ দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা বিদ্যালয় পরিদর্শক প্রফেসর আবু হেনা মোস্তফা কামাল এর স্বাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া চিঠি উপস্থাপন করে, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিয়োগে বাধার সৃষ্টি করার পাশাপাশি ঐতিহ্যবাহী এ প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অভিযোগে, তাকে শোকজ করেছে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড। বোর্ডের সরকারি ওয়েব সাইটে প্রকাশিত কারণ দর্শানোর নোটিশ সুত্রে জানাযায়, গত ১৪ নভেম্বর ২৩ইং তারিখে আফান উল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয়ের

প্রধান শিক্ষক নিয়োগ স্থগিত সংক্রান্ত একটি চিঠি উপস্থাপন করেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক  শাহীন বাদশাহ। যে চিঠিকে ইস্যু করে একটি সংবাদ সম্মেলন করেন অভিভাবক সদস্যরা। এতে করে বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এবং সেই চিঠির অনুলিপি সহ একটি অভিযোগ দাখিল হয়েছে। বোর্ড কতৃপক্ষ নথিপত্র ও স্মারক বই যাছাই করে ১৪ নভেম্বর ২৩ইং তারিখে অত্র বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিয়োগ স্থগিত সংক্রান্ত সেই চিঠির কোন অস্তিত্ব খুঁজে পায়নি। স্মারক-২/এস/০২/৩৯২(৬) তারিখ ২৭-১২-২০২৩ইং বোর্ড চেয়ারম্যানের আদেশক্রমে ৭দিনের মধ্যে সন্তোষজনক জবাব চেয়ে নোটিশ জারি করেন, বিদ্যালয় পরিদর্শক প্রফেসর আবু হেনা মোস্তফা কামাল। ৪ জানুয়ারি ২৪ইং জবাবের শেষ তারিখ হলেও নোটিশের জবাবের বিষয় এখনো কিছু জানা যায়নি।  স্বাক্ষরসহ চিঠি জালিয়াতির বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যালয় পরিদর্শক প্রফেসর আবু হেনা মোস্তফা কামাল প্রতিবেদককে বলেন, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শাহীন বাদশাহ ৪ জানুয়ারি ২৩ইং বোর্ডে এসেছে তবে আমার সামনে আসেনি। কি জবাব দিয়েছে সেটা এখনো হাতে পাইনি, জবাব পেলে বিস্তারিত বলতে পারবো। অভিযোগকারী বিদ্যালয়ের অভিভাবক সদস্য শাহাদাৎ হোসেন লিখন বলেন, ১৯০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এ বিদ্যালয়ের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্বে আছেন সহকারী প্রধান শিক্ষক শাহীন বাদশাহ। সম্প্রতি গত ৩১ আগষ্ট ২৩ইং স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির নিয়মিত সভায় সর্বসম্মতিক্রমে প্রধান শিক্ষক নিয়োগের গৃহীত সিদ্ধান্ত মোতাবেক, ৯ সেপ্টেম্বর ২৩ইং দৈনিক মানব জমিন এবং দৈনিক যুগের আলো পত্রিকায় প্রধান শিক্ষক নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে রুপালী ব্যাংক লি: মাহিগঞ্জ শাখা রংপুর এর অনুকূলে, ২০০০ টাকা (অফেরতযোগ্য) ব্যাংক ড্রাফট/ পে অর্ডারসহ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ১৫ দিনের মধ্যে সভাপতি বরাবর আবেদন করার আহবান করা হয়। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর ১১ জন চাকুরী প্রত্যাশীর আদেবন গ্রহণ করেন সভাপতি শামসুল আলম বাবু। এবং স্কুলের ফান্ড থেকে বিজ্ঞপ্তির বিল পরিশোধ করেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শাহীন বাদশাহ। বিধি মোতাবেক নিয়োগ বোর্ড গঠন সংক্রান্ত আলোচনার একপর্যায়ে ২২ নভেম্বর ২৩ইং ম্যানেজিং কমিটির নিয়মিত সভায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শাহীন বাদশাহ, দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা বিদ্যালয় পরিদর্শক প্রফেসর আবু হেনা মোস্তফা কামাল স্বাক্ষরিত একটি চিঠি দেখিয়ে বলেন, প্রধান শিক্ষক নিয়োগ স্থগিত করতে আদেশ দিয়েছে শিক্ষা বোর্ড। উক্ত সভায় প্রধান শিক্ষক নিয়োগের স্থগিতাদেশটি স্কুলের অফিস সহকারী মোক্তার হোসেন মনু মিটিংয়ে উপস্থিত সকলের সামনে ৩ বার পাঠ করে শোনালে, ম্যানেজিং কমিটি সহ সাধারণ শিক্ষকদের মনে সন্দেহের উদ্রেক হয়। পরে কমিটির সভাপতি শামসুল আলম বাবু চিঠির সত্যতা যাছাই করতে দুইজন অভিভাবক সদস্যকে দিনাজপুর বোর্ডে পাঠান। অভিভাবক সদস্যরা বোর্ডে গিয়ে বিদ্যালয় পরিদর্শকের মুখোমুখি হলে, প্রায় সারে তিন ঘন্টাব্যাপী অনুসন্ধান শেষে বিদ্যালয় পরিদর্শক প্রফেসর আবু হেনা মোস্তফা কামাল অভিভাবক সদস্য শাহাদাৎ হোসেন লিখন ও মকবুল হোসেনকে নিশ্চিত করেন ১৪ নভেম্বর ২০২৩ইং আফান উল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিয়োগ স্থগিত সংক্রান্ত কোন চিঠিতে তিনি স্বাক্ষর করেনি। তার স্বাক্ষর জাল করে ভুয়া চিঠি উপস্থাপন করেছে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। এবং বিদ্যালয় পরিদর্শক আমাদের সামনেই স্কুল কমিটির সভাপতি শামসুল আলম বাবুকে মুঠোফোনে,ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শাহীন বাদশার দূর্ণীতি বন্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দেন। সভাপতি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শাহীন বাদশার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা থাকলেও অদৃশ্য কারণে কালক্ষেপণ করতে থাকেন। এবং ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক প্রশিক্ষণের অজুহাতে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকেন। এরই একপর্যায়ে ২১ ডিসেম্বর ২৩ইং দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর এবং ২৪ ডিসেম্বর রংপুর বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, এডিসি শিক্ষা, মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর রংপুর বিভাগ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও সদর রংপুর সহ শিক্ষা সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের নিকট গণস্বাক্ষরসহ লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি। অভিযোগ তদন্ত হলে অবশ্যই সত্য বেরিয়ে আসবে। আমরা সত্যটা জানতে চাই, শুন্য পদে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ হলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শাহীন বাদশার সমস্যা কোথায়? সেটি আমাদের বোধগম্য নয়।

অপরদিকে ২৮ ডিসেম্বর ২৩ইং অত্র বিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রতিনিধিরা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রংপুর অঞ্চল এবং সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শাহীন বাদশাহ কতৃক ভুয়া চিঠি উপস্থাপনের মাধ্যমে ঐতিহ্যবাহী এ বিদ্যাপীঠের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে বলেও জানা যায়। ভুয়া চিঠির বিষয়ে জানতে চাইলে, অধিকাংশ সাধারণ শিক্ষক প্রতিবেদককে বলেন, আমরা লজ্জিত; বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শাহীন বাদশাহ, ভুয়া চিঠি উপস্থাপন করে আমাদেরকে চরম লজ্জ্বায় ফেলে দিয়েছে। তিনি চিঠি জালিয়াতি করে ছুটির নামে স্কুলে আসা বন্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু সাধারণ শিক্ষকরা, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয়দের স্কুল সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাব দিতে পারছি না! নামপরিচয় গোপন রাখার শর্তে একাধিক শিক্ষক প্রতিবেদককে বলেন, শাহীন বাদশাহ তার অপতৎপরতা চালাতে গিয়ে নির্বাচিত কমিটি ভাঙ্গার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে।  তিনি ভুয়া চিঠি উপস্থাপন করে ধরা খাওয়ার কারণে ‘উৎসব মুখোর পরিবেশে অনুষ্ঠিত ভোটে নির্বাচিত কমিটি ভেঙ্গে দিয়েছে! যাতে করে তার বিরুদ্ধে কেউ আইনত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে না পারে। শিক্ষকরা আরও বলেন, সদ্য পদত্যাগকারি সভাপতি শামসুল আলম বাবু মাহিগঞ্জের সর্বজন শ্রদ্ধেয় একজন নির্লোভ মানুষ। তাকে ভুলভাল বুঝিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ করছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শাহীন বাদশাহ।

চিঠি জালিয়াতি বাংলাদেশের দণ্ডবিধি পেনাল কোড-১৮৬০ এর ৪৬৩ ধারায় একটি ফৌজদারি অপরাধ। আইনানুগভাবে মোট পাঁচ ধরনের কাজকে জালিয়াতি হিসেবে গণ্য করা হয়। তন্মধ্যে সরকারি চিঠি এবং কর্মকর্তার স্বাক্ষর জালিয়াতি গুরুতর অপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে। এ অপরাধের শাস্তি দুই বছর কারাদণ্ড বা উভয় দন্ড। কিন্তু, জালিয়াতি যদি প্রমাণিত হয় আদালতের নথিপত্র বা সরকারের রেজিস্টার প্রভৃতিতে, সেই ক্ষেত্রে সেটি হচ্ছে সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ড হতে পারে। যেমনটা অভিযোগ দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা বিদ্যালয় পরিদর্শকের স্বাক্ষর ও চিঠি জালিয়াতির। ইতিপূর্বে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শাহীন বাদশার নিকট অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিদ্যালয় পরিদর্শক প্রফেসর আবু হেনা মোস্তফা কামাল, আমাকে পরামর্শ দিয়েছে মামলা করার জন্য! আমি এখনো মামলা করিনি, কারণ মামলা করে লাভ কি বলেন? তিনি আরও বলেন, প্রধান শিক্ষকের চেয়ার ভদ্রলোকদের জন্য নয়। এ চেয়ার মিথ্যাচার করতে শেখায়, এ চেয়ারে বসলে মিথ্যা কথা বলতেই হয়। সর্বশেষ নোটিশের বিষয় জানতে  ৪জানুয়ারি ২৪ইং সারাদিনে, আফান উল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয়ের ওয়েব সাইটে দেয়া সরকারি ফোন নাম্বারে, অসংখ্যবার কল দিলেও তিনি ফোন ধরেনি বলে নোটিশের বিষয় তার সু-স্পষ্ট বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

ধারাবাহিক প্রতিবেদনের পরবর্তী পর্বে থাকছে আরও বিস্তারিত।