রকমারী

শাবান : রমজানের আগমনী বার্তা দেয় যে মাস

আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে আছে, নবী (সা.) রমযান ছাড়া শাবান মাসে সর্বাধিক রোযা রাখতেন। আয়েশা (রা.) বলেন : আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে রমযান ছাড়া অন্য কোনো মাসে পূর্ণ মাস রোযা রাখতে দেখিনি। আর আমি তাঁকে (রমযান ছাড়া) শাবান মাস অপেক্ষা অধিক রোযা রাখতে আর কোনো মাসে দেখিনি। (সহীহ বুখারী : ১৯৬৯)।

আয়েশা (রা.) থেকেই বর্ণিত অপর এক হাদিসে আছে : রোযা রাখার জন্য নবী (সা.)-এর কাছে সর্বাধিক প্রিয় মাস ছিল শাবান মাস। (মুসনাদে আহমাদ : ২৫৫৪৮)। এ হাদিসদ্বয় বলছে, রোযা রাখার জন্য নবী (সা.)-এর কাছে শাবান মাস সর্বাধিক প্রিয় ছিল, তাই তিনি রমযান মাস ব্যতীত এ মাসেই সবচেয়ে বেশি রোযা রাখতেন। কিন্তু কেন তিনি শাবান মাসে এতো বেশি রোযা রাখতেন?

এর উত্তর পাওয়া যাবে উসামা বিন যায়েদ (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে। ওই হাদিস থেকে শাবান মাসের গুরুত্ব ও তাৎপর্যের বিষয়টিও পরিষ্কার হয়ে যাবে। উসামা বিন যায়েদ (রা.) বলেন : নবী (সা.) (রমযান ছাড়া) শাবান মাসে যতো রোযা রাখতেন অন্য কোনো মাসেই এতো রোযা রাখতেন না। উসামা বিন যায়েদ (রা.) বলেন, আমি (একবার) বললাম : আমি আপনাকে কোনো মাসেই এতো রোযা রাখতে দেখিনি, শাবান মাসে আপনি যতো রোযা রাখেন?

এ প্রশ্নের উত্তরে নবীজী (সা.) বলেন : শাবান হলো রজব ও রমযানের মধ্যবর্তী মাস। এ মাস সম্পর্কে (অর্থাৎ এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য সম্পর্কে) মানুষ গাফেল থাকে। শাবান হলো এমন মাস, যে মাসে রব্বুল আলামীনের কাছে (বান্দার) আমল পেশ করা হয়। আমি চাই, রোযাদার অবস্থায় আমার আমল (আল্লাহর দরবারে) পেশ হোক। (মুসনাদে আহমাদ : ২১৭৫৩)।

শাবান মাসের প্রতি নবী (সা.) কেন এতো গুরুত্বারোপ করতেন, এই হাদিসে তিনি তা খুলে বলেছেন। তাঁর কথার মর্ম হলো, এই মাসে বান্দার আমল আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয়। কাজেই এ মাসটি গুরুত্বের দাবিদার। তাছাড়া সামনে রমযান আসছে, ফযীলতপূর্ণ মাস হিসেবে রমযানকে গুরুত্ব প্রদান করা হয়। শাবান মাসের আগে রজব মাস আছে, রজব মাস পবিত্র চার মাসের একটি, তাই রজব মাসকেও গুরুত্ব প্রদান করা হয়।

মাঝখানে শাবানের ব্যাপারে গাফলতি হয়ে যায়। নবী (সা.) সতর্ক করলেন যে, দেখো, একটি বিশেষ দৃষ্টিকোণ থেকে এই মাসটিও গুরুত্বের দাবিদার। এ মাসে বান্দার গোটা বছরের আমলনামা আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয়। তাই শাবান আল্লাহর দরবারে আমলনামা পেশ হওয়ার মাস। কাজেই এই মাসেরও যথাযথ কদর করা চাই। এ কারণেই আমি এ মাসে এতো রোযা রাখি।

ইমাম ইবনে রজব (রাহ.) এই হাদিস সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে একটি গভীর বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। তিনি বলেছেন, (মর্ম) : এই হাদিসে এই ইঙ্গিত রয়েছে যে, কখনো কোনো একটা সময়, ব্যক্তি বা স্থানের ফযীলত প্রসিদ্ধ হয়ে যায়, তখন সবাই সেই প্রসিদ্ধ স্থান, কাল, পাত্র নিয়েই ব্যস্ত থাকে। অথচ ভিন্ন বিবেচনায় অন্য কোনো স্থান, কাল, পাত্র সেই প্রসিদ্ধ স্থান, কাল, পাত্রের চেয়েও উত্তম হতে পারে। কিন্তু অনেকে সেদিকে লক্ষ্য করে না। (লাতায়েফুল মাআরিফ, পৃ.-২৫১)।

সুতরাং একাধিক ফযীলতের কারণে যেভাবে রমযান মাসকে গুরুত্ব প্রদান করা হয় এবং পবিত্র মাস হিসেবে আশহুরে হুরুম বা পবিত্র চার মাসকে যেভাবে গুরুত্ব প্রদান করা হয়, তেমনি সারা বছরের আমলনামা পেশ হওয়ার মাস হিসেবে শাবান মাসকেও যথাযথ গুরুত্ব প্রদান করা কর্তব্য। আর এই গুরুত্ব প্রদান করার উপায় হলো, সবধরনের গুনাহ থেকে বেঁচে থেকে নেক আমলের প্রতি যত্নবান হওয়া। শাবান মাসের অধিকাংশ দিন রোযা রেখে নবী (সা.) উম্মতকে এই নির্দেশনাই দিয়ে গেছেন।

প্রসঙ্গত, এখানে উল্লেখ করে দেয়া প্রয়োজন, সহীহ হাদিসে আছে, আল্লাহর দরবারে প্রতিদিন বান্দাদের আমলনামা পেশ করা হয়। দিনের আমলনামা রাতে আর রাতের আমলনামা দিনে পেশ করা হয়। (দ্র. সহীহ মুসলিম : ১৭৯) এটি হলো প্রতিদিনের আমলনামা। অপর একটি সহীহ হাদিসে আছে যে, সপ্তাহে সোমবার ও বৃহস্পতিবার আমলনামা পেশ করা হয়। (দ্র. সহীহ মুসলিম : ২৫৬৫)। এটি হলো সাপ্তাহিক আমলনামা। আর একবার পেশ করা হয় বাৎসরিকভাবে। সেটা হলো শাবান মাসে। এখানে সেটার কথাই বলা হয়েছে। (দ্র. লাতায়েফুল মাআরেফ, পৃ.-২৪৪)।

উপরিউক্ত বর্ণনাসমূহ থেকে স্পষ্ট যে, নবী (সা.) আল্লাহর দরবারে আমলনামা পেশ করা হবে, এ বিষয়টির প্রতি গুরুত্বারোপ করে শাবান মাসে সর্বাধিক রোযা রাখতেন। তাই শাবান মাসে অন্যান্য নেক আমলের পাশাপাশি সামর্থ্য অনুযায়ী রোযা রাখার চেষ্টা করা কর্তব্য। কিন্তু রোযা রাখবে শাবান মাসের ২৭ তারিখ পর্যন্ত। হাদিসে রমযানের এক-দুই দিন আগে রোযা রাখতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। (দ্র. সহীহ বুখারী : ১৯১৪)।