লিটন-মেহেদির ব্যাটে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক জয়
দুর্দান্ত বোলিংয়ে জয়ের পথ রচনা করে দিয়েছিলেন শরিফুল ইসলাম, মেহেদি হাসান, মুস্তাফিজুর রহমানরা। ব্যাট তাতে নেতৃত্ব দিলেন লিটন কুমার দাস। কঠিন সময়ে ব্যাট হাতেও অবদান রাখলেন মেহেদি। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে তিন সংস্করণেই জয়ের বৃত্ত পূরণ করল বাংলাদেশও।
তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে নেপিয়ারে বুধবার কিউইদের ৫ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে হারিয়েছে বাংলাদেশ।
২ চার ও ১ ছক্কায় ৩৬ বলে ৪২ রানে অপরাজিত থেকেছেন লিটন। মেহেদি করেছেন ১টি করে চার-ছক্কায় ১৬ বলে ১৯ রান। ২৫ বলে ৪০ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে হঠাৎ চাপে পড়া দলকে উদ্ধার করেন তারাই।
শরিফুল ইসলাম ও মেহেদি হাসানের বোলিংয়ে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৩৪ রান করতে পারে নিউজিল্যান্ড। জবাবে ৮ বল হাতে রেখে লক্ষ্য পূরণ করে নাজমুল হোসেন শান্তর নেতৃত্বাধীন দলটি।
ক্রিকেটের সবচেয়ে এলিট ও কঠিনতম সংস্করণে টেস্ট জয়ের মধ্য দিয়ে নিউজিল্যান্ডে জয়ের নিশানা উড়িয়েছিল বাংলাদেশ। চলতি সফরে ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচে মেলে এক দিনের ক্রিকেটেও জয়ের দেখা। এবার টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট দিয়ে নিউজিল্যান্ডে জয়ের বৃত্ত পূরণ করল টাইগাররা। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টি-টোয়েন্টিতে দশম ম্যাচে এসে প্রথম জয় বাংলাদেশের।
শেষ দুই ওভারে দরকার ছিল ১০ রান। মিলনেকে মেহেদীর ছক্কা কাভারের ওপর দিয়ে। এরপর দুই। পরের বলেই চার হাঁকিয়ে ঐতিহাসিক জয় নিশ্চিত করেন মেহেদি। বল হাতে ৪ ওভারে এই অফ স্পিনার মেহেদি ২ উইকেট নেন স্রেফ ১৪ রানের খরচায়।
দুর্দান্ত বোলিং করেন শরিফুলও। ৪ ওভারে ২৬ রানে এই পেসার নেন ৩ উইকেট। মুস্তাফিজুর রহমান ৪ ওভারে ১৫ রান দিয়ে ২টি শিকার ধরেন।
মামুলি লক্ষ্যে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারালেও বড় জয়ের পথেই ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ১ রানের ব্যবধানে তাওহিদ হৃদয় ও আফিফ হোসেনকে হারিয়ে চাপে পড়ে যায় দল। ৩ উইকেটে ৯৬ রান থেকে মুহূর্তেই ৯৭ রানে হয়ে যায় ৫ উইকেট! তবে আস্থার প্রতীক হয়ে তখনও ব্যাটিংয়ে ছিলেন লিটন।
রান তাড়ায় ১৩ রানে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে উইকেট বিলিয়ে আসেন রনি তালুকদার। ৭ বলে ১০ রান করেন এই ওপেনার। চার মারতে গিয়ে এক্সট্রা কাভারে ক্যাচ দেন শান্ত। বিপজ্জনক হয়ে ওঠার আভাস দিয়ে অধিনায়ক থামেন ১৪ বলে ১৯ রান করে দলীয় ৩৮ রানে।
১৫ বলে ২২ রানের ভালো শুরুর পর আড়াআড়ি ব্যাট চালিয়ে বোল্ড হন সৌম্য সরকার। ৬৭ রানে তৃতীয় উইকেট হারায় দল। তাওহিদও আউট হন থিতু হয়ে। কাভারে ক্যাচ দেওয়ার আগে করেন ১৮ বলে ১৯ রান। পরের ওভারে শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে টাইমিং গড়বড়ে শর্ট মিড উইকেটে ক্যাচ দেন আফিফ।
জয়ের জন্য যখন দরকার ৩০ বলে ৩৭ রান তখন রিভিউ নিয়ে বাঁচেন লিটন। শেষ পর্যন্ত দলের জয়ে সবচেয়ে বড় অবদান তারই।
এই মাঠেই সিরিজের শেষ ওয়ানডে ৯৮ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল স্বাগতিকেরা। আজ ১ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলে তারা। মেহেদী, শরীফুল ও মোস্তাফিজ ছিলেন দুর্দান্ত। তিন জনের ১২ ওভারে ৫৫ রান তুলতে ৭ উইকেট হারিয়েছে নিউজিল্যান্ড।
এই সংস্করণে অভিষেকে ৪ ওভারে ৪৫ রানের খরচায় ১ উইকেট নেন তরুণ পেসার তানজিম হাসান সাকিব।
নেপিয়ারের ম্যাকলিন পার্কে বুধবার টস জিতে বোলিং বেছে নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। তার সিদ্ধান্তকে যথার্থ প্রমাণ করতে একদম সময় নেননি বোলাররা। প্রথম ওভারেই টিম সাইফার্টকে বোল্ড করে দেন স্পিনার মেহেদি। পরের ওভারে টানা দুই বলে ফিন অ্যালেন ও গ্লেন পিলিপসকে শিকারে পরিণত করেন শরিফুল। ১ রানে ৩ উইকেট হারায় কিউইরা।
২০ রানের মাথায় ড্যারেল মিচেলকেও বোল্ড করে দেন মেহেদি। প্রবল চাপে থাকা দলকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন মার্ক চাপম্যান ও জেমি নিশাম। প্রথমে বোলিংয়ে এসেই ৩০ রানের জুটি ভাঙেন রিশাদ হোসেন। ১৯ বলে ১৯ রান করা চ্যাপম্যানকে এক্সট্রা কাভারে ক্যাচ বানান রিশাদ।
দ্বিতীয় স্পেলে বোলিংয়ে এসে অধিনায়ক মিচেল স্যান্টারকে (২২ বলে ২৩) মিড অনে সৌম্য সরকারের ক্যাচ বানিয়ে ৪১ রানের জুটি ভাঙেন শরিফুল। ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা নিশামের উইকেট যায় মুস্তাফিজুর রহমানের ঝুলিতে।
গ্যালারির ছাদে বল পাঠানোর পরের বলেই কাভার পয়েন্টের সীমানায় আফিফের হাতে ধরা পড়েন নিশাম। ২৯ বলে ৪৮ রান করে থেমেছেন তিনি। অ্যাডাম মিল্ন ১২ বলে ১৬ রানে অপরাজিত থাকেন।
সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে আগামী শুক্রবার মাউন্ড মঙ্গুনুইয়ে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউজিল্যান্ড: ২০ ওভারে ১৩৪/৯ (অ্যালেন ১, সাইফার্ট ০, মিচেল ১৪, ফিলিপস ০, চ্যাপম্যান ১৯, নিশাম ৪৮, স্যান্টনার ২৩, মিল্ন ১৬*, সাউদি ৮, সোধি ২, সিয়ার্স ১*; মেহেদি ৪-০-১৪-২, শরিফুল ৪-০-২৬-৩, তানজিম ৪-০-৪৫-১, মুস্তাফিজ ৪-০-১৫-২, রিশাদ ৩-০-২৪-১, আফিফ ১-০-৯-০)।
বাংলাদেশ: ১৮.৪ ওভারে ১৩৭/৫ (লিটন ৪২*, রনি ১০, শান্ত ১৯, সৌম্য ২২, হৃদয় ১৯, আফিফ ১, মেহেদি ১৯*; সাউদি ৪-০-১৬-১, মিল্ন ৩.৪-০-৩৯-১, নিশাম ১-০-৭-১, সিয়ার্স ৪-০-৩৬-১, সোধি ২-০-২০-০, স্যান্টনার ৪-০-১৬-১)।
ফল: বাংলাদেশ ৫ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ: তির ম্যাচ সিরিজে বাংলাদেশ ১-০তে এগিয়ে।