লালমনিরহাটে হলুদ সরিষা ফুলে ভরা ফসলের মাঠ
লালমনিরহাট প্রতিনিধি : জেলার বিভিন্ন এলাকায় হলুদ সরিষা ফুলে ভরা ফসলের মাঠ দেখে কৃষকের মুখেও ফুটেছে হাসি। শীতের হিমেল বাতাসে দোল খাচ্ছে হলুদ সরিষার ফুল। দেখে মনে হয় যেন প্রকৃতি সেজেছে হলুদের সাজে। ফুলের মৌ মৌ গন্ধ, আর মৌমাছির গুঞ্জন মনকে বিমোহিত করে। এ দৃশ্য দেখে দুচোখ ফিরিয়ে নেওয়া হয়ে পড়ে কষ্টসাধ্য।
গত বছরের তুলনায় এবার বেড়েছে সরিষার চাষ। ভোজ্য তেলের দাম ও চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষকরা সরিষা চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাম্পার ফলনের আশাও করছে কৃষি বিভাগ।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, আবাদি জমিগুলো ছেয়ে গেছে হলুদ সরিষার রঙে।
লালমনিরহাট সদরের কুলাঘাট ইউনিয়ন, বড়বাড়ি, মোগলহাট, মহেন্দ্রনগর, খুনিয়াগাছ, রাজপুর, হারাটি, গোকুন্ডা ও পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় সরিষার হলুদ ফুলে ছেয়ে গেছে মাঠ। দেখে মনে হয়ে হলুদ চাদরের বিছানা। এ সময় ছোট থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সের ছেলে মেয়েদের দেখা যায় সরিষা ফুলের মাঠের ছবি তুলতে।
জেলায় গত বছর সরিষার ফলন ভালো হয়েছে। তাই কম খরচে বেশি ফলনের আশায় এ বছরও চাষাবাদ করেছেন কৃষকেরা। উঁচু জমিতে আবাদ করা ধান গোলায় তুলে সরিষার বীজ বপন করেছিলেন। আর কিছুদিন পরই এ শস্য ঘরে তুলতে পারবেন কৃষকরা।
সদর উপজেলার কুলাঘাট ইউনিয়নের সাকোয়া গ্রামের কৃষক রুহুল আমিন বাসসকে বলেন, গত বছর সরিষার ভালো ফলন হয়েছে। এবারও সরিষা চাষ করেছি। কৃষি অফিস থেকে সরকারি প্রণোদনায় ভালো বীজ ও সার পেয়েছি। কৃষি কর্মকর্তারা আমাদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে হাতেকলমে দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। আমরা আশাবাদী এবার বাম্পার ফলন হবে। গত বছরের চেয়ে এবার আবহাওয়া অনুকূলে রয়েছে।
সরিষা ক্ষেত দেখতে আসা রিয়াজুল ইসলাম (২৭) ও আলী হোসেন (৩০) বলেন, চলতি শীতের মৌসুমে মাঠে মাঠে সবুজের ডগায় সরিষা ফুলের সমারোহ দেখে মন ছুঁয়ে যায়। মৌ মৌ ঘ্রাণ, বিভিন্ন প্রজাতির প্রজাপতি, মৌমাছি, ভ্রমর এবং পাখির কলরবে মনোমুগ্ধকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। ফুলের সৌন্দর্য দেখতে আর সুবাস নিতে এসেছি। ছবিও তুলেছি। সরিষা লাভবান ফসল। কম খরচে বেশি লাভ হয়।
কুলাঘাট ইউনিয়নের কৃষক মনসুর আলী (৪৭) বলেন, চরের জমিতে সরিষার আবাদ ভালো হয়। আমার প্রায় প্রতিবছরে সরিষা আবাদ করি। এ বছর সরিষার ভালো দাম থাকায় ৪ বিঘা সরিষা আবাদ করেছি। ফলনও ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
লালমনিরহাট সদরের উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা খন্দকার সোহায়েল আহমেদ বাসসকে বলেন, সরিষা চাষে লাভ হওয়ায় দিন দিন সরিষা চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ভালো ফলন হবে বলে আশা করছি। এ লক্ষ্যে কৃষি বিভাগ কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান ও সহযোগিতা করছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. সাইফুল আরিফিন বাসসকে বলেন, চলতি মৌসুমে জেলায় ২ হাজার ৩৭০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। সরিষা আবাদে উদ্বুদ্ধ করতে সরকারিভাবে কৃষি বিভাগ থেকে কৃষককে প্রণোদনা হিসেবে ১ কেজি করে সরিষা বীজ, ডিইপি সার ১০ কেজি, এমওপি সার ১০ কেজি দেওয়া হয়েছে। কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে বিনা চাষে সরিষা আবাদ সারাদেশে কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে পড়বে এমনটাই বলছেন তিনি।