লালমনিরহাটে স্বাস্থ্যকর শহুরে গ্রাম কর্মসূচী মেলা অনুষ্ঠিত
এস বাবু রায়, লালমনিরহাট জেলা প্রতিনিধি।। লালমনিরহাট জেলার সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নে ফুটবল মাঠে “হেলদি ভিলেজ ইন আরবান প্রোগ্রাম (স্বাস্থ্যকর শহুরে গ্রাম কর্মসূচী)” উদ্যোগে এক বিশেষ মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ম্যাক্স ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ-এর এই কর্মসূচি কানাডা সরকারের আর্থিক সহায়তায় গ্র্যান্ড চ্যালেঞ্জ কানাডার মাধ্যমে দুপুর ২টা থেকে শুরু হয়ে রাত ৮টা পর্যন্ত এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়।
এই প্রকল্পে হেলদি ভিলেজ ইন আরবান প্রোগ্রাম” ২০২২ সাল থেকে লালমনিরহাটের ছয়টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় বাস্তবায়িত হচ্ছে। ২০২৬ সাল পর্যন্ত চলমান এই প্রকল্পের লক্ষ্য হলো ১,৫৭,০০০ পরিবারের জীবনমান উন্নত করা এবং প্রতিবন্ধী অন্তর্ভুক্তিমূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে শিশুদের খর্বতা হারের হ্রাস নিশ্চিত করা। মেলার এই সফল আয়োজন জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে ভূমিকা রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন আয়োজকরা।
মেলায়স্থানীয় জনগণ, সরকারি কর্মকর্তা, জন প্রতিনিধি, শিক্ষার্থী, এই প্রকল্পের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা বৃন্দ এবং স্থানীয় উদ্যোক্তারা অংশ নেন। দিনব্যাপী এই আয়োজনের মূল আকর্ষণ ছিল চিত্রাঙ্কন প্রদর্শনী, স্কুল শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে “তরুণদের চোখে আদর্শ গ্রাম” শীর্ষক চিত্র প্রদর্শনী, স্বাস্থ্যসেবা ক্যাম্প, অস্থায়ী ক্যাম্পের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের জন্য বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা, উদ্যোক্তা পণ্য প্রদর্শনী, নারী উদ্যোক্তাদের স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সংশ্লিষ্ট পণ্য প্রদর্শন ও বিপণন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, স্থানীয় শিল্পীদের পরিবেশনায় স্বাস্থ্যসেবা, পুষ্টি ও স্যানিটেশন বিষয়ক জনসচেতনতামূলক নাটিকা। মেলার মাধ্যমে স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে স্বাস্থ্য, পুষ্টি এবং স্যানিটেশনের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন করা হয়। এছাড়া, উঠান সভা এবং হাটবাজার প্রচারণার মাধ্যমে জনগণকে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য উৎসাহিত করা হয়েছে।
মেলা চলাকালীন এক আলোচনা সভায় মোগলহাট ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য নূর আলম মিয়া বলেন, “এই মেলার আয়োজন আমাদের ইউনিয়নের মানুষের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ ধরনের উদ্যোগ শুধু জনগণের সচেতনতা বাড়িয়েই থেমে থাকে না, এটি তাদের জীবনমান উন্নত করতে কার্যকর ভূমিকা রাখে। আমি বিশ্বাস করি, এই প্রকল্প আমাদের এলাকার মানুষের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ।”
প্রকল্প ব্যবস্থাপক ও বাস্তবায়ন সহযোগী সংস্থ্যা ইকো-সোশ্যাল ডেভলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও) এর প্রকল্প ব্যবস্থাপক মোঃ মাসুদ রানা বলেন, “একটি সুস্থ শিশু আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ। এই শিশুটির সম্পূর্ণরূপে বেড়ে উঠা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে তাকে খর্বকায় মুক্ত করার জন্য আমরা কাজ করছি। আমাদের স্বাস্থ্যকর গ্রাম কর্মসূচীর মাধ্যমে আমরা একটি শিশুর
চারিপাশের ৩৬০ ডিগ্রি স্বাস্থ্যাভাস, পুষ্টি, নিরাপদ পানি এবং স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করনের মাধ্যমে শিশু খর্বকায় হার কমানোর জন্য কাজ করে যাচ্ছি। এই মেলা স্বাস্থ্য, পুষ্টি এবং স্যানিটেশনের প্রতি জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তনের সূচনা।”
মেলায় আগত স্থানীয় এক দর্শনার্থী তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “এমন উদ্যোগ আমাদের জীবনে নতুন দিশা দেখাচ্ছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে আমি আমার সন্তানের ওজন উচ্চতা মাপার গুরুত্ব সম্পর্কে বুঝতে পেরেছি, ওর নিয়মিত খাবারের ধরণ সম্পর্কেও জানতে পেরেছি এবং পরিবারে স্বাস্থ্যকর অভ্যাস চালু করার অনুপ্রেরণা পেয়েছি।” মেলা চলাকালীন এক আলোচনা সভায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার জান্নাত আরা ফেরদৌস বলেন, “এই ধরনের মেলা জনগণকে সম্পৃক্ত করে আয়োজন করা খুবই ইতিবাচক একটি কার্যক্রম। এর মাধ্যমে জনসাধারণ সচেতন হবে এবং তারা সমাজের শিশুর সার্বিক উন্নয়নে অবদান রাখতে সক্ষম হবে। এই প্রকল্পের কার্যক্রমের মাধ্যমে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে বলে আমি আশা করি’’।