রংপুরে মাহিনের দাফন সম্পন্ন, জানাজায় মানুষের ঢল
নগর প্রতিবেদক :
গাজীপুরে পিকনিকের বাসে বিদ্যুতায়িত হয়ে নিহত আইইউটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী মুবতাসিম রহমান মাহিন (২২) দাফন সম্পন্ন হয়েছে। মাহিনের পরিবারের স্বজন, স্কুল-কলেজের বন্ধুসহ জানাজায় মানুষের ঢল নামে।
রোববার (২৪ নভেম্বর) বাদ জোহর নগরীর জুম্মাপাড়া নুরুল উলুম করিমিয়া মাদরাসায় বাদ জোহর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে রংপুর নগরীর মুন্সিপাড়া কবরস্থানে দাফন করা হয়।
এর আগে, মুবতাসিম রহমান মাহিনের লাশ নিয়ে রাত দেড়টার দিকে বাড়িতে পৌছান তার বাবা ইমতিয়াজুর রহমান ইমন। সেখানে আগে থেকেই অপেক্ষায় ছিল এলাকাবাসাী ও পরিবারের অন্যান্য লোকজন। লাশ জুম্মাপাড়ার বাসায় পৌঁছালে সেখানে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। লাশবাহী গাড়ির শব্দ মায়ের কানে পৌছায় মা দৌড়ে এসে গাড়িতে দেখে তার ছেলে ঘুমিয়ে আছে। যে ঘুম থেকে আর উঠবে না কখনও। এসময় মায়ের আর্তনাদ সবারই চোখের জল গড়িয়ে পরে। মা জানতো না তার ছেলে মারা গেছে। মা জানতো তার ছেলে অসুস্থ্য। মায়ের কান্নায় এলাকার পরিবেশ ভারি হয়ে যায়। এসময় এলাকার মানুষজনও কান্না ধরে রাখতে পারেনি।
শেষ বিদায়ের গোসল শেষে আবারও রাখা হয় মাহিনের লাশ রংপুর সিটি কর্পোরেশনের ফ্রিজিংবাহী এ্যাম্বুলেন্সে। একেবারে বাড়ির সামনেই রাখা হয়। সকাল থেকেই এলাকাবাসী, আত্মীয় স্বজন শেষ বিদায় বেলায় এক নজর দেখে নেন কারও আদরের, কারও স্নেহের মাহিনকে। চোখের দেখা দেখে অনেকেই চোখ মুছতে মুছতে সেখান থেকে চলে যান।
নিহত মুবতাসিম রহমান মাহিন গাজিপুরে অবস্থিত ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যারিয়ার ইন্ড বিজনেস সোসাইটি বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিল। বাড়ি রংপুর নগরীর জুম্মাপাড়ায়। বাবা ইমতিয়াজুর রহমান ইমন এবি ব্যাংকের সৈয়দপুর শাখার ব্যবস্থাপক। দুই ভাইয়ের মধ্যে মাহিন ছিলো বড়। ছোট ভাই ইহান ৩য় শ্রেণিতে পরে পুলিশ লাইন্স স্কুলে। বাবা-মা ও পরিবারের খুব আদরের ছিল মাহিন। ছোটবেলা থেকেই সে শান্ত স্বভাবের ছিল।
মুবতাসিন রহমান মাহিনের চাচা হাসান রহমান বলেন, মাহিন বাবা ওখানে (আইইউটি) তে ভর্তি হয়েছিল পড়ালেখা শেষ করে দেশের জন্য ভালো কিছু করবে। কিন্তু তাকে ফিরতে হলো লাশ হয়ে এর মতো দুঃখজনক কিছু হতেই পারে না। পিকনিক থেকে সড়ক পর্যন্ত অবহেলা ছিল ব্যবস্থাপনায়। একটা তার ঝুলে পড়বে গায়ের মধ্যে এটা কখনোই মেনে নেওয়া যায় না। এর সুষ্ঠু তদন্ত চাই, শুধু তার ঝুলে থাকা তদন্ত কমিটির গঠন ও বরখাস্তের মধ্য দিয়ে মূল ঘটনা যেন আড়াল করা না হয়। সেই বিষয়টি দেখতে হবে। কার অবহেলার কারণে আমাদের সন্তানকে হারাতে হলো, এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
মাহিনের মৃত্যুর খবর শোনার পর থেকেই ভেঙে পড়েছে ছোটবেলার বন্ধু তাসিম। জানাজা শেষে কান্নাজড়িত কন্ঠে তাসিন বলেন, দেশে কোটাবিরোধী ‘আন্দোলনের সময় প্রায় তিন মাস রংপুরে একসঙ্গে ছিলাম। এরপর পরীক্ষা থাকায় সে ঢাকায় চলে যায়। এরমধ্যে দুই থেকে তিন সপ্তাহ আগে হঠাৎ সে বাড়িতে আসছিল দুইদিনের জন্য। যাওয়ার সময় খুব তাড়াতাড়ি বাড়িতে ফিরবে বলে জানিয়েছিল। বন্ধু আমার ফিরলো তবে লাশ হয়ে। আজকে শেষ বিদায় জানাতে হলো তাকে। যা কল্পনাও করিনি কখনও। আল্লাহ যেন তাকে জান্নাতবাসী করেন।
প্রতিবেশী রফিকুল ইসলাম বলেন, ছেলেটা (মাহিন) খুব শান্ত প্রকৃতির ছিল। সে বাড়ি থেকে খুব কম বের হত। ছেলেটার আকস্মিক মৃত্যুতে আমরা সত্যি শোকাহত। আল্লাহ ভালো ছেলেটাকে এভাবে কেড়ে নিলো। তার জানাজা হলো, দাফন হলো, তারপরও আমরা এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না যে, ছেলেটা আর আমাদের মাঝে নেই।
উল্লেখ্য: শনিবার (২৩ নভেম্বর) সকালে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৬০ জন শিক্ষার্থী বিআরটিসির ডাবল ডেকার বাসে করে উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের উত্তর পেলাইদ গ্রামের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে যাচ্ছিলেন। উদয়খালী বাজারে পৌঁছালে বিআরটিসির একটি ডাবল ডেকার বাস পল্লী বিদ্যুতের তারের স্পর্শ আসে। বাসে বিদ্যুতায়িত হলে প্রাণ হারান তিন শিক্ষার্থী। এরমধ্যে রংপুর নগরীর জুম্মাপাড়ার মুবতাসিম রহমান মাহিন (২২)। অন্য দুইজন হলেন- মোজাম্মেল হোসেন নাঈম (২৪) ও জোবায়ের আলম সাকিব (২২)।