খেলার খবর

রংপুরকে কাঁদিয়ে ফাইনালে বরিশাল

ঘরোয়া ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের জনপ্রিয় টুর্নামেন্ট বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে রংপুর রাইডার্সকে কাঁদিয়ে ফাইনালে জায়গা করে নিলো ফরচুন বরিশাল। গতকাল রাতে মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে তামিম ইকবালের বরিশাল ৬ উইকেটে হারায় সাকিব আল হাসানের রংপুরকে। আগে ব্যাট করে লোয়ার অর্ডার ব্যাটার শামীম হোসেন পাটোয়ারির হার না মানা হাফসেঞ্চুরিতে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৪৯ রান করে রংপুর রাইডার্স। জবাবে মুশফিকুর রহিম, কাইল মায়ার্স, সৌম্য সরকার ও ডেভিড মিলারের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে ১৮.৩ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে ১৫২ রান করে বড় জয় তুলে নেয় ফরচুন বরিশাল। লড়াইটা ছিল মূলত তামিম আর সাকিবের। যেখানে তামিম সফল হলেও পুরোটাই ব্যর্থ ছিলেন সাকিব।

টস জিতে রংপুর রাইডার্সের অধিনায়ক নূরুল হাসান সোহানকে প্রথমে ব্যাটিংয়ে আমন্ত্রণ জানান ফরচুন বরিশালের অধিনায়ক তামিম ইকবাল। ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই চাপে পড়ে রংপুর। বরিশালের পরিকল্পনা ভেস্তে দিতে রনি তালুকদারের সঙ্গে দলের ব্যাটিং উদ্বোধন করতে পাঠানো হয়েছিল মেকশিফট শেখ মেহেদি হাসানকে। কিন্তু মেহেদি সুবিধা করতে পারেননি। ৫ বলে ২ রান করে ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের বলে উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিমকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন এই অলরাউন্ডার। ওই ওভারেই সাইফউদ্দিন তুলে নেন সাকিবের মহাগুরুত্বপূর্ণ উইকেটটি। ৪ বলে মাত্র ১ রান করে সাইফউদ্দিনের সুইংয়ে পরাস্ত হয়ে সাকিবও ক্যাচ দেন উইকেটরক্ষককে। দলের বিপদ আরও বাড়ান রনি তালুকদার। কাইল মায়ার্সকে তুলে মারতে গিয়ে বাউন্ডারিতে ক্যাচ হন তিনি। ফেরার আগে ১২ বলে করেন ৮ রান। মাত্র ১৮ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে রীতিমত ধুঁকতে থাকে রংপুর। ব্যাটিংয়ে নেমে বরিশালের বোলারদের সামনে যেন কাঁপতে থাকেন রংপুরের হার্ডহিটার নিকোলাস পুরানও। রান বের করতে পারছিলেন না তিনি। শেষ পর্যন্ত মেহেদী হাসান মিরাজকে তুলে মারতে গিয়ে সৌম্য সরকারের দারুণ ক্যাচ হয়ে ফেরেন ক্যারিবীয় এই ব্যাটার। ১২ বলে করেন মাত্র ৩ রান। সতীর্থদের এই আসা যাওয়ার মাঝেও বেশ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই খেলছিলেন রংপুরের কিউই অলরাউন্ডার জিমি নিশাম। তবে অতি আত্মবিশ্বাসী হতে গিয়েই যেন বিপদ ডেকে আনেন। জেমস ফুলারের লেগ সাইড দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া বলে ব্যাট চালিয়ে উইকেটরক্ষক মুশফিকের হাতে ধরা পড়েন নিশাম। ২২ বলে চার বাউন্ডারির মারে ২৮ রানে থামেন তিনি। ৪৮ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে খাদের কিনারায় রংপুর। বিপর্যয় সামলানোর চেষ্টা করেছিলেন মোহাম্মদ নবি আর নুরুল হাসান সোহান। ১৫তম ওভারে সেট এ দুই ব্যাটারকেই ড্রেসিংরুমের পথ দেখান জেমস ফুলার। নবি ১৫ বলে ১ চারের মারে ১২ রান করে ক্যাচ তুলে দেন আকাশে আর সোহান ১৭ বলে এক বাউন্ডারিতে ১৪ করে হন বোল্ড। ১৪.৫ ওভারে মাত্র ৭৭ রানে নেই রংপুরের ৭ উইকেট। সেখান থেকে শামীম পাটোয়ারীর অবিশ্বাস্য ব্যাটিং। একটা প্রান্ত ধরে চার-ছক্কার ফুলঝুরি ছোটান এই বাঁহাতি ব্যাটার। শেষ পর্যন্ত ২৪ বলে ৫টি করে চার ও ছক্কায় ৫৯ রানে অপরাজিত থাকেন শামীম। আর আবু হায়দার ৯ বলে এক ছক্কায় খেলেন ১২ রানের অপরাজিত ইনিংস।

ফরচুন বরিশালের জেমস ফুলার ২৫ রানে নেন ৩টি উইকেট। ২৭ রান খরচায় ২ উইকেট শিকার করেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন।

মোটামুটি লক্ষ্য তাড়ায় নেমে শুরু থেকেই মারমুখি ছিলেন বরিশালে দুই ওপেনার মেহেদী হাসান মিরাজ ও তামিম ইকবাল। তবে বেশি দূর যেতে পারেনি এই জুটি। ৩.৩ ওভারে দলীয় ২১ রানে আবু হায়দারের বলে মোহাম্মদ নবিকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন অধিনায়ক তামিম। আউট হওয়ার আগে তিনি ৮ বলে ২ চারের মারে করেন ১০ রান। এক বল পড়েই আউট হন আরেক ওপেনার মেহেদী হাসান মিরাজ। দলীয় ২২ রানে আবু হায়দারের বলে এলবিডব্লিউ হন মিরাজ। তিনি ১৪ বলে করেন ৮ রান। উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিমকে ভালোই সঙ্গ দিচ্ছিলেন সৌম্য সরকার। হাত খুলেই খেলছিলেন তিনি। তবে দশম ওভারে মোহাম্মদ নবিকে মারতে গিয়ে উইকেটরক্ষক সোহানের স্টাম্পের শিকার হয়ে ফেরেন সৌম্য। ফেরার আগে ১৮ বল খেলে ২ চার ও ১ ছক্কায় করে ২২ রান। ১৪.৩ ওভারে আউট হন আওেশ হার্ডহিটার কাইল মায়ার্স। দলীয় ১১৯ রানে ফজলহক ফারুকীর বলে রনি তালুকদারের ক্যাচে পরিণত হন তিনি। ১৫ বলে ১ চার ও ৩ ছয়ের মারে কাইলের ব্যাট থেকে আসে ২৮ রান। এরপর দলকে জয়ের পথেই রাখে মুশফিক ও মিলার। এ দুইজন দারুণ খেলে শেষ পর্যন্ত বরিশালকে বড় জয় এনে দেন। যদিও হাফসেঞ্চুরি করতে পারেননি মুশফিক। তবে খেলেছেন দলের পক্ষে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। মুশফিক ৩৮ বলে ৬ চার ও ১ ছয়ের মারে ৪৭ রানে অপরাজিত থেকেই দলকে জয় এনে দিয়ে মাঠ ছাড়েন। ডেভিড মিলার ১৮ বলে দুই বাউন্ডারি ও এক ছক্কায় ২২ রানে অপরাজিত থাকেন। ফলে দেড়শ’ ছাড়ানো রান তুলে ৯ বল হাতে রেখেই বড় জয় পায় ফরচুন বরিশাল।

রংপুরের আবু হায়দার ৩৭ রান খরচায় পান ২টি উইকেট। ব্যাট হাতে ব্যর্থ হওয়ার পর বোলিংয়েও ব্যর্থ হন সাকিব। তিনি ১.৩ ওভার বল করে ১৭ রান দিলেও ছিলেন উইকেট শূন্য। অপরাজিত ইনিংস খেলে ম্যাচসেরার পুরস্কার পান বরিশালের মুশফিকুর রহিম।