দেশের-খবর

মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাত, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে দেশের সীমান্তে সর্বোচ্চ সতর্কতা

বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী দেশ মিয়ানমারের অভ্যন্তরে মিয়ানমার জান্তা সামরিক ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিপি) সঙ্গে আরাকান আর্মির ( এ এ) সংঘর্ষ চলমান এতটুকো অবগত হলেও ঐ দেশের (মিয়ানমারের) অভ্যন্তরে সত্যিকার অর্থে কী হচ্ছে, সে সম্পর্কে কিছুই জানেন না সীমান্তের এপারের (বাংলাদেশের) মানুষ। তারা কেবল গোলাগুলির শব্দ শুনছেন, আকাশে দেখেছেন হেলিকপ্টারের চক্কর ও বোমারু বিমানে উড়ে চলার দৃশ্য। মাঝে মধ্যে মর্টার শেল, খোসা ও গুলি এদেশে এসে আঁছড়ে পড়ছ। এমন অবস্থায় তীব্র আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন সীমান্তবর্তী পার্বত্য বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকার ঘুংধুম ও কক্সবাজারের উখিয়া টেকনাফের পালংখালী ও হোয়াইক্যংসহ সীমান্ত এলাকার মানুষ।

অন্যদিকে নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের অনুমান, মিয়ানমারে বিদ্রোহীদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর সংঘাতের জেরে বাংলাদেশের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়তে পারে। রাখাইনসহ আশপাশ অঞ্চলের আরও চার লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে প্রবেশের সুযোগ করে দিতে টেকনাফ এবং উখিয়া ক্যাম্পের রোহিঙ্গারা অপ্রীতিকর ঘটনার সৃষ্টি করতে পারে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা এমন সব আশঙ্কা প্রকাশ করায় ক্যাম্পগুলোতে নিরাপত্তা জোরদারের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

২০১৭ সালের আগস্ট মাসে রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিরোধের জেরে প্রাণ বাঁচাতে আট লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে চলে আসে। অবশ্য এর আগেও বেশ কয়েকবার অনুপ্রবেশের মাধ্যমে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এতে সব মিলিয়ে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অবস্থানের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখের বেশি।

মিয়ানমার অংশে অবস্থানরত স্বজনদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন বাংলাদেশের ক্যাম্পের রোহিঙ্গারা। এ অবস্থায় অপ্রীতিকর ঘটনা সৃষ্টির চক্রান্ত রুখে দিতে ক্যাম্পে গোয়েন্দা নজরদারির পাশাপাশি নিরাপত্তা জোরদারে দেয়া হয়েছে নানা নির্দেশনা।

বেশ কিছুদিন যাবত মিয়ানমার সীমান্ত এলাকায় ভারী অস্ত্র থেকে গুলি এবং মোটরশেলের শব্দ শোনা গেলেও গত কয়েক দিন থেকে থেমে থেম কিছু গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে, মাঝে মধ্যে দেখা যাচ্ছে আগুনের ধোঁয়া। এতে টেকনাফ এবং উখিয়া ক্যাম্পের রোহিঙ্গারা অপ্রীতিকর ঘটনার সৃষ্টি করতে পারে বলে মনে করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। আর এতেই শঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার টেকনাফ এবং উখিয়ায় অবস্থানরত রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে। মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাত এখানে উস্কানি হিসাবে কাজ করতে পারে বলে শঙ্কা করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর অব. এমদাদুল ইসলাম এর বরাতে জানা যায়, ‘সেখানে এক ধরনের নাশকতা হওয়ার আশঙ্কা আছে। কাজেই ক্যাম্পে নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে।’

মিয়ানমারের রাখাইনে সংঘাতময় পরিস্থিতিতে সেখানে বসবাসকারী রোহিঙ্গারাও আতঙ্কে রয়েছেন। এতে কক্সবাজার ও টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা রাখাইনে অবস্থানরত স্বজনের জন্য উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। তবে নতুনভাবে যাতে একজন রোহিঙ্গাও আর এ দেশে অনুপ্রবেশ করতে না পারে, সে ব্যাপারে সতর্ক রয়েছে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।

তবে ইতিমধ্যে গত সোমবার কক্সবাজারে মাঠ পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করা বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে কোর কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে সিদ্ধান্ত হয়, মিয়ানমারের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সীমান্তের এপারে ‘অনুকূল’ পরিবেশ থাকায় ওপাশ থেকে রোহিঙ্গারা যাতে এ দেশে ঢুকতে না পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। প্রায় ১৪ লাখ রোহিঙ্গার বোঝা বাংলাদেশের ওপর। নতুন আর কাউকে জায়গা দেওয়া বাংলাদেশের পক্ষে কষ্টসাধ্য– এই বার্তা রোহিঙ্গাদের দিতে হবে। সীমান্ত এলাকায় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

এক বার্তায়, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নূরে আলম মিনা বলেন, ‘থানা, সার্কেল, ফাঁড়ি, ক্যাম্প-তারাও খুব সতর্ক অবস্থায় আছে। আমরা এ মুহূর্তে এপিবিএনের সদস্যদেরও সতর্ক রেখেছি।’

বর্তমানে উখিয়ার কতুপালং হয়ে টেকনাফের উনচিপ্রাং পর্যন্ত বিস্তৃত ক্যাম্পগুলোর নিরাপত্তায় নিয়োজিত আমর্ড পুলিশের স্বতন্ত্র তিনটি ব্যাটেলিয়ন। একই সাথে একাধিক আনসার ক্যাম্প। তবে সাম্প্রতিক উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে আর্মড পুলিশের পক্ষ থেকে চেকপোস্ট বাড়ানো হয়েছে, পাশাপাশি ক্যাম্পের অভ্যন্তরে টহলও দিচ্ছে তারা।

এপিবিএন-৮ অধিনায়ক মোহাম্মদ আমির জাফর বলেন, ‘আমাদের চেকপোস্ট যেকোনো রকম মুভমেন্ট কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে। তো এখন পর্যন্ত আমরা সেরকম কোনো প্রতিক্রিয়া লক্ষ করিনি।’

আর ক্যাম্পে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নিলেও শেষ পর্যন্ত তা সফল হয়নি।