রংপুর বিভাগ

বন্যার পর এবার তীব্র নদী ভাঙ্গন, এ যেন মরার উপর খরার ঘাঁ

এস বাবু রায়, লালমনিরহাট জেলা প্রতিনিধি।। গত কয়েকদিন আগে হঠাৎ করে পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যার সৃষ্টি হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তিস্তা পাড়ের লোকজন। পানি কমে যাওয়ায় অব্যাহত নদী ভাঙ্গনে এখন রয়েছেন ভাঙ্গন আতংকে। এ যেন মরার উপর খরার ঘা।

 লালমনিরহাটে দ্বিতীয় দফা বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথেই তীব্র নদী ভাঙ্গনে দিশেহারা পড়েছে তিস্তা পারের বাসিন্দারা। লালমনিরহাট সদর উপজেলার রাজপুর, খুনিয়াগাছ বাগডোরাসহ ও আদিতমারী উপজেলার তিস্তা নদী তীরবর্তী এলাকার কমপক্ষে ৮ থেকে ১০টি পয়েন্টে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙ্গন। ইতিমধ্যে এসব এলাকার একরের পর একর ফসলিজমি, বসতভিটা নদী গর্ভে বিলীন হতে শুরু করেছে। হুমকিতে রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ নানা স্থাপনা।

অনেকেই নিজেদের বসতভিটা হারিয়ে ঠাই নিচ্ছেন বাধেঁ ও অন্যের জমিতে। ভাঙ্গন কবলিতদের অভিযোগ ভাঙ্গনরোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় প্রতিবছরই নদী ভাঙ্গনের শিকার হতে হচ্ছে তাদের।

জেলার হাতিবান্ধায় অবস্থিত ডালিয়া ব্যারাজ পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫১.৮৩ সেন্টিমিটার যা বিপদসীমার ৩২ সেন্টিমিটার নিচে। এর আগে তিস্তার পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২.৩৫ যা বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল।

তিস্তার পানি নেমে যাওয়ায় নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়া লালমনিরহাট সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের বাগডোরার বাসিন্দা আব্দুল গফুর জানান, পৈতৃক ভিটা নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে অনেক আগেই। এ পর্যন্ত ৪ বার বাড়ি সড়িয়ে অন্যের জমিতে কয়েকবছর থাকার পর অনেক কষ্টে অর্থ জমিয়ে জায়গা কিনে বাড়ি করেছেন তিনি। এবছর সেই বাড়িটিও নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়ে নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেল। অশ্রুসিক্ত কন্ঠে গফুর আরো জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন প্রায় প্রতিদিন এসে ভাঙ্গনের দৃশ্য দেখে যাচ্ছে। ভাঙ্গনতো চলছেই। বস্তা দিয়ে ভাঙ্গন ঠেকাতে ঠেকাতেই আমার সব শেষ হয়ে যাচ্ছে। গফুর বলেন, আমার বাড়ী পুরোটা ভেঙে গেলে আরো অনেক বাড়ীঘর, মসজিদসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নদী ভাঙ্গনের কবলে পরবে।

একই এলাকার বাসিন্দা মরিয়ম বেগম জানান, গত দুইদিন আগে প্রায় ১ কিলোমিটার দুরে নদী ছিল। ভাঙ্গতে ভাঙতে নদী তার বাড়ির পিছনে চলে এসেছে। সকাল থেকে ৫/৬টা বাড়ী ভাঙ্গনের শিকার হয়েছে। আরো বেশ কয়েকটি বাড়ি সড়িয়ে নিচ্ছেন লোকজন। পাশেই দাড়িয়ে থাকা শফিকুল ইসলাম নামের একজন জানান, রোজগারের জন্য ঢাকায় ছিলাম, বাড়ীর লোকজন ফোনে জানালো নদীর অব্যাহত ভাঙ্গনে জমি, বাড়ী ও গাছপালা সব নদীতে বিলিন হয়ে গেছে।

আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা চন্ডিমারীর বাসিন্দা খয়বর জানান, গতবছর নদী ভাঙ্গনে বাড়ি সড়িয়ে নিয়েছি। এবারেও নদীর ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। হয়ত আবার বাড়ি সড়িয়ে নিতে হবে।একই রকম মন্তব্য করেন বাগডোরা, চন্ডিমারী, রাজপুরসহ ভাঙ্গন কবলিত এলাকার লোকজন। সকলের দাবি বন্যার সময় ত্রাণ বা অর্থ সহায়তা না দিয়ে নদীতে স্থায়ী বাধ নির্মাণ অথবা নদী খননের মাধ্যমে স্থায়ী সমাধানের।

খুনিয়াগাছ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান খায়রুজ্জামান মন্ডল বাদল বলেন, নদীর গভীরতা কম থাকায় অল্প পানিতেই ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল ও লোকালয়ে পানি ঢুকে বন্যায় নানা দুর্ভোগের সৃষ্টি করে। তাছাড়া পানি কমলে তো ভাঙ্গন চলেই। এবারেও বাগডোরায় তীব্র ভাঙ্গন শুরু হয়েছে।

‘তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও’ সংগ্রাম পরিষদের লালমনিরহাট জেলা সভাপতি গেরিলা লিডার, বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম কানু বলেন, তিস্তার গর্ভে পলি পরায় পানি ধারণ ক্ষমতা কমে গেছে। ফলে অল্প পানিতে বন্যার সৃষ্টি হচ্ছে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর আবার শুরু হচ্ছে তীব্র নদী ভাঙ্গন। এতে প্রতিবছর ভূমিহীন ও গৃহহীনের সংখ্যা বাড়ছে। নদী ভাঙ্গন ও বন্যার ক্ষয়ক্ষতির পরিমান কমিয়ে আনতে দ্রুতই স্থায়ী পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি তার।

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার বলেন, দ্বিতীয় দফায় তিস্তার পানি বেড়ে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। বর্তমানে পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি নেমে যাওয়ায় তিস্তা তীরবর্তী এলাকা বাগডোরা, চন্ডিমারী, মহিষখোচাসহ বেশকিছু পয়েন্টে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। আমরা আপদকালীন কাজ হিসেবে এসব পয়েন্টে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙ্গন প্রতিরোধ করার চেষ্টা করছি।