রংপুর বিভাগ

লালমনিরহাটে নিয়োগ প্রার্থী পরীক্ষা দিতে না পারায় প্রধান শিক্ষককে প্রহার

এস বাবু রায়, লালমনিরহাট জেলা প্রতিনিধি।। লালমনিরহাটের খুনিয়াগাছ ইউনিয়নে একটি বিদ্যালয়ে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিতে না পারায় নিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোশারফ হোসেনকে পিটিয়ে হাসপাতালে পাঠালো অফিস সহকারী কাম হিসাবরক্ষক, অফিস সহায়ক, নিরাপত্তা কর্মী, আয়া ও পরিচ্ছন্ন কর্মী চাকুরী প্রার্থী ও তাদের লোকজন।

রবিবার (৫ নভেম্বর) বিকেলে লালমনিরহাট সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ এসসি উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।

ভুক্তভোগি ও স্থানীয়রা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোশারফ হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে জানান, প্রধান শিক্ষক এলাকার ৪/৫ জন বেকার শিক্ষিত যুবককে চাকরির দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ২৫ থেকে ৩০ লক্ষ টাকা নেন। দীর্ঘ কয়েক বছর পেরিয়ে গেলেও তিনি চাকুরী না দিয়ে টালবাহানা করেন।

যদিও ২০২০ সালে নিয়োগ দেয়ার কথা বলে পত্রিকায় ভুয়া নিযোগ বিজ্ঞাপ্তি প্রকাশ করে তাদের শান্তনা দেন। পরে গোপনে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং বডি অফিস সহকারী কাম হিসাবরক্ষক, অফিস সহায়ক, নিরাপত্তা কর্মী, আয়া ও পরিচ্ছন্ন কর্মী এই ৫টি পদের জন্য কয়েকদিন আগে আবারও পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞাপ্তি প্রকাশ করে।ওই ৫টি পদের বিপরীতে ৪০ জন প্রার্থী আবেদন করেন।

আজ রবিবার এসব পদে নিয়োগ পরীক্ষা হওয়ার কথা শুনে এলাকাবাসী বিদ্যালয়ের চারিদিকে অবস্থান নিয়ে থাকে। যাতে করে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা নিতে না পারেন। এরই এক পর্যায়ে বিকেলে প্রধান শিক্ষক —নামাজ পড়ার জন্য মসজিদের দিকে রওয়ানা দিলে শিক্ষক নিয়োগ প্রত্যাশি খুনিয়াগাছ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি নুর ইসলামসহ এলাকাবাসী চাকুরির জন্য দেওয়া টাকা ফেরত চান।

পরে প্রধান শিক্ষক টাকা দিতে না চাওয়ায় সেখানেই তাকে বেদম মারপিট করে শরীরের জামা কাপড় ছিরে ফেলেন। এর কিছুক্ষন পর বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং বডির সভাপতি এ্যাডঃ মতিয়ার রহমান আসলে তার সামনেই আবারও প্রধান শিক্ষককে পেটানো হয় এবং সভাপতিকেও অশ্লিল ভাষায় গালিগালাজ করা হয়।

পরে উপায়ন্তর না পেয়ে কৌশলে সেখান বিদ্যালয়ের অফিসে যাওয়ার পথে বিদ্যালয়ের সামনে গেলেই সেখানেও বেশ কয়েকজনমহিলা হাতে ঝাড়ু ও সেন্ডেল নিয়ে তাদের উপর চড়াও হয়।

তারপরেও জেলা শিক্ষা অফিস ও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিয়োগ পরীক্ষা নেয়ার চেষ্টা করলে উত্তেজিত এলাকাবাসী ও মহিলাগণ ক্লাসে নিয়োগ প্রার্থীদের উপর চড়াও হন।

অবস্থা বেগতিক দেখে এ্যাড মতিয়ার রহমান থানায় খবর দিলে থানা পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তারা আরও জানান, এই নিয়োগ পরীক্ষা গত অক্টোবর মাসের ৩১ তারিখ হওয়ার কথা থাকলেও সেদিন পরীক্ষা স্থহিত করা হয় এবং পরবর্তীতে পরীক্ষার তারিখ জানিয়ে দেয়া হবে বলেও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রার্থীদের জানান।

কিন্তু যদের চাকুরী দেয়া হবে শুধুমাত্র তাদেরকে আজকের পরীক্ষার তারিখ জানিয়ে দিয়ে গোপনে পরীক্ষা নেয়ার চেষ্টা করেন। বিষয়টি জানাজানি হলে আরো ৪০ প্রার্থী আজ নিয়োগ পরীক্ষা দিতে আসেন। কিন্তু বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যে ৫জনকে নিয়োগ দেয়ার কথা বলে ২৫ থেকে ৩০ লক্ষ নিয়েছেন তাদেরকে উত্তরপত্রসহ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র দিয়ে দেন এবং বিকেলে পুলিশের উপস্থিতিতে নিয়োগ পরীক্ষা সম্পন্ন করেন।

এ ব্যাপারে চাকুরী প্রত্যাশি ছাত্রলীগ সভাপতি নুর ইসলাম জানান, আমি একজন বীর মুক্তিযুদ্ধার সন্তান। আমি আমার চাকুরীর জন্য প্রধান শিক্ষক মোশারফ স্যারকে ৫ লক্ষ টাকা দিয়েছি। গত ৫ বছরেও তিনি আমার চাকুরী নিশ্চিত করেন নাই। উল্টো তিনি আমার চাকুরী নিশ্চিত হয়েছে বলে শান্তনা দেন। কিন্তু পরে আমি জানতে পারি তারা গোপনে নিয়োগ পক্রিয়া শেষ করেছেন। বিষয়টি জানতে পারলে এলাকাবাসী আজ ওই শিক্ষকের চড়াও হয় এবং টাকা ফেরত দিতে বলা হয়। টাকা দিতে না পারায় একটু ধাক্কাধাক্কি হয় বলেও জানান তিনি।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোশারফ হোসেন জানান, বিদ্যালয়ের ক্লাস চলায় নিয়োগ পরীক্ষাটি বিকেলে নেয়ার কথা ছিল। বিদ্যালয় ছুটি হলে তারপর নিয়োগ পরীক্ষা হবে তাই আমি আসরের নামাজ পড়ার জন্য মসজিদে যাওয়ার পথে এলাকার সন্ত্রাসী নুর ইসলামসহ ২০/২৫ জন তার পথরোধ করে আমাকে লাঞ্চিতসহ বেদম মারপিট করে।

পরে বিদ্যালয়ের সভাপতি এ্যাড মতিয়ার রহমান এসে উদ্ধার করেহাসপাতালে ভর্তি করে। আমি পুলিশ প্রশাসনের নিকট এই ঘটনার ন্যায়বিচার দাবী করছি।