পাকিস্তানের হৃদয় ভেঙে শীর্ষে দক্ষিণ আফ্রিকা
২৫ ম্যাচ পেরিয়ে অবশেষে বিশ্বকাপের হারিয়ে যাওয়া জমজমাট লড়াইয়ের রোমাঞ্চ ধরা দিল চেন্নাইয়ে। পাকিস্তানের হৃদয় ভেঙে সেখানে ১ উইকেটের জয় পেয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারতকে টপকে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষেও চলে গেছে তারা।
গতকাল এমএ চিদাম্বরাম স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে বড় সংগ্রহের আশা জাগিয়েও ৪৬.৪ ওভারে ২৭০ রানে অলআউট হয় পাকিস্তান।
জবাবে ৪৭.২ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৬ বল বাকি থাকতে লক্ষ্য ছুঁয়ে ফেলে তারা প্রোটিয়ারা। খাদের কিনারে থাকা পাকিস্তান ধাক্কা খেয়েছে আরেকটি।
দক্ষিণ আফ্রিকার এটা টানা তৃতীয় জয়। এই জয়ে ১০ পয়েন্ট সংগ্রহ করে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে অবস্থান নিলো প্রোটিয়ারা। অন্যদিকে পাকিস্তানের টানা চতুর্থ হার।
এই হারে বিশ্বকাপ থেকে বিদায়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেল বাবরবাহিনী। অবশ্য অনেক যদি-কিন্তুর মারপ্যাচে নিভু নিভু সম্ভাবনা টিকে আছে বাবর আজমের দলের বিশ্বকাপ স্বপ্ন।
৫ উইকেট হাতে নিয়ে ৮০ বলে দরকার ৩৬ রান। শতকের দুয়ারে দাঁড়িয়ে এক ব্যাটসম্যান। এমন সহজ সমীকরণ থেকেও হারের শঙ্কায় পড়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা।
নাটকীয়তায় ঠাসা লড়াইয়ে শেষ জুটির নৈপুণ্যে পাকিস্তানকে হারিয়ে দীর্ঘ অপেক্ষা ঘোচাল প্রোটিয়ারা। ২৪ বছর পর বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে জিতল দক্ষিণ আফ্রিকা।
সবশেষ জিতেছিল ১৯৯৯ সালের আসরে।
নেদারল্যান্ডস ২৪৫ রান করেও দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে দিয়েছিল। পাকিস্তানও দুর্দান্ত লড়াইয়ে সেই পথেই যেন হাঁটছিল। ২৭১ রানের লক্ষ্য দিয়ে বোলারদের নৈপুণ্যে প্রোটিয়াদের চেপে ধরেছিল বাবরের দল।
‘আনপ্রেডিক্টেবল’ শব্দটি বারবার ফিরে আসছিল। কিন্তু হলো না। চাপে ভেঙে পড়ার ইতিহাস থাকলেও দক্ষিণ আফ্রিকা ঠিক ঘুরে দাঁড়ায়।
পাওয়ার প্লেতে দুই ওপেনার কুইন্টন ডি কক (২৪) ও টেম্বা বাভুমাকে (২৪) ফেরায় তারা ৬৭ রানের মধ্যে। রসি ফন ডার ডুসেনকে নিয়ে দাঁড়িয়ে যান এইডেন মারক্রাম। দুজনের ৫৪ রানের জুটি ভাঙেন উসামা মীর। ১৫তম ওভারে শাদাব খানের বদলি নামেন তিনি। ওয়ানডে বিশ্বাকপ ইতিহাসে প্রথম কনকাশন সাব হয়ে দারুণ ব্রেক থ্রু আনেন ফন ডার ডুসেনকে এলবিডব্লিউ করে। প্রোটিয়া ব্যাটার রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি। মারক্রাম বেশিক্ষণ হাইনরিখ ক্লাসেনের সঙ্গ পাননি। ক্লাসেনকে ১২ রানে উসামার ক্যাচ বানান মোহাম্মদ ওয়াসিম।
১৩৬ রানে চার উইকেট হারালেও মারক্রাম ও ডেভিড মিলারের জুটিতে দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচ নিয়ন্ত্রণে নেয়।
শাহীন শাহ আফ্রিদির বল মিলারের (২৯) ব্যাটে নিক করে মোহাম্মদ রিজওয়ানের গ্লাভসে জমা হয়।
৭০ রানের এই জুটি ভেঙে যেন স্বস্তি ফিরে পায় পাকিস্তান। তবে চলতি বিশ্বকাপে চতুর্থবার পঞ্চাশ ছাড়ানো ইনিংস খেলা মারক্রাম পাকিস্তানের পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়ান। তাকে সরানোর জন্যে মরিয়া ছিলেন বোলাররা। শেষ পর্যন্ত তাদের অপেক্ষার অবসান হয় ডেথ ওভারে।
তার আগে মার্কো ইয়ানসেনকে (২০) থামান হারিস রউফ। উসামা আনেন বড় ব্রেক থ্রু। পেছনে কভার পয়েন্টের দিকে দৌড়ে মারক্রামের ক্যাচ চমৎকারভাবে ধরেন বাবর। ৯১ রানে থামেন প্রোটিয়া ব্যাটার। পরের ওভারেই জেরাল্ড কোয়েটজেকে (১০) রিজওয়ানের ক্যাচ বানান আফ্রিদি। ২৫০ রানে ৮ উইকেট নিয়ে ম্যাচে উত্তেজনা ফেরায় পাকিস্তান।
লুঙ্গি এনগিডি ও কেশব মহারাজ সতর্ক ব্যাটিংয়ে লক্ষ্য কমাতে থাকেন। এনগিডির ডিফেন্সিভ শট সামনে ঝাঁপিয়ে বাঁ হাতে দুর্দান্ত ক্যাচ ধরেন হারিস রউফ। তখনও জয়ের জন্য ১১ রান দরকার দক্ষিণ আফ্রিকার, আর পাকিস্তানের চাই ১ উইকেট। সেই পথটুকু পাড়ি দেন কেশভ মহারাজ (২১ বলে ৭) ও তাবরাইজ শামসি। পাকিস্তানি পেসারের শেষ বলে এলবিডব্লিউর আবেদনে আম্পায়ার সাড়া না দিলে রিভিউ নেয় পাকিস্তান।
কিন্তু আম্পায়ার্স কলে বেঁচে যান শামসি। তিনিই হয়ে ওঠেন পাকিস্তানের হন্তারক। বল হাতে ৬০ রানে ৪ উইকেট নেওয়ার পর ব্যাটিংয়ে মূল্যবান ৪ রান করে ম্যাচের সেরা বাঁহাতি রিস্ট স্পিনার শামসি।
এর আগে টসভাগ্য সহায় হলেও শুরুতেই উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে পাকিস্তান। সেই চাপ কাটিয়ে উঠলেও দলীয় সংগ্রহ খুব বেশি বড় করতে পারেনি বাবর-রিজওয়ানরা,
দলের হয়ে ফিফটি ইনিংস খেলেন বাবর (৫০), সউদ শাকিল (৫২)। বাকিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য রান পেয়েছেন শাদাব (৪৩), রিজওয়ান (৩১), নাওয়াজ (২৪) ও ইফতিখার (২১)।