নিউজিল্যান্ডকে গুড়িয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার টানা চতুর্থ জয়
জিততে গড়তে হত রান তাড়ার রেকর্ড। কোনো লড়াই-ই করতে পারল না নিউজিল্যান্ড। মার্কো ইয়েনসেন ও কেশব মহারাজের বোলিংয়ের সামনে দাড়াতেই পারেনি কিউই ব্যাটিং লাইনআপ। গতবারের রানারআপদের গুড়িয়ে এবারের বিশ্বকাপে টানা চতুর্থ জয় তুলে নিল দক্ষিণ আফ্রিকা।
আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপের ৩২তম ম্যাচে বুধবার দক্ষিণ আফ্রিকার জয় ১৯০ রানের। ভারতের পুনেতে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৪ উইকেটে দক্ষিণ আফ্রিকা গড়ে ৩৫৭ রানের সংগ্রহ। জবাবে ৩৫.৫ ওভারে ১৬৭ রানে গুটিয়ে যায় নিউজিল্যান্ড।
ওয়ানডেতে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার সবচেয়ে বড় জয় এটি। ২০১৭ সালে ওয়েলিংটনে ১৫৯ রানের জয় ছিল আগের রেকর্ড। সেই সাথে ১৯৯৯ সালের পর এই প্রথম বিশ্বকাপে কিউইদের হারাল প্রটিয়ারা।
বিশ্বকাপে রানের হিসাবে নিউ জিল্যান্ডের এর চেয়ে বড় হার আছে আর একটি। ২০০৭ আসরে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২১৫ রানে হেরেছিল তারা।
আসরে সাত ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার এটি ষষ্ঠ জয়। ভারতকে টপকে তারা ফিরেছে শীর্ষে। ছয় ম্যাচে শতভাগ জয়ে ভারতের পয়েন্ট ১২। সমান পয়েন্ট দক্ষিণ আফ্রিকারও। কিন্তু নেট রান রেটে এগিয়ে প্রটিয়ারা। এই জয়ে সেমি-ফাইনালে পথে আরেক ধাপ এগিয়ে গেল টেম্বা বাভুমার দলটি।
অন্যদিকে সাত ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের এটি তৃতীয় পরাজয়। ৮ পয়েন্ট নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে নেট রান রেটে পিছিয়ে চারে নেমে গেছে তারা।
৪৬ রানে ৪ উইকেট নেন মহারাজ। ৩১ রানে তিনটি শিকার ধরেন ইয়েনসেন। ৪১ রানে দুটি নেন জেরাল্ড কোয়েৎজি।
জোড়া শতকে দক্ষিণ আফ্রিকার জয়ের ভিত গড়ে দিয়েছিলেন কুইন্টন ডি কক ও রাসি ফন ডার ডুসেন। শেষে ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ফিফটি তুলে নেন ডেভিড মিলার।
ম্যাচসেরা ডুসেনের ব্যাট থেকে আসে ১১৮ বলে ৯ চার ও ৫ ছক্কায় ১৩৩ রান। আসরে এটি তার দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। দ্বিতীয় উইকেটে দুই সেঞ্চুরিয়ান গড়েন ১৮৯ বলে ঠিক ২০০ রানের জুটি।
১১৬ বলে ১০ চার ও ৩ ছক্কায় ১১৪ রান করেন ডি কক। চলতি বিশ্বকাপে ৭ ম্যাচে চার সেঞ্চুরিতে তার রান হলো ৫৪৫। চলতি আসরে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ রান তার। বিশ্বকাপের এক আসরে দক্ষিণ আফ্রিকার সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকও এখন তিনি। এই তালিকায় ডি কক ছাড়িয়ে গেছেন জ্যাক ক্যালিসকে। ২০০৭ বিশ্বকাপে ৯ ইনিংসে ৪৮৫ রান করেছিলেন সর্বকালের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার ক্যালিস।
আরেকটি রেকর্ডও হয়ে গেছে ডি ককের। কিপার-ব্যাটসম্যান হিসেবে বিশ্বকাপের এক আসরে সর্বোচ্চ রান ছিল এতদিন সাঙ্গাকারার, ২০১৫ আসরের ৫৪১।
টিম সাউদির বলে ডি কক পয়েন্টে ক্যাচ দিলে ভাঙে জুটি। সাউদিরই স্লোয়ারে পরে বোল্ড হয়ে যান ডুসেন। তবে এর আগে ডেভিড মিলানের সাথে গড়েন স্রেফ ৪৩ বলে ৭৮ রানের জুটি।
মিলার আর হানরিক ক্লাসেনের চতুর্থ উইকেট জুটি থেকে আসে ১৬ বলে ৩৫ রান। ৩০ বলে ৪ ছক্কা ও ২ চারে ৫৩ রান করে বাউন্ডারিতে জেমি নিশামের দারুণ ক্যাচের শিকার হন মিলার। ৭ বলে ১৫ রানে অপরাজিত থাকেন ক্লাসেন।
চলতি আসরে সাত ইনিংসে পঞ্চম তিনশ ছোঁয়া দলীয় স্কোর গড়ে প্রটিয়ারা। এর মধ্যে চারবারই তারা পেরিয়েছে সাড়ে তিনশ রানের ঘর। ধারাবাহিকভাবে রান-পাহাড় গড়ার পথে ছক্কার নতুন রেকর্ড গড়েছে তারা।
এখন পর্যন্ত খেলা সাত ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকা মেরেছে মোট ৮২টি ছক্কা। বিশ্বকাপের এক আসরে কোনো দলের এটিই সবচেয়ে বেশি ছক্কা মারার রেকর্ড। ঘরের মাঠের গত আসরে ১১ ম্যাচে ৭৬টি ছক্কা মেরেছিল ইংল্যান্ড। এবার চার ম্যাচ কম খেলেই সেটি টপকে গেল প্রোটিয়ারা।
৭৭ রানে ২ উইকেট নিয়ে নিউজিল্যান্ডের সফলতম বোলার সাউদি। সাতজন বোলার ব্যবহার করেছেন কিউই অধিনায়ক টম ল্যাথাম। নিশাম ৫.৩ ওভারে দেন ৬৯ রান।
এ নিয়ে ইতিহাসের প্রথম দল হিসেবে আগে ব্যাটিং করে টানা ৮ ম্যাচে ৩০০ বা এর বেশি রানের স্কোর গড়ল দক্ষিণ আফ্রিকা। নিউজিল্যান্ড বেশ খানিকটা সময় দক্ষিণ আফ্রিকাকে সেভাবে ছুটতে দেয়নি। তবে ক্যাচ ও রান আউটের সুযোগ হাতছাড়া করা, চোট নিয়ে ৫.৩ ওভার করেই ম্যাট হেনরির উঠে যাওয়া ভুগিয়েছে তাদের।
রান তাড়ায় কোনো কখনই সঠিক পথে ছিল না নিউজিল্যান্ড। দলটির হয়ে একাই লড়েন গ্লেন ফিলিপস। ৫০ বলে চারটি করে ছক্কা-চারে করেন ৪০ রান। নবম উইকেটে ট্রেন্ট বোল্টকে নিয়ে তার ২৩ ও ম্যাচ হেনরিকে নিয়ে ৩৪ রানের জয়টি দক্ষিণ আফ্রিকার জয়ের অপেক্ষা বাড়িয়েছে কেবল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
দক্ষিণ আফ্রিকা: ৫০ ওভারে ৩৫৭/৪ (ডি কক ১১৪, বাভুমা ২৪, ডুসেন ১৩৩, মিলার ৫৩, ক্লাসেন ১৫*, মার্করাম ৬*; অতিরিক্ত ১২; বোল্ট ১০-১-৪৯-১, হেনরি ৫.৩-০-৩১-০, সাউদি ১০-০-৭৭-২, স্যান্টনার ১০-০-৫৮-০, ফিলিপস ৭-০-৫২-০, রবিন্দ্র ২-০-১৭-০, নিশাম ৫.৩-০-৬৯-১)।
নিউজিল্যান্ড: ৩৫.৩ ওভারে ১৬৭ (কনওয়ে ২, ইয়াং ৩৩, বরীন্দ্র ৯, মিচেল ২৪, ল্যাথাম ৪, ফিলিপস ৬০, স্যান্টনার ৭, সাউদি ৭, নিশাম ০, বোল্ট ৯, হেনরি ০*; অতিরিক্ত ১২; ইয়েনসেন ৮-১-৩১-৩, এনগিদি ৬-১-২৮-০, রাবাদা ৬-২-১৬-১, কোয়েৎজি ৬.৩-০-৪১-২, মহারাজ ৯-০-৪৬-৪)।
ফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ১৯০ রানে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: রাসি ফন ডান ডুসেন।