নতুন চ্যাম্পিয়ন বরিশাল
ঘরোয়া ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের জনপ্রিয় টুর্নামেন্ট বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) নতুন চ্যাম্পিয়ন ফরচুন বরিশাল। টুর্নামেন্টের দশম আসরের শিরোপা জিতে হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়নের কৃতিত্ব পেলনা কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। তাদেরকে কাঁদিয়ে বিপিএলে প্রথম শিরোপা জয় করলো বরিশাল। গতকাল রাতে মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টুর্নামেন্টের জমজমাট ফাইনালে বরিশাল ৬ উইকেটের ব্যবধানে হারায় কুমিল্লাকে। আগে ব্যাট করে ‘আন্দ্রে রাসেল-শো’তে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৫৪ রান করে কুমিল্লা। জবাবে অধিনায়ক তামিম ইকবাল, মেহেদী হাসান মিরাজ ও ক্যারিবীয় অলরাউন্ডার কাইল মায়ার্সের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে এক ওভার হাতে রেখে ৪ উইকেটে ১৫৭ রান করে বড় জয় তুলে নেওয়ার পাশাপাশি প্রথম শিরোপা ঘরে তোলে ফরচুন বরিশাল।
বরিশালের দারুণ এই জয়ে স্বপ্নপূরণ হলো মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের মতো সিনিয়র তারকাদের। এক যুগ ধরে শিরোপা ছুঁয়ে দেখার অপেক্ষার করছিলেন জাতীয় দলের এ দুই বড় তারকা। অবশেষে শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ফুরালো তাদের সেই অপেক্ষার প্রহর। ক্যারিয়ারের শেষ সময়ে এসে হলেও অন্তত একবারের জন্য বিপিএলের শিরোপা উঁচিয়ে ধরতে পেরেছেন ভায়রা ভাই মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ। মাহমুদুল্লাহ তো ব্যাট হাতে বিজয়ীর বেশেই মাঠ ছেড়েছেন। যে কারণে, বিপিএল নিয়ে আর কোনো আফসোস হয়তো থাকলো না এ দুই সিনিয়র ক্রিকেটারের। কাল ফাইনাল ম্যাচ শুরুর আগে গতপরশু রাতে বেইলি রোডে অগ্নিকাÐে নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন দুই দলের খেলোয়াড়, আম্পায়ার ও স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে উপস্থিত দর্শকরা।
বিপিএলের ফাইনাল ম্যাচ হাইস্কোরিং হবে, এমনটাই আশা ছিল স্টেডিয়ামের গ্যালারিভরা দর্শকদের। তবে আন্দ্রে রাসেল মাঠে নামার আগে মনে হয়েছে দর্শকদের সেই প্রত্যাশা পুরোপুুরি পূরণ করতে পারবে না কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। শেষ পর্যন্ত তাই হয়েছে। কুমিল্লার স্থানীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে একমাত্র উইকেটরক্ষক ব্যাটার মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন ছাড়া বাকিরা ছিলেন অনুজ্জ্বল। তবে শেষ পর্যন্ত গ্যালারিতে বসে ‘রাসেল-শো’ উপভোগ করেছেন দর্শকরা। শেষ ৩ ওভারে ব্যাটিংঝড় তুলে কুমিল্লাকে লড়াই করার মতো পুঁজি এনে দেন রাসেল। শেষের রোমাঞ্চে ফরচুন বরিশালের সামনে দেড়শ’ ছাড়ানো সংগ্রহ পেলেও ম্যাচ আর জিততে পারেনি চারবারের চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে দলীয় ৫ রানের মাথায় জীবন পান কুমিল্লার ওপেনার সুনিল নারিন। ইনিংসের প্রথম ওভারের তৃতীয় বলে কাইল মায়ার্সের বলে থার্ডম্যান অঞ্চলে ক্যাচ তুলে দেন তিনি। সেখানে ফিল্ডিং করা ওবেদ ম্যাকয় সহজ ক্যাচটি ফেলে দেন। তবে জীবন ফিরে পেয়ে তা কাজে লাগাতে পারেননি নারিন। মাত্র ১ রান যোগ করে (৪ বলে ৫ রান) মায়ার্সের বলেই সেই ম্যাকয়ের হাতে ধরা পড়েন এই ক্যারিবীয় ব্যাটার। পরের তিন ব্যাটারও রান পাননি। ১০ বলে ১৫ রান করে জেমন ফুলারের বলে মাহমুদউল্লাহর হাতে ক্যাচ হয়ে ফেরেন তাওহিদ হৃদয়। ১২ বলে ১৬ রান করা কুমিল্লার অধিনায়ক লিটন দাস আউট হন দলীয় ৪২ রানে। জনসন চার্লস ফেরেন দলীয় ৬৫ রানে। আউট হওয়ার আগে তিনি ১৭ বলে দুই ছক্কায় করেন ১৫ রান। মঈন আলী ঠিক মতো দাঁড়ানোর সুযোগই পাননি। ৬ বলে মাত্র ৩ রান করে রানআউটের শিকার হন তিনি। এরপর মাহিদুল হাসান অঙ্কনের ব্যাটে চড়ে সামনের দিকে এগিয়ে যায় কুমিল্লা। ৩৫ বলে দু’টি করে চার ও ছয়ের মারে ৩৮ রান করে মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনের বলে বোল্ড হন অঙ্কন। শেষ দিকে নেমে ঝড়ো ইনিংস খেলেন আন্দ্রে রাসেল। ১৪ বলে ৪ ছক্কায় ২৭ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। এছাড়া জাকের আলি ২৩ বলে দুই বাউন্ডারিতে অপরাজিত ২০ রান করলে লড়াই করার মতো পুঁজি পায় কুমিল্লা। বরিশালের জেমস ফুলার ৪৩ রানে পান ২ উইকেট।
কুমিল্লার ছুঁড়ে দেওয়া ১৫৫ রানের লক্ষ্য তাড়ায় নেমে শুরু থেকেই দুর্দান্ত খেলে দারুণ জয় তুলে নেয় ফরচুন বরিশাল। পুরো ম্যাচেই ছিল তামিম ইকবালদের দাপট। শেষে বাউন্ডারি হাঁকিয়েই মাহেন্দ্রক্ষণের অবতারণা ঘটায় বিপিএলের নতুন চ্যাম্পিয়নরা। তখনও তাদের হাতে ছিল আরো এক ওভার। ব্যাটিংয়ে নেমে উদ্বোধনী জুটিতে তামিম ও মেহেদী হাসান মিরাজ দুর্দান্ত খেলেছেন। এই জুটি ৮ ওভার পর্যন্ত খেলে ৭৬ রান করে। এরপরই বিচ্ছিন্ন হন তামিম-মিরাজ। মঈন আলিকে ডাউন দ্য উইকেটে এসে উড়িয়ে মারতে গিয়ে বোল্ড হন অধিনায়ক তামিম। ফেরার আগে ২৬ বলে ৩টি করে চার ও ছয়ের মারে করেন ৩৯ রান। ৯.৩ ওভারে দলীয় ৮২ রানে জনসন চার্লসের হাতে ক্যাচ দিয়ে মঈনের দ্বিতীয় শিকার হন মিরাজ। তিনি ২৬ বলে ১ চার ও ২ ছক্কায় করেন ২৯ রান। ৩০ বলে ৫ চার ও ২ ছয়ের মারে ৪৬ রানের মারকুটে ইনিংস খেলে আউট হন কাইল মায়ার্স। এছাড়া মুশফিককুর রহিম ১৮ বলে ১৩ রান করে আউট হন। শেষ পর্যন্ত মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ৭ বলে ৭ ও ডেভিড মিলার ৭ বলে এক বাউন্ডারির মারে ৮ রানে অপরাজিত থাকলে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় ফরচুন বরিশাল। কুমিল্লার মুস্তাফিজুর রহমান ৩১ ও মঈন আলী ২৮ রান খরচায় পান ২টি করে উইকেট। ম্যাচ সেরার পুরস্কার পান বরিশালের কাইল মায়ার্স। টুর্নামেন্ট সেরা হন চ্যাম্পিয়ন দলের অধিনায়ক তামিম ইকবাল।