দ্রুত সংস্কার করা হোক: রংপুরের শ্যামাসুন্দরী খাল
রংপুর শহরের ওপর দিয়ে প্রবাহিত শ্যামাসুন্দরী খালটি একসময় নগরীর অন্যতম আকর্ষণ ছিল। খালটির গভীরতা ছিল ৪০ ফুটের বেশি। এতে চোখজুড়ানো টলটলে পানির প্রবাহ ছিল। বৃষ্টির পানি মুহূর্তেই নেমে যেত এই খাল দিয়ে।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, আজ সেই ঐতিহ্যবাহী খালটি ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। দখল, দূষণ ও ভরাটের কারণে এতে পানির প্রবাহ নেই বললেই চলে। ফলে বৃষ্টি হলেই নগরীতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। তিন-চার দিনও লেগে যায় পানি নামতে। নগরবাসীর দুর্ভোগ চরমে ওঠে। অথচ দুই দশকে খাল সংস্কারের নামে কয়েক শ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে।
জানা যায়, রংপুরকে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্ত রাখতে ১৮৯০ সালে ডিমলার রাজা জানকী বল্লভ সেন তাঁর মা চৌধুরানী শ্যামাসুন্দরী দেবীর নামে এই খালটি পুনঃখনন করেন। রংপুরের ঘাঘট নদে উৎপত্তির পর শহরের পুরনো ১৫টি ওয়ার্ডের সব কটিকে ছুঁয়ে শ্যামাসুন্দরী খাল ১৬ কিলোমিটার প্রবাহিত হয়ে খোকসা ঘাঘট নদে গিয়ে মিশেছে।
গত কয়েক দশকে শ্যামাসুন্দরী খাল ঘেঁষে তৈরি হয়েছে বড় বড় অট্টালিকা, ক্লিনিক, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, রেস্তোরাঁ ও আবাসিক ভবন। স্থানে স্থানে খালের জায়গা দখল ও ভরাট করা হয়েছে। গৃহস্থালি ও অন্যান্য বর্জ্য ফেলা হচ্ছে খালে। এতে খালটি প্রায় ভরাট হয়ে গেছে। ২০১২ সালে রংপুর সিটি করপোরেশন হয়।
এর আগেই এই খাল সংস্কারে দুটি প্রকল্পের আওতায় ১২৫ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, কাজ হয়েছিল নামমাত্র। আবারও ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এই প্রকল্পের কাজও শেষ পর্যায়ে, কিন্তু এখনো খালটি খনন করা হচ্ছে না। সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯-১০ সালে খালটির কিছু অংশ পুনরায় খনন করা হয়েছিল, কিন্তু পরবর্তী সময়ে খালের বিভিন্ন জায়গা দখল হয়ে যায়।
স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ২০০৮ ও ২০১৩ সালে দখলদার উচ্ছেদের উদ্যোগ নেওয়া হলেও শতভাগ উচ্ছেদ সম্ভব হয়নি। খালটি সংস্কারে ২০১১ সালেও ২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, শ্যামাসুন্দরী খাল পুনরুদ্ধার ও সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য সমীক্ষা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। এরপর হয়তো আরো বরাদ্দ আসবে, কিন্তু খালটি নাব্য হবে কি?
আমরা চাই, খালে বর্জ্য ফেলা বন্ধ করা হোক। খালটি দখলমুক্ত করা হোক। দ্রুততম সময়ে খালটি যথাযথ সংস্কারের মাধ্যমে নাব্য করা হোক।