দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার জাতীয় উদ্যান দর্শনার্থীর পদচারণা মুখরিত
জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলায় জাতীয় উদ্যান ও আশুরার বিল বসন্তের এ ফাল্গুন মাসে হাজারো দর্শনাথীর পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে ।
দিনাজপুর জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলা বন বিভাগের রেঞ্জার মোঃ সাইফুল ইসলাম আজ রোববার বেলা ১১ টা এ তথ্য সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার বৃহত্তর এ বন বিভাগের মধ্যে অবস্থিত আশুরার বিলের দীর্ঘতম আঁকাবাঁকা আকৃতির কাঠের সেতু ও জাতীয় উদ্যানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে ভিড় জমাচ্ছেন দেশের বিভিন্ন এলাকার থেকে আসা ভ্রমণ পিপাসুরা। পরিবার পরিজন নিয়ে ছুটে আসছেন জাতীয় এ উদ্যানে। তাদের ভ্রমণের নিশ্চয়তা দেওয়ার জন্য বন বিভাগের কর্মীরা সর্বক্ষণই দয়ি ত্ব পালন করে আসছেন। ভ্রমণ পিপাসেরা এ বিশাল বনভূমি ও আশুরার বিলের নান্দনিক সৌন্দর্য উপভোগ করে তারা নিজেরা ধন্য হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য এ জাতীয় উদ্যান সংস্কার কাজ এবং অবকাঠাম স্থাপনসহ ঘোরাফেরার জন্য আরও কিছু সংস্কার কাজ করলেই ভ্রমণ পিপাসীদের চাহিদার অনেকাংশই পূরণ করা সম্ভব। সেই সাথে আগত দর্শনার্থীদের বনভোজনসহ মনোরম পরিবেশে তাদের খাওয়ার ও রান্নাবান্না ব্যবস্থা করে দেওয়া হলে দর্শনারা আরো স্বাচ্ছন্দে এ উদ্যান ভ্রমণে আগ্রহী হয়ে উঠবে। তবে প্রতিবছর বাড়বে এ উদ্যানে রাজস্ব আয়।
দিনজাপুরের নবাবগঞ্জে জাতীয় উদ্যান আর কাঠের সেতুটি যেন আশুরার বিলকে একসুতোয় বেঁধেছে। বনের ভেতর ছায়াঘেরা সবুজ মনোরম পরিবেশ ৫১৭ দশমিক ৬১ হেক্টর এলাকাজুড়ে উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় বিল। আর এ বিলের ওপরে অবস্থিত কাঠের সেতু প্রকৃতিপ্রেমীকে আকৃষ্ট করে। তাই ছুটির দিনে এখানে ভিড় করেন হাজারো প্রকৃতি প্রেমীরা। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঘুরতে আসছেন বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার দর্শনার্থী ও ভ্রমণ পিপাসীরা ।
দর্শনার্থী মোছা. সালেহা বেগম বলেন, ‘আমাদের বাড়ি রংপুর শহরে, শুনেছি দিনাজপুর নবাববগঞ্জ জাতীয় উদ্যান সবুজঘেরা প্রকৃতি। তাই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আজ এখানে বেড়াতে এসেছি। দেখে মন জুড়িয়ে গেলো।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ জাতীয় উদ্যানে যদি বাচ্চাদের খেলাধুলাসহ হৈ হল্লোড় করার মতো কিছু ব্যবস্থা থাকতো, তাহলে আরও বেশি আকর্ষণীয় হয়ে উঠতো।’ শিশুদের এ ধরনের ব্যবস্থা করার জন্য তিনি কর্তৃপক্ষের নিকট দাবি জানান।
বগুড়া থেকে পিকনিক করতে আসা নবীন সাহা বলেন, ‘এ সময়ে সবাই বিভিন্ন স্পর্টে পিকনিকে করতে যায়। আমরা এর আগে স্বপ্নপুরী, রামসাগর, ভিন্নজগৎসহ বিভিন্ন স্পর্টে পিকনিক করেছি। এবার এসেছি নবাবগঞ্জ জাতীয় উদ্যানে। এখানে আছে আাঁকবাঁকা একটি কাঠের সেতু। সেটি খুব আকর্ষণীয়। সেতুর ওপর দিয়ে হাঁটতে খুব ভালো লাগছে। আছে শালগাছ দিয়ে সবুজঘেরা বিশাল বন। যা দেখে সবাই আকৃষ্ট হবে।’
তিনি বলেন, ‘এটিকে জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করেছে সরকার। কিন্তু নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। নবাজগঞ্জ জাতীয় উদ্যানে ট্যুস্ট পুলিশের ব্যবস্থা করা উচিত।’সেই সাথে দর্শনাথীদের জন্য আরো কিছু সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। তবে এ জাতীয় উদ্যানটি প্রকৃত রূপ ধারণ করবে। দর্শনাথীরা ঘুরেফিরে করে আনন্দও পাবে।
জাতীয় উদ্যান রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. মাহাবুব হোসেন বলেন, ‘যদিও এখানে ট্যুরিস্ট পুলিশ নেই। স্থানীয় থানা পুলিশসহ আমরা স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর মাধ্যমে দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা দিয়ে থাকি।’
নবাবগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আতাউর রহমান বলেন, ‘নবাবগঞ্জ জাতীয় উদ্যানে প্রচুর দর্শনার্থী আসছেন। তাদের কথা বিবেচনা করে নবাবগঞ্জ থানা পুলিশসহ স্বেচ্ছসেবীদের মাধ্যমে দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দর্শনার্থীরা স্বাচ্ছন্দ্যে জাতীয় উদ্যানে আসছেন এবং নিরাপদে ফিরে যাচ্ছেন।’
উল্লেখ্য, ২০১০ সালের ২৪ অক্টোবর দিনাজপুর জেলার নবাবগঞ্জ বন বিটের ৫১৭ দশমিক ৬১ হেক্টর এলাকাকে জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করেছে সরকার। তবে কিছু উন্নয়ন কাজ করা হলেও এখনো অনেক কাজ বাকি রয়েছে। দর্শনার্থীদের ঘোরাফেরা ও মনোরঞ্জনের জন্য এ জাতীয় উদ্যানটি উন্নয়নের জন্য কাজ করা হলে প্রতিদিন দর্শনানাথীর সংখ্যা বাড়তেই থাকবে । সেই সাথে প্রতি বছর আসবে সরকারের বিপুলসংখ্যক রাজস্ব।
সুত্রঃবাসস