রংপুর বিভাগ

কৃষকের আড়াই বিঘা জমির করলা ও ঝিঙ্গা গাছ কাটল দুর্বৃত্তরা

জেলা প্রতিনিধি, দিনাজপুর : ‎দিনাজপুরের বীরগঞ্জে আবুল কালাম আজাদ না‌মের এক কৃষকের আড়াই বিঘা জমির করলা ও ঝিঙ্গা রাতের আঁধারে কেটে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। রাতের অন্ধকারে দুর্বৃত্তের হাতে ধ্বংস হলো কৃষকের স্বপ্ন। এ ঘটনায় প্রায় ৫ লাখ টাকার ক্ষতির আশঙ্কা করেছেন ভুক্তভোগী কৃষক আবুল কালাম আজাদ। তবে কাউকেই শনাক্ত করতে পারেননি কেউ। বৃহস্পতিবার (৮ মে) রাতে বীরগঞ্জ উপজেলার ৫ নম্বর সুজালপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড বড় শীতলাই এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। কৃষক আবুল কালাম আজাদ ওই গ্রামের মৃত মুকু মুদ্দিনের ছেলে।

এমন ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের মাথায় হাত পড়েছে এবং কৃষকের বাড়িতে কান্নার আহাজারি।
‎স্থানীয়রা জানান, এ কৃষকের অধীনে প্রতিদিন নারী-পুরুষ ১০ জন কাজ করেন। তাদের এখানে একটি কর্মসংস্থান হয়েছিল। এমন ঘটনা যেন আর কারও না ঘটায়। কৃষকের প্রায় ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা নষ্ট হয়েছে। আর কিছুদিন হলেই তার বীজ বিক্রি করতেন। দিনমুজুর জোহরা বেগম বলেন, আমি প্রায় ২ মাস থেকে এখানে কাজ করছি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কাজ করে বাড়িতে গিয়েছিলাম আর সকালে খেতে এসে দেখি, করলা ও ঝিঙ্গার গাছগুলো শুকিয়ে গেছে। এমন দেখে আমরা সবাই কান্না করেছি, যারাই এমন করুক তাদের আমরা বিচার ও শাস্তি চাই। তিনি মানুষ হিসেবে অনেক ভালো। আমাদের সঙ্গে সারাদিন মাঠে কাজ করেন। যে কোনো লেনদেন সবসময় দিয়ে দেয়। কোনোদিন ঝামেলা হয়নি।

‎দিন মজুর রসনা খাতুন বলেন, আমি এখানে ২/৩ মাস থেকে কাজ করি এবং আমি এখানে বীজের জন্য ক্রস করি। আমি এসে দেখি সব গাছ কেটে ফেলেছে। কোনো পাষণ্ড এমন করেছে জানি না, তার শাস্তি দেওয়া হোক।

‎পার্শ্ববর্তী গ্রামের আব্দুল মালেক বলেন, আমি খবর পেয়ে দেখতে এসেছি, আড়াই বিঘা জমির সব গাছ একটা একটা করে কেটে দিয়েছে। এমন নৃশংস ঘটনা যে ঘটিয়েছে, তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দরকার। সন্ধ্যার পরে আমরা একটি গাছের পাতাও ছিড়ি না, যে রাতে এ গাছগুলো কেটেছে তার মহা অন্যায় হয়েছে। যারা এটি করেছে তাদেরকে প্রশাসনের মাধ্যমে আইনের আওতায় আনা উচিৎ। নইলে সামনের দিনে আরও ক্ষতি করার চেষ্টা করবে।

‎ভুক্তভোগী কৃষক আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমার মোট সেখানে ৬ বিঘা জমি রয়েছে। তার মধ্যে আড়াই বিঘা জমির ঝিঙ্গা ও করলার গাছ কেটে দিয়েছে। আনুমানিক তার ৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। আমি প্রতিদিন দশ জন লেবার কাজ করায় ৩০০ টাকা করে ৩ হাজার টাকা দেয়। ১৭ দিন কাজ করছি, আজকে দিয়ে ১৮ দিন হতো। তিনি আরও বলেন, এই করলার বীজ প্রতি কেজি ২৫শ টাকা কেজি ও ঝিঙ্গার প্রতি কেজি বীজ ১৭শ টাকা ধরে বিক্রি করা যেত। কারও সঙ্গে আমার কোনো পূর্ব শত্রুতা নেই। আমি কোনো দিন কোনো ক্ষতি করিনি।

‎২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য হোসেন আলী বলেন, আড়াই বিঘা জমির প্রতিটা গাছ কেটে ফেলেছে। এগুলো তিনি বীজ করেন, লাখ লাখ কৃষক এই বীজ দিয়ে চাষ করত। এদেরকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্ত শাস্তি দরকার।

‎বীরগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ শরিফুল ইসলাম জানান, গাছগুলো কেটে ফেলার খবর পেয়েছি। উপ-সহকারী সরেজমিন পরিদর্শন করেছে। এটি দুঃখজনক ও হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার সঙ্গে কে সম্পৃক্ত রয়েছে তা তদন্ত করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষককে থানায় লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছি।

বীরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল গফুর জানান, এ ঘটনায় একটি অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী কৃষক। তদন্ত সাপেক্ষে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।