এপকম হিরো অ্যাওয়ার্ড ২০২৪-এ পুরস্কৃত হলো রংপুরের নবপ্রভাত ফাউন্ডেশন
স্টাফ রিপোর্টার ।। বাংলাদেশের প্রান্তিক যুব, নারী ও হিজরাদের অধিকার নিয়ে কাজ করা অগ্রণী যুব নেতৃত্বাধীন সংগঠন নবপ্রভাত ফাউন্ডেশন-কে কমিউনিটি অর্গানাইজেশন ক্যাটাগরিতে এপকম হিরো অ্যাওয়ার্ড ২০২৪ প্রদান করা হয়েছে। এই মর্যাদাপূর্ণ স্বীকৃতি সংগঠনের নিরলস প্রচেষ্টা, ত্যাগ, এবং বাংলাদেশের প্রান্তিক হিজরা ও যুব সম্প্রদায়ের মানবাধিকার রক্ষায় অবদানকে তুলে ধরে।
হিরো অ্যাওয়ার্ড—যা এশিয়া এবং প্যাসিফিক অঞ্চলের হিজরা ও প্রান্তিক যুবদের অধিকার এবং স্বাস্থ্যকে এগিয়ে নিতে কাজ করা ব্যক্তিবর্গ এবং সংগঠনকে স্বীকৃতি জানায়—এই সম্মানটি প্রতি বছর এপকম কর্তৃক আয়োজিত হয়। এপকম এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চল ভিত্তিক সংস্থা, যার প্রধান কার্যালয় থাইল্যান্ডে অবস্থিত। নবপ্রভাত ফাউন্ডেশন তাদের নির্ভীক কর্মসূচি, গ্রামীণ কমিউনিটি পর্যায়ে এইচআইভি নিয়ে সচেতনতা, কমিউনিটির অধিকার ও ক্ষমতায়ন এবং সামাজিক অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কাজের জন্য বিশেষভাবে প্রশংসিত হয়েছে।
“এই পুরস্কার পেয়ে আমরা গভীরভাবে সম্মানিত এবং কৃতজ্ঞ,” বলেন নবপ্রভাত ফাউন্ডেশনের সভাপতি মোঃ ইয়াছিন আলী। “এই স্বীকৃতি আমাদের সহকর্মীদের কঠোর পরিশ্রম এবং বাংলাদেশের প্রান্তিক সম্প্রদায়ের অদম্য সাহসের সাক্ষ্য বহন করে। এটি আমাদের সামনের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় আরও শক্তি এবং উৎসাহ জোগাবে।”
প্রান্তিক সম্প্রদায়কে ক্ষমতায়ন ২০১৮ সালে ২০ জুন রংপুরের একটি প্রত্যন্ত গ্রামে মোঃ ইয়াছিন আলীর নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত নবপ্রভাত ফাউন্ডেশন, এমন একটি অঞ্চলে কাজ করছে যেখানে দারিদ্র্য, নিরক্ষরতা, ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা, এবং হিজরা ও প্রান্তিক সম্প্রদায়ের প্রতি ঘৃণা প্রকট। এই প্রতিকূলতার মধ্যেও সংগঠনটি উল্লেখযোগ্য কিছু উদ্যোগ সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছে, যেমন: প্রান্তিক হিজরা, নারী ও যুব সম্প্রদায়ের কর্মসংস্থান প্রকল্প, যা গ্রামীণ নারী, হিজরা ও বেকার যুবদের জন্য প্রশিক্ষণ এবং চাকরির সুযোগ তৈরি করেছে। ভয়েস অফ কালারস, যা গ্রামীণ প্রান্তিক যুবকদের নেতৃত্বের গুণাবলী বিকাশে সহায়তা করেছে।
রোহিঙ্গা প্রান্তিক যুব সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা এবং সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা উন্নয়ন প্রকল্প, যা প্রান্তিক রোহিঙ্গা যুবদের শিক্ষার সুযোগ, মানসিক স্বাস্থ্য সেবা, এবং এইচআইভি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করেছে।
এশিয়া ফাউন্ডেশন এর রিলিজিয়াস ইকুয়ালিটি এন্ড এক্সেস টু জাস্টস, প্রকল্পের সহযোগিতায় নবপ্রভাত ফাউন্ডেশন রংপুর সদর ও মিঠাপুকুর থানায় ধর্মীয় সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় সচেতনমূলক পোষ্টার বিতরণ, যুব টকশো, পথ নাটক প্রদর্শনী ও অনলাইন ক্যাম্পেইন আয়োজন করেছে।
ইউএআইডি সমতা প্রকল্পের, সহযোগিতায় নবপ্রভাত ফাউন্ডেশন হিজরা জনগোষ্ঠী ও প্রান্তিক যুবকদের আইনী সহযোগিতা থেকে শুরু করে নানা রকম প্রশিক্ষণ ও সচেতনমূলক দিবস পালন করে যাচ্ছে। এছাড়াও প্রান্তিক এই জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে ফ্রি প্রেস আনলিমিটেট, আর্টিকেল নাইনটিন, ক্রিয়া এর মতো স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের সাথে কার্যক্রম শুরু করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এই প্রকল্পগুলো শত শত প্রান্তিক মানুষের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে এবং তাদের নতুন আশা ও সাহস দিয়েছে।
চ্যালেঞ্জ এবং অর্জন এই পুরস্কার বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি এমন একটি দেশে কাজের স্বীকৃতি দেয় যেখানে আইনগত এবং সামাজিক প্রতিবন্ধকতা হিজরা ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষার পথে বড় বাধা। এই সম্মান সংগঠনের অর্জনগুলোকে উৎযাপন করার পাশাপাশি বাংলাদেশে প্রান্তিক সম্প্রদায়ের চলমান সংগ্রামগুলোকে তুলে ধরে।
পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানটি ২২ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে থাইল্যান্ডের ব্যাংককের সুকোসল হোটেল-এ অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে নবপ্রভাত ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মোঃ ইয়াছিন আলী সংগঠনের পক্ষ থেকে পুরস্কারটি গ্রহণ করার কথা থাকলেও ভিসা জটিলতার কারণে সরাসরি উপস্থিত থাকতে পারেন নি। তবে পুরষ্কারটি গ্রহণের জন্য এপকম এর থাইল্যান্ড অফিসে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন মোঃ ইয়াছিন আলী।
“এই পুরস্কার আমাদের কাজের স্বীকৃতি প্রদান করে এবং আমাদের নতুন শক্তি দেয়। এটি কেবল নবপ্রভাত ফাউন্ডেশনের নয়, বরং বাংলাদেশের প্রতিটি প্রান্তিক কণ্ঠের বিজয়,” বলেন মোঃ ইয়াছিন আলী।
হিরো অ্যাওয়ার্ড নবপ্রভাত ফাউন্ডেশনকে তার মিশন প্রসারিত করতে এবং সামাজিক পরিবর্তনকে এগিয়ে নিতে নতুন অংশীদারিত্ব গঠনের সুযোগ তৈরি করে দেবে। এই সম্মান ব্যবহার করে সংগঠনটি আরও রিসোর্স সংগ্রহ, প্রভাব বিস্তার, এবং প্রান্তিক সম্প্রদায়ের জন্য অধিকতর সুযোগ সৃষ্টিতে কাজ করবে।
মূলত হিরো অ্যাওয়ার্ড হল একটি বার্ষিক উদ্যোগ, যা এশিয়া এবং প্যাসিফিক অঞ্চলে প্রান্তিক যুব ও হিজরা সম্প্রদায় এবং এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য স্বাস্থ্য, অধিকার এবং সমতা অর্জন ও উন্নয়নে কাজ করা অসাধারণ ব্যক্তিবর্গ এবং সংগঠনকে স্বীকৃতি দেয়।