তথ্যপ্রযুক্তি

এটুআই এর বছরব্যাপী উদ্যোগ স্মার্ট বাংলাদেশের ভিত্তি স্থাপনের চাবিকাঠি

দেশের শীর্ষস্থানীয় ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন প্রোগ্রাম অ্যাসপায়ার টু ইনোভেট (এটুআই) এর বছরব্যাপী উদ্ভাবনী উদ্যোগগুলো ২০৪১ সালের মধ্যে একটি স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার ভিত্তি তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করা হচ্ছে।

একটি স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে এবং নাগরিকদের দোরগোড়ায় স্মার্ট পরিষেবাগুলো নিয়ে আসার জন্য, এটুআই অনেকগুলো স্মার্ট প্রকল্প চালু করেছে। এর অনেক উদ্যোগ এবং সংশ্লিষ্ট প্রকল্প বিদায়ী বছরে ১৭টির বেশি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছে।

এই বছরের ১৮ অক্টোবর শেখ রাসেল দিবস উপলক্ষে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাঁচটি উদ্ভাবনী প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। সেগুলেঅ হলো- ‘স্মার্ট ৩৩৩,’ ‘স্মার্ট ই-ট্রেড লাইসেন্স,’ সমন্বিত ইলেকট্রনিক টোল সংগ্রহ পরিষেবা ‘একপাস,’ শিক্ষার্থীদের শিক্ষা এবং ব্যাপক মূল্যায়নের অ্যাপ ‘নৈপূণ্য’ এবং গর্ভবতী মহিলাদের জন্য ‘স্মার্ট প্রেগন্যান্সি মনিটরিং সিস্টেম’।

আধুনিক এবং সমন্বিত তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে নাগরিক পরিষেবাগুলোকে সহজীকরণ এবং সেগুলোকে আরও ব্যবহারযোগ্য করার দিকে কাজ করার পাশাপাশি, ইউএনডিপি-র সহায়তায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং আইসিটি বিভাগের অধীনে নাগরিকদের নির্দিষ্ট প্রয়োজন অনুসারে এটুআই পৃথক পরিষেবাগুলো বিকাশের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

নাগরিক পরিষেবাগুলোকে আরও সহজলভ্য এবং ব্যবহারকারী-বান্ধব করতে এটুআই-এর বছরব্যাপী কার্যক্রম ব্যাখ্যা করে এটুআই-এর যোগাযোগ ও আউটরিচ কনসালটেন্ট আদনান ফয়সাল বলেন, ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাপ ‘সাথী’ একটি উদ্যোগ হিসেবে চালু করা হয়েছে। এটি স্মার্ট বাংলাদেশ লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করার জন্য ডিজিটালভাবে সরকারি সেবা সংক্রান্ত তথ্য সরবরাহ করবে।

এটুআই প্ল্যাটফর্মটি চালু করা হয়েছিল, একটি একক ছাতার নীচে সমস্ত জনসেবাকে একীভূত করে প্রদানের লক্ষে। তিনি বলেন, বিদায়ী বছরে ২০৯টি সরকারী পরিষেবা ডিজিটাল করা হয়েছে।

  ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়েছে। শত বছরের পুরানো পদ্ধতির তথ্য, সেবা, লেনদেন ও সরকার ব্যবস্থাকে সময়োপযোগী ও প্রযুক্তিনির্ভর করার কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে ডিজিটাল বাংলাদেশে। যা স্মার্ট বাংলাদেশে হবে আরো আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমন্বিত।   গত বছর ১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের ঘোষণা দেন। স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য নির্ধারণ করেন চারটি স্তম্ভ; স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার ও স্মার্ট সমাজব্যবস্থা। ২০২৩-২০৪১ এই ১৮ বছর হবে আমাদের স্মার্ট বাংলাদেশ যাত্রা।স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে এটুআই এর বছরব্যাপী প্রচেষ্টার একটি ঝলক:

প্রকিউরমেন্ট প্রক্রিয়ার জন্য আইএসও সার্টিফিকেট অর্জন:

এটুআই এর প্রকিউরমেন্ট ম্যানেজমেন্ট সরকারী ক্রয় প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা এবং গুণমান উন্নত করার লক্ষ্যে ক্রেতা-সরবরাহকারী সম্পর্ক উন্নয়নে এবং বেসরকারি খাতে দক্ষতা বৃদ্ধিতে অসামান্য অবদানের জন্য আন্তর্জাতিক মান সংস্থা (আইএসও) সার্টিফিকেট অর্জন করেছে।

 এক্সেসিবিলিটি নির্দেশিকা:

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক ডিজিটাল সেবা প্রদান নিশ্চিতে নেতৃত্ব দিচ্ছে এটুআই। এলক্ষ্যে এটুআই-এর ধারাবাহিক প্রচেষ্টার ফল হিসেবে সরকার এক্সেসিবিলিটি গাইডলাইন প্রণয়ন করেছেন।

বাংলাদেশের জাতীয় উদ্ভাবন সংস্থা:

 দেশে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের একটি নতুন যুগের সূচনা করে, এই বছরের জুলাই মাসে সংসদে ‘এজেন্সি টু ইনোভেট (এটুআই) বিল ২০২৩’ পাস করা হয়েছে বলে এটুআই একটি পূর্ণাঙ্গ সংস্থা হতে প্রস্তুত। একটি উদ্ভাবন মধ্যস্থতাকারী হিসাবে, এটি এসডিজি অর্জন এবং স্মার্ট বাংলাদেশ অর্জনের জন্য তার ‘সরকার-সরকার’ দৃষ্টিভঙ্গি অব্যাহত রেখে নতুন, মিশন-চালিত নীতিগুলোকে অগ্রসর করবে।

ই-কোয়ালিটি সেন্টার ফর ইনক্লুসিভ ইনোভেশন:

এটুআই বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে ডিজিটাল বিভাজন কমানোর জন্য সক্রিয় পদক্ষেপের জন্য ‘ই-কোয়ালিটি সেন্টার ফর ইনক্লুসিভ ইনোভেশন’ প্রতিষ্ঠা করে, শূন্য ডিজিটাল বিভাজনসহ একটি বিশ্বকে কল্পনা করে। এই কেন্দ্রটি, এটুআই, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং আইসিটি বিভাগ এবং ইউএনডিপি-এর যৌথ প্রচেষ্টায়, এই বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে জাতিসংঘের ৭৮তম সাধারণ অধিবেশনের সময় আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করা হয়েছিল। এর আগে, বিশ্বব্যাপী ডিজিটাল বৈষম্য কমানোর লক্ষ্যে জিরো ডিজিটাল ডিভাইড নামে একটি বিশ্বব্যাপী প্রচার শুরু হয়েছিল।

লক্ষ্য অর্জনের জন্য, ই-কোয়ালিটি সেন্টার ইন্টারন্যাশনাল আইসিটি ইনোভেশন ম্যাচিং ফান্ড চালু করেছে যা ইতিমধ্যে পাঁচটি দেশকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছে: গাম্বিয়া, উগান্ডা, সাও টোমে এবং প্রিন্সিপে, সোমালিয়া এবং ঘানা।

ডিপিআই-এআই আন্তর্জাতিক সম্মেলন:

নাগরিক পরিষেবাগুলোকে ব্যক্তি পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়ার জন্য একটি ইকোসিস্টেম তৈরির লক্ষ্যে এ বছর এটুআই -এর উদ্যোগের অধীনে একটি দুই দিনের আন্তর্জাতিক সম্মেলন ডিজিটাল পাবলিক ইনফ্রাস্ট্রাকচার আয়োজন করা হয়েছিল। এটি ডিপিআই এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং ডিজিটালভাবে ন্যায়সঙ্গত বিশ্ব তৈরির উপর জোর দিয়েছে।

  জাতীয় সংসদে এজেন্সি টু ইনোভেট (এটুআই)-২০২৩ বিল পাস

 দেশের জনবান্ধব সেবাব্যবস্থা ও উদ্ভাবনী সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠায় এটুআই-কে প্রকল্প থেকে এজেন্সি গঠন করতে একাদশ জাতীয় সংসদে ‘এজেন্সি টু ইনোভেট (এটুআই)’ বিল পাস করা হয়েছে। ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি- ইউএনডিপির অর্থায়নে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) কর্মসূচি শুরু হয়। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ২০১৮ সালে এটুআই’কে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের আওতায় বাস্তবায়নাধীন প্রকল্প হিসেবে ন্যস্ত করা হয়। পরবর্তীতে ২০২০ সালে শুরু হয় এসপায়ার টু ইনোভেট (এটুআই) এর কার্যক্রম। শিগগিরই তথ্যপ্রযুক্তি খাতে পলিসি এজেন্সি হিসেবে যাত্রা শুরু করবে এটুআই।

উদ্ভাবনে এটুআই

উদ্ভাবনী সংস্কৃতি বিকাশে এবং উদ্ভাবনের মাধ্যমে বিদ্যমান সমস্যার সমাধানে এটুআই ইনোভেশন চ্যালেঞ্জ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে আসছে। এবছর জেলাসমূহের উদ্ভাবনী কার্যক্রমভিত্তিক প্রতিযোগিতা স্মার্ট ডিস্ট্রিক্ট ইনোভেশন চ্যালেঞ্জ; দেশে রকেট তৈরির আইডিয়া নিয়ে রকেট্রি ইনোভেশন চ্যালেঞ্জ; গৃহস্থালি ও শিল্প-প্রতিষ্ঠানে পানি ব্যবহারের জন্য স্মার্ট মিটার ও সাব-মিটার তৈরি; গর্ভবর্তী নারীদের ডিজিটাল উপায়ে গর্ভাবস্থার গুরুত্বপূর্ণ শারীরিক তথ্য পর্যবেক্ষণ; সরকারি অফিসের নথির জন্য কাস্টমাইজড পত্র তৈরি এবং আর্থিক লেনদেনে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধিতে উদ্ভাবনী আইডিয়া নিয়ে ইনোভেশন চ্যালেঞ্জ প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়েছে।

দুর্যোগ মোকাবেলায় জাতীয় হেল্পলাইন ৩৩৩

 দেশের দুর্যোগের কঠিন সময়ে জনগণের পাশে থাকে জাতীয় হেল্পলাইন ৩৩৩। উপকূলের ধেয়ে আসা অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ মোকাবেলায় দিনের ২৪ ঘণ্টা সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয় জাতীয় হেল্পলাইন ৩৩৩। টোল-ফ্রি কল সেবার মাধ্যমে ঘূর্ণিঝড় সংক্রান্ত তথ্য, সতর্ক সংকেত ও আবহাওয়া বার্তা এবং জরুরি সহায়তা দিয়েছে এই জাতীয় হেল্পলাইন। এই সংকটাপন্ন সময়ে ‘মোখা’ সংক্রান্ত ১৪ লাখ কল এসেছে। দুর্যোগ সহায়তার কল আসে ৩৪ হাজারেরও বেশি।

সুত্রঃবাসস