রকমারী

আল কুরআনের বর্ণনায় দিন ও রাত

দিনের পর আসে রাত, রাতের পর আসে দিন। রাত যখন আসে তখন অন্ধকার ঢেকে দেয় দিনের আলোকে, আবার রাত যখন বিদায় নেয় তখন দিনের আলো সরিয়ে দেয় রাতের অন্ধকার। এমনটা প্রতিদিনই হয়। সারাবছর ধরেই হয়। রাত-দিনের বিরামহীন এ চলায় একে-অন্যকে খুবই দ্রুততার সঙ্গে পশ্চাদ্ধাবন করে। তাই আমরা দেখি রাতের যেখানে শেষ, সেখানেই দিনের সূচনা; আবার যেখানেই দিনের সমাপ্তি, সেখানেই রাতের আগমন। এক মুহূর্তকালেরও ব্যবধান নেই এ দুয়ের মাঝে।

পবিত্র কুরআনের বর্ণনা : তিনি দিনকে ঢেকে দেন রাত দিয়ে, এভাবে যে, রাত দ্রুতগতিতে দিনের পেছনে পেছনে চলে। (সূরা আরাফ : ৫৪)। সূরা রাদের ৩ নং আয়াতেও একই কথা : তিনি দিনকে রাত দিয়ে আচ্ছাদিত করেন। দিন-রাতের চব্বিশ ঘণ্টায় ঘড়িতো একইভাবে ঘোরে। শুধু ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বুঝা যাবে না, সময় এখন দিন, না রাত। ঘড়ির কাটায় যখন ছয়টা বাজে, তখন হতে পারে বিকেল, হতে পারে রাত বা সন্ধ্যা। বুঝতে হয় আমাদের বাইরের দিকে তাকিয়ে।

এ হিসেবে পুরো চব্বিশ ঘণ্টাই একই রকম সময় হওয়ার কথা। কিন্তু না, আল্লাহ তা’আলা এ সময়ের কিছু কিছু অংশকে বিশেষ কিছু কাজের জন্যে নির্ধারণ করে দিয়েছেন। যেমন, রাতকে তিনি বানিয়ে দিয়েছেন বিশ্রামের সময় আর দিনের বেলাকে নির্ধারণ করে দিয়েছেন উপার্জন ও কাজের জন্য। এজন্যেই তো আমরা দেখিÑ দিনের বেলা হাড়ভাঙা পরিশ্রম আর রাতের বেলা পরম তৃপ্তির ঘুম এটাই মানুষের স্বাভাবিক বাস্তবতা।

দিনের সকল পরিশ্রম ও ক্লান্তি হারিয়ে যায় রাতের ঘুমের পরশে। রাতের ঘুম এতটাই প্রশান্তির। এ ঘুম থেকে জেগে আমরা আবার নতুন উদ্দীপনায় নেমে পড়ি ঘাম ঝড়ানো পরিশ্রমের ময়দানে। এই আমাদের স্বাভাবিকতা। রাতের ঘুম যদি পরিপূর্ণ না হয়, কিংবা কোনো কারণে একটি রাত নির্ঘুম কেটে যায়, দিনের বেলা দীর্ঘক্ষণ ঘুমিয়ে থেকেও রাতের ঘুমের শূন্যতা পূরণ করা যায় না। আবার রাতের সামান্য ঘুমও ছড়িয়ে দিতে পারে দেহ-মনে অনাবিল প্রশান্তি।

পবিত্র কুরআনের বর্ণনা : তিনি সে-ই সত্তা, যিনি তোমাদের জন্য রাত সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাতে বিশ্রাম গ্রহণ করো এবং দিনকে করেছেন আলোয় উজ্জ্বল। নিশ্চয় এতে বহু নিদর্শন রয়েছে সে লোকদের জন্যে, যারা শোনে। (সূরা ইউনুস : ৬৭)। তিনি সে-ই সত্তা, যিনি তোমাদের জন্যে রাতকে পোশাকস্বরূপ, ঘুমকে বিশ্রামের মাধ্যম আর দিনকে বানিয়েছেন জেগে ওঠার সময়। (সূরা ফুরকান : ৪৭)।

এ আয়াতেও রাতের বিশ্রামের কথাই বলা হয়েছে। চাদরের ন্যায় রাতের অন্ধকার সকলকে ঢেকে দেয়। সে অর্থে রাত যেন আমাদের পোশাক। আর অন্ধকারের চাদরে ঢাকা পড়ে মানুষ কাজ-কর্ম ছেড়ে দিয়ে বিশ্রাম করে, ঘুমিয়ে নেয়। এই তো বাস্তবতা।

সূরা কাসাসের আয়াত দু’টি খুবই হৃদয়কাড়া। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন : তুমি বলো, তোমরা ভেবে দেখেছ কি, আল্লাহ যদি তোমাদের ওপর রাতকে কিয়ামতের দিন পর্যন্ত স্থায়ী করে দেন, তবে আল্লাহ ছাড়া আর মাবুদ কে আছে, যে তোমাদের আলো এনে দিতে পারে? তবে কি তোমরা শুনতে পাও না? তুমি বলো, তোমরা ভেবে দেখেছ কি, আল্লাহ যদি তোমাদের ওপর দিনকে কিয়ামতের দিন পর্যন্ত স্থায়ী করে দেন, তবে আল্লাহ ছাড়া আর মাবুদ কে আছে, যে তোমাদেরকে একটি রাত এনে দেবে, যাতে তোমরা বিশ্রাম করবে? তবে কি তোমরা দেখতে পাও না? (সূরা কাসাস : ৭১-৭২)।

দিনের আলোয় মানুষ নানা রকম কাজ-কর্মে জড়িয়ে থাকে। রাতের একটি বড় অংশ কেটে যায় বিশ্রামে। দিনের আলো সরিয়ে নিজের জায়গা করে নেয় রাতের অন্ধকার। এই যে আলো-আঁধারের আবর্তন, মানুষের স্বাভাবিক জীবনে তা যে কতটা প্রভাব বিস্তারকারী, উপরোক্ত আয়াত দু’টিতে সেদিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে।

আয়াত দু’টি থেকে এ-ও প্রতীয়মান হয়, কাজকর্ম আর পরিশ্রমের ক্লান্তি শরীর থেকে ঝেড়ে ফেলার জন্য উপযুক্ত সময় রাতই, ঠিক যেমন আয়-উপার্জনের জন্যে উপযুক্ত সময় দিন। সূরা কাসাসের পরবর্তী আয়াতটিতেই আল্লাহ তা’আলা বিষয়টি স্পষ্ট করে দিয়েছেন : আপন মেহেরবানীতেই তিনি তোমাদের জন্য রাত ও দিন সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা রাতে বিশ্রাম করতে পার আর (দিনে) তাঁর অনুগ্রহ সন্ধান করতে পার; এবং যাতে তোমরা শোকর আদায় করতে পার। (সূরা কাসাস : ৭৩)।

দিনের আলোতে আমরা যে কেবলই অর্থ উপার্জন করি এমন নয়। দিনের আলোর রয়েছে নানাবিদ উপকার। এ বিষয়টি আধুনিক গবেষণাতেও প্রমাণিত। মানুষের শরীরের অতি প্রয়োজনীয় ভিটামিন ডি-এর প্রধান উৎস সূর্যের আলো। এ আলোতে শোভাময় হয়ে ওঠে বিভিন্ন ধরনের ফল-ফসলের বাগান। এ আলো যেখানে পর্যাপ্ত থাকে না, সেখানকার ফসলও ভালো হয় না।

দিনে-রাতে এই যে আল্লাহ তা’আলা আমাদের জন্যে নানাবিদ কল্যাণ ছড়িয়ে রেখেছেন, পবিত্র কুরআনের একাধিক আয়াতে সংক্ষেপে বিষয়টি এভাবে বর্ণিত হয়েছে : তিনি তোমাদের কল্যাণে রাত ও দিনকে নিয়োজিত রেখেছেন। (সূরা ইবরাহীম : ৩৩)।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *