আবারও আখ চাষে ঝুঁকছে ঠাকুরগাঁওয়ের চাষিরা
ঠাকুরগাঁওয়ে আবারও আখ চাষে আগ্রহী হচ্ছে চাষিরা। সুফল বয়ে আনছে আখ চাষে আগ্রহ ফেরাতে সরকারের নেয়া উদ্যোগ। এভাবে আখ চাষ বাড়তে থাকলে জেলার একমাত্র শিল্পপ্রতিষ্ঠানটি বাঁচানো সম্ভব বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা।
ঠাকুরগাঁও সুগারমিল সূত্রমতে, গত বছরে ঠাকুরগাঁও সুগারমিলে আখ মাড়াই হয়েছে ৫২ হাজার মেট্টিক টন। যা বেড়ে এবার হয়েছে ৭৪ হাজার মেট্টিক টন। চলতি মৌসুমের আখ রোপণ অনুযায়ী আগামী বছর ১ লাখ মেট্টিক টন ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছে ঠাকুরগাঁও সুগারমিল কর্তৃপক্ষ।
চিনি উৎপাদনের মূল কাঁচামাল আখ। শুধু ঠাকুরগাঁও সুগারমিল ১০০ দিন চালাতে প্রায় ১৫০ লাখ মেট্টিক টন আখের প্রয়োজন হয়। তবে আখ চাষে স্বল্প মুনাফা ও আখ বিক্রির টাকা পরিশোধে দীর্ঘ সময়ের জটিলতায় আখ চাষ থেকে চাষিরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছিল। তাই পর্যাপ্ত আখের অভাবে বাড়তে থাকে লোকসান। ফলে ২০২০ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত ১৫টি সুগার মিলের মধ্যে ৬টি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এর মধ্যে পাশাপাশি অবস্থিত পঞ্চগড় সুগার মিল ও সেতাবগঞ্জ সুগার মিল বন্ধ হওয়ার পর থেকে শঙ্কা বাড়ে ঠাকুরগাঁও সুগারমিল নিয়ে।
তবে আখ চাষিদের আগ্রহ ফেরাতে ২০২৪-২৫ আখমারাই মৌসুমে কুয়ান্টাল প্রতি ১৫০ টাকা দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। আগে আখ বিক্রির টাকা চাষিদের হাতে পৌঁছাতে কয়েকমাস সময় লাগতো। তবে নতুন ব্যবস্থায় মিলে আখ পৌঁছানোর ২ থেকে তিন দিনে টাকা পরিশোধ হচ্ছে। এতে আবারও আখচাষে ঝুঁকছে চাষিরা। সঠিক মূল্য ও দ্রুত টাকা পরিশোধের ব্যবস্থা অব্যাহত থাকলে পর্যাপ্ত আখের উৎপাদন হবে বলে বলছে চাষিরা।
ঠাকুরগাঁও রোড এলাকার চাষি মানিক মিঞা বলেন, ‘আমি ফসল বিক্রির টাকা দিয়ে নতুন করে ফসল রোপণ করি। কিন্তু আখ বিক্রি করলে সেই টাকা পেতে প্রায় দুই মাস সময় লাগতো, যা আমার জন্যে অনেক সমস্যার বিষয় ছিল। তাছাড়া আখ বিক্রি করে মুনাফা কম ছিল। এখন যেহেতু দ্রুতই টাকা পরিশোধ পাচ্ছি, দামও কিছুটা বেড়েছে। তাই আবারও আখচাষ শুরু করেছি।’
আখচাষি জহির ইসলাম বলেন, ‘একটা সময় আমি আমার ২০ বিঘা জমিতে আখের চাষ করতাম। তবে আস্তে আস্তে সেই জমিতে আলু ও ভুট্টার চাষ শুরু করি। এখন সুগারমিলে মিলের নতুন দাম ও নিয়ম শুরু করার পরে আবারও আখচাষ শুরু করেছি।’
ঠাকুরগাঁও সুগারমিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শাহাজান কবির বলেন, ‘আখ চাষিদের আগ্রহ বাড়াতে আমরা বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছি। কারণ সুগারমিল বাঁচাতে পর্যাপ্ত আখের বিকল্প নেই। এখন যে হারে আখচাষে চাষিরা আগ্রহী হচ্ছে, আগামী মৌসুমগুলোতে চাহিদা অনুযায়ী আখের যোগান পাওয়া যাবে বলে আশা করছি।’