শ্রমিকের সম্মান ছাড়া উন্নয়ন নয়: প্রধান উপদেষ্টার বার্তা
“শ্রমিকের অবস্থান পাল্টানো ছাড়া বৈষম্যহীন বাংলাদেশ সম্ভব নয়”-মহান মে দিবস ও জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এমন দ্ব্যর্থহীন বক্তব্য দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে এক রাষ্ট্রীয় আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে ভাষণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, “শ্রম সংস্কার কমিশনের দেওয়া প্রস্তাব শুধু কাগজে নয়, বাস্তবায়নে যেতে হবে। আমাদের অগ্রাধিকার হওয়া উচিত-আশু করণীয় নির্ধারণ করে দ্রুত বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ।”
শ্রমিক ছাড়া উন্নয়ন চিন্তা অকল্পনীয়
দেশের উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি শ্রমজীবী জনগোষ্ঠী উল্লেখ করে তিনি বলেন, “পোশাক শিল্প হোক কিংবা কৃষি, নির্মাণ হোক কিংবা প্রযুক্তি-সবখানেই শ্রমিকের ঘাম, মেধা ও সাহসিকতা লুকিয়ে রয়েছে।” তিনি দৃঢ়ভাবে বলেন, “শুধু মালিকের পুঁজি নয়, শ্রমিকের অধিকার এবং কল্যাণ নিশ্চিত না করলে উন্নয়ন হবে একচোখা এবং বিভক্ত সমাজের প্রতিচ্ছবি।”
শুধু দিবস নয়, এটি আন্দোলনের রূপান্তর
শ্রমিকদের ঐতিহাসিক আত্মত্যাগের স্মরণে দেওয়া বক্তব্যে ড. ইউনূস বলেন, “এই দিনটি কেবল স্মৃতিচারণের জন্য নয়, এটি ভবিষ্যতের জন্য দিকনির্দেশনাও বটে।” তিনি আরও বলেন, “এই মে দিবস শুধু অতীতের সংগ্রামের গৌরব নয়, এটি বৈষম্যের অবসান ঘটিয়ে ছাত্র-শ্রমিক-জনতার সম্মিলিত ভবিষ্যতের নকশাও।”
নিরাপদ কর্মপরিবেশের প্রতিশ্রুতি
একই মঞ্চে মে দিবসের পাশাপাশি জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি দিবস ২০২৫ পালনের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টা।
“শ্রমিকের জন্য নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা কেবল মানবিক দায়িত্ব নয়, এটি অর্থনীতির স্থিতি ও শিল্পখাতের বিকাশের পূর্বশর্ত,” বলেন তিনি। এই লক্ষ্যে শ্রম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে তিনি সরকারের সক্রিয় পদক্ষেপ প্রত্যাশা করেন।
ঐক্যই পথ: ‘শ্রমিক-মালিক এক হয়ে’ স্লোগানে নতুন আশা
“শ্রমিক-মালিক এক হয়ে গড়ব এ দেশ নতুন করে”-এই স্লোগানের বাস্তব রূপায়ণ ছাড়া নতুন বাংলাদেশের ভিত্তি গড়া যাবে না, এ বিশ্বাস ব্যক্ত করেন তিনি। তিনি বলেন, “যে সমাজে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, আস্থা ও সহযোগিতা নেই, সেখানে টেকসই উন্নয়ন কল্পনাও করা যায় না।”
প্রতীকী সহায়তা, বাস্তব প্রয়োজনের আহ্বান
অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা ৫ জন শ্রমিক পরিবারের হাতে শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের আর্থিক অনুদানের চেক হস্তান্তর করেন। যদিও এই সহায়তা প্রতীকী, তবে তা বৃহত্তর কল্যাণনীতির প্রতিশ্রুতি হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।
অন্যান্য বক্তাদের বক্তব্য
অনুষ্ঠানে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন, সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান এবং শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ বক্তব্য রাখেন।
বিশ্ব শ্রম সংস্থার মহাপরিচালক গিলবার্ট এফ হাংবোর একটি ভিডিও বার্তা অনুষ্ঠানস্থলে প্রচার করা হয়, যেখানে বাংলাদেশে শ্রম-স্বার্থে গৃহীত উদ্যোগের প্রশংসা করা হয়।